শুদ্ধবার্তাটোয়েন্টিফোর:
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দফতর ও পরিদফতরের উদাসীনতায় ৩৬তম বিসিএসের নন-ক্যাডার ১ হাজার ৪৩১ প্রার্থী বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সুপারিশ বঞ্চিত হয়েছেন। তাদের অনেকেরই আর চাকরির বয়স নেই। অন্যদিকে, ৩৭তম বিসিএস থেকে নন-ক্যাডারদের সুপারিশের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কী আছে ওই ১৪৩১ জনের ভাগ্যে? সুপারিশ বঞ্চিত মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও অনেক মন্ত্রণালয়, দফতর ও পরিদফতর শূন্যপদের তালিকা পাঠায়নি পিএসসিতে। তালিকা পাঠালেও অনেক মন্ত্রণালয় আপডেট তথ্য দেয়নি। ভূমি মন্ত্রণালয়, জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (নিপোর্ট) এবং বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) জন্য যোগ্য প্রার্থী ছিল। কিন্তু আমাদের সুপারিশ না করে ৩৭তম বিসিএস থেকে জনবল নিয়োগের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমাদের নিয়োগ না দেওয়া হলে আর হয়তো সরকারি চাকরিই পাবো না। এছাড়া, অনেকের বয়সও নেই সরকারি চাকরির।’ সরকারি চাকরির আর বয়স নেই ৩৬তম বিসিএস নন-ক্যাডার তাপসী রাবেয়ার। তিনি বলেন, ‘আপডেট শূন্য তালিকা পিএসসিতে না পৌঁছায় আমরা সুযোগ বঞ্চিত হয়েছি। প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগও ছিল। শূন্যপদের আপডেট তালিকা না থাকায় জেলা কোটা সংরক্ষণের কারণে আমাদের সুপারিশ করা হয়নি। তাহলে এত কষ্ট করে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কী লাভ হলো? এখন বেকার জীবন কাটাতে হবে। আমরা মানবিক আবেদন জানাচ্ছি সরকারের কাছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ কামরা করছি।’ এ বিষয়ে পিএসসির সচিব আক্তারী মমতাজ বলেন, ‘নন-ক্যাডারে ইচ্ছা করলেই সুপারিশ করা যায় না। কারণ হচ্ছে, এভেইলেবল পোস্ট আর পোস্টগুলোর রিক্রুটমেন্ট রুল হচ্ছে ভিন্ন। একেকটি মন্ত্রণালয়ের একেক রকম নিয়ম। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে রিকুইজিশনের ভিত্তিতে অগ্রাধিকার বিবেচনা করি। যারা আগে রিকুইজিশন পাঠায় তাদেরটা আমরা আগে করি। এর মধ্যে সিরিয়ালি লিস্টও চলে এবং পোস্ট হয়তো আছে এভেইলেবল কিন্তু যোগ্য প্রার্থী যারা তাদের সঙ্গে ওই মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ বিধি মেলে না। তখন আসলে কিছু করার থাকে না। সরকারের প্রচুর পদ খালি থাকতে পারে। কিন্তু রিকুইজিশন না পাঠালে তো পিএসসি সব জায়গায় বিবেচনা করতে পারে না।’ ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুল জলিল বলেন, ‘ভূমি মন্ত্রণালয়ের শূন্যপদে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ রয়েছে। সে কারণে আমরা সুপারিশের জন্য তালিকা পাঠাতে পারিনি।’ জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক কে বলেন, ‘আমাদের কনসার্ন ডিপার্টমেন্টে খোঁজ নিয়ে জানতে পারবেন। আমাদের এন্ট্রি লেভেলে কোথাও ল্যাকিংস আছে কিনা তা জানা যাবে।’ নিপোর্টের পরিচালক রওনক জাহান বলেন, ‘শূন্যপদ যে কয়টা ছিল তা তখন আমরা দিয়েছি। যদি পিএসসি তালিকা চায় আমরা আবার তালিকা আবার পাঠাবো।’ ব্যানবেইস এর পরিচালক মো. ফসিউল্লাহ্ বলেন, ‘মাত্র পাঁচ/সাতটি শূন্যপদ ছিল, আমরা দিয়েছি মাউশি ও মন্ত্রণালয়কে। পিএসসি আমাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেনি। পিএসসি মনে করলে আবার সুপারিশ চাইতে পারে।’
নারী প্রার্থী নিয়োগে কোটা থাকলেও নারী প্রার্থীদেরও নিয়োগ দেওয়া হয়নি বলে উল্লেখ করেন বঞ্চিতরা। ৩৬তম বিসিএসে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল দুই লাখ ১১ হাজার ৩২৬ জন। প্রিলিমিনারি, লিখিত এবং মৌখিক এই তিনটি ধাপ শেষ করে পিএসসির চূড়ান্ত ফলে ৫ হাজার ৬৩৩ জন পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হন। এরমধ্যে ২ হাজার ২২৩ জনকে বিভিন্ন ক্যাডার এবং পদস্বল্পতার জন্য ৩ হাজার ৩০৮ জনকে নন-ক্যাডার তালিকায় রাখা হয়। এরমধ্যে ২ হাজার ৭০০ জন প্রার্থী নন-ক্যাডারে চাকরির জন্য পিএসসিতে আবেদন করেন। পিএসসি এই ২ হাজার ৭০০ জন প্রার্থীকে সুপারিশ করার জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদফতর এবং পরিদফতরে শূন্যপদের চাহিদা চায়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শূন্যপদের চাহিদা পিএসসিতে পৌঁছে। কিন্তু বঞ্চিতদের অভিযোগ, অনেক মন্ত্রণালয় তথ্য আপডেট না করে তালিকা পাঠায়। অনেক মন্ত্রণালয় শূন্যপদ থাকা সত্ত্বেও চাহিদা পিএসসিতে পাঠায়নি। বঞ্চিতদের দাবি, কোটায় প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা তালিকা থেকে শূন্যপদ পূরণে গত ৫ এপ্রিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এক আদেশ জারি করে। প্রাথমিকে বিভিন্ন কোটায় ৪ হাজার ১৭টি পদ সংরক্ষণ করা হয়েছে। ওই আদেশ অনুযায়ী কোটার প্রার্থী না পাওয়া গেলে নন-ক্যাডারদের নিয়োগ হোক।
বঞ্চিতদের অভিযোগ গত ১৫ মার্চ প্রথম শ্রেণিতে মাত্র ২৮৪টি পদে এবং ৬ দিন পর ২২ মার্চ দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৯৮৫টি পদে ২৭০০ জন যোগ্য প্রার্থীর মধ্যে ১ হাজার ২৬৯ জনকে সুপারিশ করেই প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও ১ হাজার ৪৩১ জন প্রার্থী সুপারিশ বঞ্চিত হয়েছেন। এদের মধ্যে প্রায় ১ হাজার প্রার্থী বেকার এবং বেশিরভাগ প্রার্থীর চাকরির বয়স শেষ।