সারাদেশে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে যাচ্ছে। ভারী বর্ষণের কারণে ১০ জেলায় নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য মতে, বৃহস্পতিবার ছিল ১২টি, গতকাল শুক্রবার দেশের ১৪টি পয়েন্টে নদ-নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব পয়েন্টে পানির উচ্চতা ক্রমাগত বাড়ছে। ফলে আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামি কয়েক দিন ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে, তাতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়া, জামালপুরে ভাঙনের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে এবং লালমনিহাটে তিস্তা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় দেশের নদ-নদীগুলোর ৬২৮টি ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট নির্ধারণ করেছে, এর মধ্যে ২৬টি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
বন্যা পরিস্থিতির এই নাজুক অবস্থা সামাল দিতে সরকারের প্রস্তুতির খবরও এসেছে। সচিবালয়ে গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনেও আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির এক সভা শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান দেশের কয়েকটি অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় মাঠ পর্যায়ের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানান। এ সময় ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজার এবং নীলফামারী জেলায় বন্যা পরিস্থির অবনতি হয়েছে। উজানে ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশে যমুনা নদীতে পানি আরও বাড়বে। পাশাপাশি উজানে গঙ্গার পানি বাড়ায় বালাদেশে পদ্মা অববাহিকায় বন্যা দেখা দিতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া জানান, ইতোমধ্যেই নদীর ১৪টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ও সুনামগঞ্জ পয়েন্টে ৯০ সেন্টিমিটার, সিলেট পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার, হবিগঞ্চে খোয়াই নদীর পানি বল্লা পয়েন্টে ৬০ সেন্টিমিটার, সোমেশ্বরী নদীর পানি কমলাকান্দা পয়েন্টে ২৭ সেন্টিমিটার, কংস নদীর পানি জারিয়াজাজইল পয়েন্টে ৭০ সেন্টিমিটার, সাঙ্গু নদীর পানি দোহাজারি পয়েন্টে ৪৫ সেন্টিমিটার ও বান্দরবান পয়েন্টে ১৭৭ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা নদীর পানি অমলসিদ পয়েন্টে ৬০ সেন্টিমিটার, শেরপুর পয়েন্টে ৫৫ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে ৫৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার ও চিলমারি পয়েন্টে ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও, সুনামগঞ্জের চেলা নদীর পানি বিপদসীমার ৯০ সেন্টিমিটার, পিয়াইন নদীর পানি ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ডাইকি, বটেরখাল ও বোকা নদীর পানিও ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বার্তা বিভাগ প্রধান