Home » নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলের সফর ইতিবাচক মাসুদ বিন মোমেন

নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলের সফর ইতিবাচক মাসুদ বিন মোমেন

শুদ্ধবার্তাটোয়েন্টিফোর:

নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশ-মিয়ানমার সফরকে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে মনে করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, ‘একটি বিষয় নিয়ে মানুষ অনেক কিছু পড়তে পারে, জানতে পারে, আলোচনা করতে পারে। কিন্তু যখন সে বিষয়টি নিজে দেখে, তখন তার অনুধাবন সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়।’ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশ-মিয়ানমার সফর প্রসঙ্গে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘এই সফরে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা নিজ চোখে যা দেখে গেলেন, তা তারা নিউইয়র্কে ফিরে আলোচনা করবেন। একইসঙ্গে পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণ করবেন, যার মধ্যে হয়তো একটি বাধ্যতামূলক রেজ্যুলেশনও থাকতে পারে।’ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বাংলাদেশ-মিয়ানমারের জিরো পয়েন্টে আটকে পড়া রোহিঙ্গাদের দেখেছেন উল্লেখ করে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘তারা কুতুপালং ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা শুনে তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। সরকারের সঙ্গে কথা বলে এখানকার মাঠপর্যায়ের অবস্থা নিজে অনুধাবন করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘এর একটি ইতিবাচক প্রভাব থাকবে, যা নিরাপত্তা পরিষদের রেজ্যুলেশন বা তাদের পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণে সহায়ক হবে।’ প্রসঙ্গত,  রবিবার (২৯ এপ্রিল) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিরা জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে হারিয়ে যেতে দেবে না জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। আর এখনই সংস্থাটি কোনও সিদ্ধান্ত নিতেও প্রস্তুত নয়। সংস্থাটি মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অবরোধও আরোপ করবে না। তবে মিয়ানমারকে আহ্বান জানাবে এই সমস্যা সমাধানের জন্য। নিরাপত্তা পরিষদ এখনই কোনও শক্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে না, এমন বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘নিরাপত্তা পরিষদ তাদের আগের অবস্থান থেকে অনেক সরে এসেছে।’ উদাহারণ হিসেবে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের এই স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, ‘আগে রোহিঙ্গা বা মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কোনও আলোচনাই করা যেতো না নিরাপত্তা পরিষদে। কিন্তু প্রথমে এটি ’এনি আদার বিজনেস’ হিসেবে এবং এখন নিয়মিত এজেন্ডায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়।’ মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদ প্রেসিডেন্টের স্টেটমেন্ট ইস্যু করা হয়েছে, যা এর আগে হয়নি বলে তিনি জানান। মাসুদ বিন মোমেন আরও বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, দ্বিপক্ষীয়ভাবে মিয়ানমারের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি। কিন্তু আন্তর্জাতিক চাপও অব্যাহত রাখতে চাই। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সবসময়ে এ বিষয়ে জানাচ্ছি। ভবিষ্যতেও জানাবো।’ তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের আগেও বলেছি, এবারের সফরের সময়েও জানিয়েছি, বাংলাদেশে এক মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গা বিভিন্ন সময়ে রাখাইন থেকে পালিয়ে এসেছে।  প্রসঙ্গত, নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দল গত ২৮ এপ্রিল কুয়েত থেকে সরাসরি কক্সবাজারে আসে। পরের দিন প্রতিনিধি দলটি জিরো পয়েন্ট ও কুতুপালং ক্যাম্প পরিদর্শন করে। সোমবার (৩০ এপ্রিল) সকালে তারা প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে মিয়ানমারের উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছে। সেখানে নীতিনির্ধারক মহলে আলোচনার পর উত্তর রাখাইনে দু’টি ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম পরিদর্শন করবেন। নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমার নিয়ে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে।এ সময় একটি বাধ্যতামূলক রেজ্যুলেশন আনার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু ভেটো শক্তির অধিকারী চীন ও রাশিয়ার নেতিবাচক অবস্থানের কারণে ওই রেজ্যুলেশন গৃহীত হয়নি। পরবর্তী সময়ে ওই রেজ্যুলেশনকে সামান্য পরিবর্তন করে গত নভেম্বরে আলোচনার পরে নিরাপত্তা পরিষদ প্রেসিডেন্ট স্টেটমেন্ট ইস্যু করা হয়।  প্রেসিডেন্ট স্টেটমেন্ট কারও কারও জন্য বাধ্যতামূলক নয়। মে মাসে নিরাপত্তা পরিষদের চেয়ারম্যান হবে পোল্যান্ড ও তার স্থায়ী প্রতিনিধি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন রোহিঙ্গা বিষয়ে তার সময়ে আলোচনা অব্যাহত থাকবে। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এর আগে থেকে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাস করছিল বাংলাদেশে।

 

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *