করোনাভাইরাসের চেয়ে লকডাউন বেশি ক্ষতিকর দাবি করে বরাবরই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে ব্রাজিলিয়ান প্রেসিডেন্ট জেইর বোলসোনারো। যারাই এমন অবস্থানের সমালোচনা করছেন, তাদের কাউকেই ছেড়ে কথা বলছেন না তিনি। এমনকি তাড়াহুড়ো করে লকডাউন তোলার সমালোচনা করায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকেই বেরিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট।
জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থাটির মতে, বিশ্বে করোনাভাইরাস মহামারির নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে লাতিন আমেরিকা। এর মধ্যে অবশ্যই সবচেয়ে বেশি ভুগছে ব্রাজিল। দেশটিতে ইতোমধ্যেই ছয় লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন, মৃতের সংখ্যাতেও ইতালিকে ছাড়িয়ে গেছে তারা। বিশ্বের মধ্যে বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যায় দ্বিতীয় আর মৃত্যুর হিসাবে তৃতীয় অবস্থানে ব্রাজিল।
সম্প্রতি ‘ফলহা ডি সাও পাওলো’ নামে স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, ‘‘প্রেসিডেন্ট বোলসোনারো করোনাভাইরাসকে ‘একটা সামান্য ফ্লু’ বলে মন্তব্য করার ১০০ দিনের মাথায় এটি এখন ‘প্রতি মিনিটে একজন’ ব্রাজিলিয়ানকে হত্যা করছে। আপনি যখন এই লেখাটি পড়ছেন, তখনই আরও একজন করোনায় মারা গেল।
গত বৃহস্পতিবার ব্রাজিলে আক্রান্তের সংখ্যা ছয় লাখের কোটা পেরিয়েছে। সেদিন প্রাণ হারিয়ে ছিলেন ১ হাজার ৪৩৭ জন, যা ছিল টানা তৃতীয়দিনের মতো সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। শুক্রবার আরও ১ হাজার ৫ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ফলে সেখানে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫ হাজারের বেশি। বিশ্বের মধ্যে কেবল যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে করোনায় মৃতের সংখ্যা এর চেয়ে বেশি।
শুধু ব্রাজিলেই নয়, মেক্সিকো, পেরু, কলম্বিয়া, চিলি, বলিভিয়াতেও ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ। ইতোমধ্যেই লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়েছে।সেখানে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি সম্পর্কে জানতে চাইলে সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মুখপাত্র মার্গারেট হ্যারিস লকডাউন তোলার ক্ষেত্রে ছয়টি জরুরি মানদণ্ডের কথা উল্লেখ করেন। এর মধ্যে একটি ছিল- সংক্রমণের হার কমে আসা। সংক্রমণ কমার আগে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া বিপজ্জনক বলে জানিয়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি লাতিন আমেরিকায় সংক্রমণ বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এ কর্মকর্তা।
শুক্রবার ডব্লিউএইচও’র এ সতর্কতার বিষয়ে জানতে চাইলে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ব্রাজিলিয়ান প্রেসিডেন্ট। এসময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘পক্ষপাতদুষ্ট রাজনৈতিক সংস্থা’র মতো আচরণ বন্ধ না করলে তা থেকে বেরিয়ে যাওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন বোলসোনারো।
বোলসোনোর আদর্শিক মিত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিছুদিন আগেই ডব্লিউএইচও’র সঙ্গেদিয়েছেন। তবে লকডাউন শিথিল নয়, তার অভিযোগ ছিল, সংস্থাটি চীনের হাতের পুতুল হয়ে উঠেছে। তিনি করোনার উৎস নিয়ে চীনের মিথ্যাচারে সহায়তারও অভিযোগ করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিরুদ্ধে।
সূত্র: জাগোনিউজ
প্রতিনিধি