Home » জুলাই মাসে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তির কার্যক্রম!

জুলাই মাসে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তির কার্যক্রম!

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ দুই সপ্তাহ পার হলেও উচ্চমাধ্যমিকের ভর্তির কার্যক্রম শুরু হয়নি এখনও। করোনা পরিস্থিতির কারণে কবে থেকে ভর্তির কার্যক্রম শুরু হবে তাও প্রায় অনিশ্চিত। তবে উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের সেশনজটে না ফেলতে ক্লাসের সময়সূচি বৃদ্ধি এবং বাড়তি ক্লাস করে তা পুষিয়ে নেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

গত ৩১ মে সারাদেশে প্রকাশিত হয় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ফল। গড় পাসের হার ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পান এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ শিক্ষার্থী। যা গতবারের তুলনায় ৩০ হাজারেরও বেশি। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক জিপিএ-৫ পাওয়ার পরও ভালো কলেজে ভর্তি নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে দেখা যাচ্ছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা।

এদিকে গত ৭ জুন থেকে একাদশ শ্রেণির ভর্তি কার্যক্রম শুরু করতে ১৭ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় আন্তঃশিক্ষা সমন্বয়ক বোর্ড। এক মাস ২০ দিন তথা ৫০ দিন ধরে তিন ধাপে অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করা হবে বলে তাতে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন দেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে আগামী জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে অনলাইনে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তির কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন দেয়া হতে পারে। সেপ্টেম্বর থেকে ক্লাস শুরুর আশা তাদের। ক্লাস শুরু হতে বিলম্ব হলেও একাদশ শ্রেণির ক্লাসের সময় এবং বন্ধের দিনগুলোতে বাড়তি ক্লাস করে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা সমন্বয়ক বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক হারুন-অর রশিদ বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন দেয়া হয়নি। চলতি মাসের ৭ তারিখ (জুন) থেকে ভর্তি আবেদন শুরু করতে প্রস্তাব পাঠানো হলেও বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা যায়নি।

কলেজ পরিদর্শক বলেন, উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি ও ক্লাস শুরু বিলম্বিত হলেও নানা মাধ্যমে এ ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া হবে। আগে ক্লাসের সময় ছিল ৪৫ মিনিট, সেটা বাড়িয়ে এক ঘণ্টা করা হবে। সপ্তাহিক বন্ধ ও ছুটির দিনে বাড়তি ক্লাস নিয়ে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির সিলেবাস শেষ করা হবে। এর ফলে সেশনজট হবে না বলে জানান তিনি।

উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি সংক্রান্ত কমিটির তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে সরকারি-বেসরকারিপর্যায়ে সাড়ে আট হাজার কলেজে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে প্রায় ২০ লাখ। এর মধ্যে মানসম্মত কলেজের সংখ্যা মাত্র পৌনে ২০০। এসব কলেজের আসন সংখ্যা ৫০ হাজারের কিছু বেশি।

অথচ এবার সাধারণ নয়টি বোর্ডের পাসের হার ৮৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং এক লাখ ২৩ হাজার ৪৯৭ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছেন সাত হাজার ৫১৬ জন এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছেন চার হাজার ৮৮৫ জন। মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ডের বড় একটি অংশ উচ্চমাধ্যমিক সাধারণ বোর্ডের অধীনে থাকা কলেজে ভর্তি হন। অর্থাৎ জিপিএ-৫ পেয়েও ৮০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী প্রথম সারির কলেজগুলোতে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন।

গত কয়েক বছরে অনলাইনে যেসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদন বেশি পড়েছে, সেই হিসাবে মানসম্মত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৭৫টি, রংপুর বিভাগে রয়েছে ৩২টি, বরিশাল বিভাগে ১৪টি, রাজশাহী বিভাগে সাতটি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৯টি, খুলনা বিভাগে ১৩টি এবং সিলেট বিভাগে রয়েছে ২৩টি প্রতিষ্ঠান। এসব কলেজে স্ব-স্ব বিভাগের জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা ভর্তি হলে আসন সংখ্যা আরও কমে আসবে।

রাজধানী ঢাকাতে উচ্চমাধ্যমিকের আসন রয়েছে প্রায় ৫০ হাজারের মতো। এর মধ্যে ভালোমানের ২০-২২টি কলেজে আসন রয়েছে ২৫ হাজারের বেশি। বিপরীতে ঢাকা বোর্ড থেকে এবার পাস করেছেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৪৭ জন। জিপিএ-৪ ও তদুর্ধ্ব স্কোর পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক লাখ ৩৩ হাজার ৩৫৫ জন।

এই হিসাবে ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীদের রাজধানীর প্রতিষ্ঠানসমূহে ভর্তির কতটা সুযোগ থাকবে, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। ফলে ভালো ফলের পরও অনেকে রাজধানীতে পড়তে আসার সুযোগ পাবেন না। একই ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে মাদরাসা বোর্ড থেকে পাস করার শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *