করোনা আবহে টলিপাড়ায় শুটিং চালু নিয়ে যা নাটক হল, তাতে অভিনেতা-অভিনেত্রীরাই বিরক্ত। লিখলেন ভাস্বতী ঘোষ দীর্ঘ নাটক শেষে টলিউডে ধারাবাহিকের শুটিংয়ে সবুজ সঙ্কেত মিললেও আর্টিস্টস ফোরাম ও শিল্পীদের মতান্তর চলে এল প্রকাশ্যে।
জীবনবিমার চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল ফোরাম। তাতে যে টলিউডের শিল্পীরাই বিরক্ত, রাত থেকে স্পষ্ট হতে থাকে। সব প্রজন্মের অভিনেত্রীরা তাতে সামিল হন।
সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের সাফ কথা, ‘জীবনবিমা, শুটিংয়ের নিয়ম, সব কিছু নিয়ে আলোচনা হতে পারত। কিন্তু তার জন্য শুটিং বন্ধ করে দেওয়ার কোনও প্রয়োজন ছিল না। কারণ মৌখিকভাবে সব কিছু চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। এই করোনার সময়ে মানুষ যদি মানুষের ওপর বিশ্বাস রাখতে না পারেন, তা হলে কী করে হবে?’
ইন্দ্রাণী হালদারের মন্তব্য, ‘আর্টিস্টস ফোরামের বিরোধিতা করছি না। কিন্তু এখন তো জীবনবিমার কাগজ ছাড়াই শুটিং শুরু করতে হবে। তা হলে? যা আলোচনা করার ছিল, একেবারে করে নিয়ে শুটিংয়ের দিন ঘোষণা করলে, একটা গোটা দিন ধরে এত শিল্পীর হয়রানি হতো না’।
সোশ্যাল মিডিয়াতে নতুন প্রজন্মের অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ প্রশ্ন তোলেন, অন্য পেশার মানুষ কি মানুষ নন? তাঁরা সবাই বিমা ছাড়া কাজ করছেন কী ভাবে? তাঁর বক্তব্য ছিল, শিল্পীরা সমাজের অন্যদের মতো সুরক্ষার দায়িত্ব নিজেরা নিলেই মঙ্গল। সায়নীর পোস্টের কথা শুনে প্রবীণা অভিনেত্রী লিলি চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘একদম ঠিক কথা। পার ডে নিয়ে তিন-চারটে কাজ করবে। এটা ঠিক নয় (জীবনবিমার দাবি)’।
অভিনেতা ভরত কলের গলায় তীব্র বিরক্তি, ‘মন্ত্রীর মধ্যস্থতায় মিটিং হয়ে গিয়েছিল। তারপর জীবনবিমার কাগজ হাতে না পেলে, শুটিং বন্ধ করতে হবে? কীভাবে ইন্ডাস্ট্রির নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষরা বাঁচবেন? আমার ক্যান্সার হয়েছিল। আমি তো রাজ্য সরকারের নিয়ম মেনে শুটিং করার জন্য তৈরি ছিলাম। ইন্ডাস্ট্রি শুধু আর্টিস্ট দিয়ে চলে না’।
অভিনেতা টোটা রায়চৌধুরী অবশ্য ফোরামের ওপর পুরো দায় চাপালেন না। তাঁর বক্তব্য, ‘বলিউডে অনেক অভিনেতা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তাঁরা শুটিং করবেন না এখন। সেখানে আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ১০ তারিখ থেকে শুটিং করতে প্রস্তুত। লক্ষণীয় শুধু শিল্পীরা মাস্ক পরে কাজ করতে পারবেন না। তাই আমাদের সুরক্ষার নিয়ে কথা উঠেছে। চ্যানেল কর্তৃপক্ষ বা প্রযোজকরা যদি মনে করেন, তাঁরা দাতা, আর আমরা পেয়ে ধন্য হচ্ছি, সেটা ভুল। অভিনেতাদের ছাড়াও ইন্ডাস্ট্রি চলবে না’।
এই বিতর্ক নিয়ে কী বলছেন ফোরাম কর্তারা? ফোরামের ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট শঙ্কর চক্রবর্তীর যুক্তি, ‘আমাদের বড় পরিবার। মান অভিমান, মতবিরোধ হয়। সেটাও মিটেও যায়। আমরা আপত্তি জানিয়েছিলাম একটা ব্যাপারে। বিমাচুক্তিতে সইয়ের আগে কোনও শিল্পীর করোনা হলে কী হবে? এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ফোরামের কোভিড ফান্ড থেকে অসুস্থদের পাশে দাঁড়ানো হবে।’
এ সব শুনে জি বাংলা চ্যানেলের প্রধান সম্রাট ঘোষের গলায় বিরক্তি, ‘রাজ্য সরকারের তরফে এমন কোনও নিয়ম নেই, শিল্পীদের নিয়ে শুটিং করলে, তাঁদের জীবনবিমার ব্যবস্থা করতে হবে। তবু মানবিকতার খাতিরে প্রযোজক আর আমরা, সম্মতি জানিয়েছিলাম। ইনশিওরেন্সের কাগজ তৈরি হতে কিছুটা সময় লাগবে সেটাই স্বাভাবিক। তার মধ্যে আর্টিস্টস ফোরামের মাথারা যেভাবে শুটিং বন্ধ করে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্ররোচনা দিলেন, তাতে আশি শতাংশ শিল্পী বিরক্ত। আমাদেরকে তাঁরা জানিয়েছেন, ১০ জুন থেকেই শুটিং করতে প্রস্তুত ছিলেন। এই জট তৈরির পিছনে আর্টিস্টস ফোরামের কোনও পলিটিকাল অ্যাজেন্ডা রয়েছে, সেটাই এ বার খুঁজে বের করা দরকার’। সমস্যা এক দিকে মিটল। অন্য দিকে রেশ থেকেই গেল।
সূত্র: এইসময়
প্রতিনিধি