Home » বিদায় বেলায় স্বপ্নের ‘বাংলাদেশ কুটির’ উদ্বোধন করে গেলেন র‍্যাবের শামীম আনোয়ার

বিদায় বেলায় স্বপ্নের ‘বাংলাদেশ কুটির’ উদ্বোধন করে গেলেন র‍্যাবের শামীম আনোয়ার

শ্রীমঙ্গল র‍্যাব ক্যাম্পের সাবেক কমান্ডার এএসপি মো. আনোয়ার হোসেন শামীমকে র‍্যাব-৯,সিলেট থেকে র‍্যাব সদরদপ্তর, ঢাকায় বদলি করা হয়েছে। র‍্যাবের হেলিকপ্টার যোগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি ঢাকার উদ্দেশ্যে সিলেট ত্যাগ করেন। কিন্তু বিদায়ের আগে তিনি উদ্বোধন করে গেছেন ঘরহারা আব্দুল কাদির ও তার পরিবারের মাথা গোঁজা ঠাঁই, দেশব্যাপী আলোচিত উদ্যোগ ‘বাংলাদেশ কুটির’।  র‍্যাব সূত্রে জানা যায়, এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীম র‍্যাব-৯ এ যোগদান করেন ২০১৮ সনের ১৫ মার্চ তারিখে। সেই থেকে অদ্যাবধি তিনি র‍্যাব-৯ এর অনেকগুলি আভিযানিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন।

শ্রীমঙ্গল র‍্যাব ক্যাম্পের কমান্ডার হিসেবে তার শেষ কাজ হলো কালবৈশাখীর তাণ্ডবে ঘরহারা দরিদ্র দিনমজুর আব্দুল কাদিরের জন্য ‘বাংলাদেশ কুটির’ নামে মাথাগোঁজার ঠাঁই করে দেওয়া। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় পরিবারটির হৃদয়বিদারক দুর্দশার চিত্র দেখে তিনি এই উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

এলাকাবাসী জানান, গত ২৫শে এপ্রিল তারিখ রাতে কালবৈশাখীর তাণ্ডবে হুড়মুড় করে বিধ্বস্ত হয় মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলাধীন পুরানগাওঁ গ্রামের বাসিন্দা দরিদ্র দিনমজুর আব্দুল কাদিরের বসত ঘর। ঘরের ধ্বংসাবশেষর নিচে সপরিবারে আটকা পড়েন কাদের। পরবর্তীতে প্রতিবেশীদের সহায়তায় সেখান থেকে সাময়িক মুক্তি মিললেও থাকার জায়গা না পেয়ে অনন্যোপায় আব্দুল কাদির ফের ফিরে যান সেই ধ্বংসস্তূপেই। স্ত্রী সন্তান নিয়ে সেখানেই অবমানবের জীবন যাপন করতে থাকেন।

রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ধ্বংসস্তুপের মধ্যে পরিবারপরিজন নিয়ে বসবাসের এই চিত্র দেখে শ্রীমঙ্গল র‍্যাব ক্যাম্পের তৎকালীন কমান্ডার এএসপি মো. আনোয়ার হোসেন শামীম ওই পরিবারের জন্য গৃহ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। নিজের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে অর্থ সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিবেশীদের উদ্দেশেও আহ্বান জানান অসহায় আব্দুল কাদেরের পাশে দাঁড়াতে। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে গ্রামবাসীও কাদেরের সাহায্যে এগিয়ে আসেন। সবমিলিয়ে খুব কম সময়ের ব্যবধানে ধ্বংসস্তুপের উপরই গড়ে ওঠে আব্দুল কাদেরের বসতভিটা। এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীম যেই ঘরের নামকরণ করেন বাংলাদেশ কুটির।

এ প্রসঙ্গে এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীমের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে এই বাংলাদেশ কুটির নির্মানের পেছনে আমার ভূমিকা সামান্যই। ওই পরিবারের দুর্দশা দেখে আমি শুধু উদ্যোগটা গ্রহন করেছি এবং গ্রামবাসীকে কাদিরের সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছি। যদি গ্রামবাসী এগিয়ে না আসতেন, তাহলে আমার দেওয়া সামান্য টাকায় হয়ত এমন একটি সুদৃশ্য ঘর নির্মাণ কোনভাবেই সম্ভবপর হতো না। যেহেতু বিপদে একে অপরের সহায়তায় এগিয়ে আসাটাই এই ঘর নির্মাণের অন্তরালের গল্প, যা আবহমান বাংলাদেশেরই চিরায়ত রূপ। আর এজন্যই আমি এই ঘরের নামকরণ করেছি ‘বাংলাদেশ কুটির’। ভাল লাগছে যে, র‍্যাব-৯ থেকে বিদায়ের মুহূর্তে আমি আমার স্বপ্নের বাংলাদেশ কুটির উদ্বোধন করে যেতে পারছি। এছাড়াও ভবিষ্যতে গৃহহীন মানুষের জন্য একই মডেলে আরো বাংলাদেশ কুটির নির্মানের আশাবাদ ব্যক্ত করেন বর্তমানে র‍্যাব সদরদপ্তরের এই কর্মকর্তা।

উল্লেখ্য, এএসপি মো. আনোয়ার হোসেন শামীম খাগড়াছড়ি জেলার উত্তর বড়বিল গ্রামের আব্দুল মান্নান এবং বিলকিস বেগম দম্পতির তৃতীয় সন্তান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি গহণ করার পর ৩৪ তম বিসিএস পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ১১তম স্থান অর্জন করে বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন। র‍্যাবে যোগদানের পূর্বে তিনি চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের এএসপি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *