Home » প্রাথমিকে পাশ করেও আমরা কেন নিয়োগ থেকে বঞ্চিত

প্রাথমিকে পাশ করেও আমরা কেন নিয়োগ থেকে বঞ্চিত

শিক্ষা একটি মৌলিক চাহিদা। মৌলিক চাহিদা পূরণ করা রাষ্ট্রের একটি অপরিহার্য দায়িত্ব। প্রাথমিক শিক্ষাই হচ্ছে শিক্ষার মূল ভিত্তি কিন্তু আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে তাকালে লক্ষ্য করা যায় যে পূর্বে থেকেই প্রাথমিকে শিক্ষক সংকট বিরাজমান রয়েছে। শিক্ষা যে একটি মৌলিক চাহিদা, বর্তমানে এই ভয়াবহ শিক্ষক সংকট দূরীকরণ ছাড়া কোনো ভাবেই এই মৌলিক চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ করা সম্ভব নয়।

#শিক্ষক_সংকটের_মূল_কারণঃ
আমাদের দেশের শিক্ষক নিয়োগ ব্যবস্থা বিশ্বের অন্যদেশগুলো থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। উন্নতদেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় প্রায় সব নিয়োগ ব্যবস্থাতেই প্যানেল পদ্ধতি বিদ্যমান, বিশেষ করে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে। আমাদের দেশেও বর্তমানে যেমনটি লক্ষ্য করা যায় এন টি আর সি এ, ব্যাংক, বীমা, ও ভিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে স্বাধীনতার পরবর্তী সময়েও ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে প্যানেল পদ্ধতি প্রচলিত ছিলো। প্যানেল পদ্ধতি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই শুরু হয় প্রাথমিকে ভয়াবহ শিক্ষক সংকট। শিক্ষক সংকটের কিছু কারণ নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ
১। পূর্বে নানা জটিলতায় কখনোই সময় মত শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়নি।
২। নিয়োগ পদ্ধতিতে ধীর গতি বিদ্যমান।
৩।বিভিন্ন সময়ে মামলা জটিলতায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আটকে যাওয়া।
৪। সময়োপযোগী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব হওয়া।
৫। উন্নত দেশে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে শিক্ষক নিয়োগ করা হয় পক্ষান্তরে আমাদের দেশে শিক্ষক নিয়োগের পর দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণের জন্য ছুটিতে পাঠানো হয়। ফলে কৃত্রিম শিক্ষক সংকট তৈরি হয়।

২০১৮ সালের প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিস্তারিত।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০১৮ সালে প্রাথমিকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হওয়ার পর প্রায় ২৪ লক্ষ পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় মাত্র ২.৩% যা ৫৫হাজার প্রায়। এর মধ্যে ১৮হাজারকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হলেও প্রায় ৩৭হাজার নিয়োগ বঞ্চিত থেকে যায়। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্বাস্থ্য খাতে নিয়োগের ক্ষেত্রে যে প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে ঠিক তেমন ভাবেই প্রাথমিকের শিক্ষক সংকট হতে উত্তরণের জন্য এবং শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য খাতের মতই নিয়োগ বঞ্চিতদের প্রাথমিকে নিয়োগ দিয়ে শিক্ষক সংকট দূর করলে শিক্ষক সংকটের পাশাপাশি বেকারত্ব থেকে মুক্তি পাবে হাজারো বেকার। ২৯মে এডুকেশন বাংলার ফেসবুক লাইভে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাননীয় মহাপরিচালক মহোদয় বলেছেন বর্তমানে প্রচলিত নিয়মানুযায়ী প্রাথমিকে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণে পাশ/ফেল নেই। কারণ উক্ত পরীক্ষায় যে কেউ উপস্থিত হলেই ২০নম্বরের মধ্যে ১৪/১৫ পেয়ে থাকে যা শতকরা ৭০/৭৫। তাই মৌখিকে অংশ গ্রহণকারীদের অনুত্তীর্ণ বলা সমীচীন নয়। ২০১৮ সালে শুন্যপদ পূরণের ভিত্তিতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলেও, যথেষ্ট শুন্যপদ থাকা সত্ত্বেও লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও আমরা নিয়োগ লাভের সুপারিশ হতে বঞ্চিত হই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের বিনীত অনুরোধ মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিয়োগ দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকট দূর করে মেধাবীদের বেকারত্ব থেকে মুক্তি দিন।

#শিক্ষক_সংকট_হতে_উত্তরণের_উপায়
১। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে নিয়োগবিধি প্রণয়ন করা।
২। প্যানেল পদ্ধতি প্রবর্তনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ দেয়া।
৩। করোনা পরবর্তী সময়ে শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবং রিকভারি প্লান বাস্তবায়নের জন্য নিয়োগ বঞ্চিতদের নিয়োগ দান।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা প্যানেল প্রত্যাশীরা অসহায় জীবন যাপন করছি এবং পরিবার ও সমাজের বোঝা হয়ে আছি। মানবতার মা আমরা বেকার, আমাদের বয়স শেষ হওয়ার পরও বেকারত্বের অভিশাপ হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমাদের একটা মাত্র পথ খোলা আছে, সেটা হলো প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ ২০১৮তে বঞ্চিতদের প্যানেলের মাধ্যমে নিয়োগ দান। যেহেতু আমরা লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি এবং যথেষ্ট শূন্য পদও রয়েছে তাই মানবতার মায়ের কাছে প্রত্যাশা আমাদের নিরাশ করবেন না।

মোঃ আবু হাসান
সাধারণ সম্পাদক
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ ২০১৮ প্যানেল প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় কমিটি।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *