স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটের বিশ্বনাথে সাদা পোশাকে আসামি ধরতে গিয়ে দুই র্যাব সদস্য লাঞ্চিত হয়েছেন। (২৪ মে) রবিবার দুপুরে উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের পেছিখুরমা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘটনার পর থেকে পেছিখুরমা ও ছোটখুরমা গ্রামটি পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে।
সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, রবিবার উপজেলার পেছিখুরমা গ্রামের বেলাল মিয়া তাঁর বাড়িতে শিন্নির করার জন্য একটি গরু জবাই করেন। এতে গ্রামের প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন লোক ওই বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন। দুপুর অনুমান ২টার দিকে সাদা পোশাকধারী দুইজন তরুন র্যাব সদস্য বেলাল মিয়ার বাড়িতে গিয়ে বেলাল মিয়াকে গ্রেফতারের জন্য ঝাপটে ধরেন। বহিরাগত সন্দেহে উপস্থিত লোকজন র্যাব সদস্যের সাথে ধস্তাধস্তি ও মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন এবং গ্রামে নারী পূরুষদের চিৎকারে মসজিদের মাইকে ডাকাত এসেছে বলে মাইকিং করা হয়। এই সন্দেহে গ্রামবাসী র্যাব সদস্যদের চিনতে না পেরে মারামারি শুরু করেন। আহত র্যাব সদস্যরা কৌশলে চলে যান। এ ঘটনার ঘন্টাখানেক পর সিলেট থেকে বিপুল সংখ্যক র্যাব সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে পেছিখুরমা গ্রাম ঘেরাও করে ফেলেন। র্যাব আসার খবর শুনে পেছিখুরমা ও ছোটখুরমা গ্রামের পুরুষ মহিলা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান। ঘটনার খবর পেয়ে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার বিশ্বনাথ প্রতিনিধি আব্দুস ছালাম ঘটনাস্থলে গেলে মোটরসাইকেল থেকে নামার পরপরই উত্তেজিত র্যাব সদস্যরা তাঁকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন এবং হাত থেকে মোবাইল নিয়ে যান। লাঠির আঘাতে তাঁর ব্যাগে থাকা একটি দামী ক্যামেরা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। এসময় বেলাল মিয়া ও তাঁর চাচাত ভাইয়ের বাড়িতে তিনটি মোটর সাইকেল ও দালান ঘরের কাছের জানালা ব্যাপকভাবে ভাংচুর করা হয়। তারপর র্যাববের আরেকজন উর্ধতন কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি অবহিত হন এবং সাংবাদিক আব্দুস ছালামের বক্তব্য শুনে তাকে ঘটস্থল ত্যাগ করতে বলেন। এসময় র্যাববের খোয়া যাওয়া তাদের একটি আগ্নেয়াস্ত্র খাল থেকে উদ্ধার করা হয়।
উল্লেখ্য যে প্রায় দুই মাস পূর্বে একটি সিএনজি চুরির বিচারে বেলাল মিয়া অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এতে প্রতিপক্ষ ক্ষীপ্ত হয়ে বেলাল মিয়াকে হত্যার জন্য আক্রমণ করে। এ ঘটনার জের ধরে গত বিশ মে বেলাল মিয়া ও ছোটখুরমা গ্রামের রফিক মিয়ার লোকদের মধ্যে মারামারি হয়। এ ঘটনায় রফিক মিয়া বাদী হয়ে গত ২২ মে বেলাল মিয়াসহ ১৩ জনকে আসামি করে বিশ্বনাথ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নংÑ১৪, তাং ২২/০৫/২০২০ইং)। এ মামলার আসামি ছিলেন বেলাল মিয়া। করোনা পরিস্থিতি ও পবিত্র ঈদের আগের দিন এধরনের একটি ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এ ব্যাপারে সিলেট-২আসনের এমপি মোকাব্বির খান বলেন, ঘটনার খবর শুনেছিল। অত্যান্ত দু:খ জনক বিষয়। তবে আমি বিস্তারিত জেনে বক্তব্য প্রদান করব।
বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম নুনু মিয়া জানান, আমি বিষয়টি জেনে খুব দু:খ পেয়েছি। যেহেতু আমাদের সরকার আমাদের প্রশাসন, জনগনও আমাদের তাই সরেজমিন গিয়ে খুজ খবর নিয়ে বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা করব।
অলংকারি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম রুহেল জানান, খুরমা ও ফেছি খুরমা গ্রামে একটি শালিশ বিচার নিয়ে বিরুধ চলছিল। দুই পক্ষে মারামারিও হয়েছিল। ফলে কয়েকদিন ধরে এই এলাকায় বহিরাগত কিছু লোক মটর সাইকেলে আনা গুনা করছিল। গত সোমবার বহিরাগত লোক সন্ধেহে র্যাবের সাথে এ অনাকাংখিত ঘটনাটি ঘটে। এটি অত্যান্ত দু:খ জনক। এলাকার শান্তি সৃঙ্খলা রক্ষায় বিষয়টি নিস্পত্তি করা জরুরী।