Home » স্মৃতির দর্পণে: প্রাণের সংগঠন ছড়া পরিষদ, সিলেট

স্মৃতির দর্পণে: প্রাণের সংগঠন ছড়া পরিষদ, সিলেট

সুফিয়ান আহমদ চৌধুরীঃ সেই ১৯৮৪ সাল আমার জীবনের স্বর্ণালি সময়। মন ছুটে লেখালেখি,পত্রিকা ও সংগঠনের নেশায়।জাতীয় পত্র-পত্রিকা,দেশ-বিদেশের ম্যাগাজিনে নিয়মিত লেখালেখা, করছি। সাথে রয়েছে সংকলন “জীবন মিছিল”। সংগঠন চাঁদের হাট, সিলেট শাখা নিয়ে কাজ করছি নিয়মিত। তখন ছড়াও লিখছি প্রচুর।সিলেটের ছড়াকারদের সাথে জমিয়ে আড্ডা।যদিও আমার সাংগঠনিক জীবন শুরু ১৯৭৪ সালে শাপলা কুঁড়ির আসর ধোপাদীঘির পার শাখা গঠন করে।১৯৭৫ সালে সিলেট সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়ের ছাত্রবস্হায় প্রথম সাহিত্য সাময়িকী ” জীবন মিছিল” সম্পাদনা।

আড্ডা হয় ছড়াকার আব্দুল মালেক রানা’র বারুতখানার ছত্তারিয়া রেষ্টুরেন্টে। সেই আড্ডায় ছড়া পরিষদ গঠন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।শুরু হয় ছড়াকার নিয়ে আমার ধোপাদীঘির পূর্ব পাড়ের বাসায় ছড়া নিয়ে চর্চ্চা ও আলোচনা। এক খামে আমাদের ছড়া ঢাকায় পত্রিকায় শিশুদের পাতায় প্রেরণ।একসাথে ছড়া প্রকাশের সে কি আনন্দ আমাদের।আমাদের মধ্যে আলচনা বেগবান হয় ছড়া সংগঠন করা নিয়ে নিয়মিত। যোগাযোগ শুরু হয় ছড়াকারদের সাথেও।

১৯৮৪ সালের ৪ ঠা মে ছড়া পরিষদ, সিলেট গঠন হয়।নিউ বর্ণমালা প্রেসে৷ এক সভা আয়োজন করে। প্রেসের স্বত্বাধিকারি জাহিরুল হক চৌধুরী’র আন্তরিকতা নিয়ে।

সেই থেকে নিয়মিত ছড়ার আসর আয়োজন করে কাজ শুরু হয় ছড়া পরিষদের। পরে নিউ বর্ণমালা প্রেস থেকে বের হয় সাপ্তাহিক সিলেট বাণী। পরে হয় দৈনিক সিলেট বাণী। জাহিরুল হক চৌধুরী সম্পাদক। তাঁর সহযোগিতা ও ভালোবাসা ছড়া পরিষদের যাত্রায় অতুলনীয়।সিলেট বাণী অফিস ছড়া পরিষদের আসরে হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। সিলেট বাণীর সাংবাদিক বন্ধুদেরও ভালোবাসা পেয়েছে ছড়া পরিষদ সীমাহীন। ছড়াকার শাহাদাত করিম সভাপতি ও সুফিয়ান আহমদ চৌধুরী(আমি) সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রথম কমিটির কাজ শুরু হয়।সাথে সিলেটের এক ঝাঁক ছড়াকার। সেই থেকে নিয়মিত ছড়া নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলে ছড়া পরিষদ। নিয়মিত আসরে আসতে থাকে নতুন নতুন মুখ।আসরে শ্রেষ্ঠ ছড়াকার নির্বাচিত করে পুরস্কার প্রদান। দেশব্যাপী ছড়া প্রতিযোগিতা।

ছড়া উৎসব আয়োজন। সিলেট বিভাগ আন্দোলানে বিশেষ ছড়ার আসর। সিলেট বাণীতে ছড়ার পাতাও সহ বিভিন্ন কাজ নিয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যায় ছড়া পরিষদ। বাংলাদেশ টেলিভিশনের “আবহমান” অনুষ্ঠানে সৈয়দ শামসুল হকের উপস্হাপায় ও শিশু সাহিত্যক আলী ইমামের পরিচালনায় ছড়া পরিষদের ছড়া পাঠ।

ছড়া উৎসবে প্রখ্যাত ছড়াকার রফিকুল হক দাদু ভাই সহ বিশিষ্টজনের উপস্হিতি প্রশংসনীয় হয়। এভাবে আরও আসেন প্রখ্যাত কবি- ছড়াকার দিলওয়ার, প্রখ্যাত সাহিত্যিক ড.আশরাফ সিদ্দিকী, শিশু সাহিত্যিক আলী ইমাম,প্রখ্যাত ছড়াকার আবু সালেহ, বরেণ্য ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন সহ বিশিষ্ট শিশু সাহিত্যিক ও ছড়াকার। বের হয় ছড়াগ্রন্হ “দিন বদল”।

এক সময় ছড়াকার শাহাদত করিম ইংল্যান্ডে চলে যান স্বপরিবারে। সুফিয়ান আহমদ চৌধুরী (আমি) সভাপতি ও মুজিবুর রহমান শাহিন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে থাকি।এইভাবে ছড়া পরিষদ মাসে ২ টি ছড়ার আসর চলতে থাকে সিলেট বাণী অফিসে। সিলেট বাণী যেখানে অফিস স্হানান্তর করে সেখানে ছড়া পরিষদও। লাল বাজার থেকে শুকুরিয়া মার্কেট,শুকুরিয়া থেকে রাজা ম্যানশন। চলার পথ সিঁড়ি ভেঙ্গে ৫০০ আসর করার গৌরব অর্জন করে প্রাণের সংগঠন ছড়া পরিষদ।

১৯৯৮ সালে আমারও প্রবাস জীবনে আসতে হয় আমেরিকায়। মুজিবুর রহমান শাহিন সভাপতি ও জয়নাল আবেদীন জুয়েল সাধারণ সম্পাদক করে ছড়া পরিষদ, সিলেট কমিটি পুর্ণগঠিত করে। কিন্ত্তু বেশিদিন থাকা হয়নি। দুই মাস পর আবার দেশে ফিরে গিয়ে জড়িয়ে যাই ভালোবাসার সংগঠন চাঁদের হাট, সিলেট শাখা, প্রাণের সংগঠন ছড়া পরিষদ, সিলেট ও প্রিয় সাহিত্য সংকলন “জীবন মিছিল” নিয়ে। সিলেটের প্রাণপ্রিয় লেখকদের নিয়ে গঠন করি “সিলেট সাহিত্য পরিষদ”। বিশিষ্ট কবি এডভোকেট অরুণ ভূষণ দাশ সভাপতি ও সুফিয়ান আহমদ চৌধুরী(আমি) সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করি। কাজ চলে পুরোদমে।সাহিত্য সভা,কবিতা উৎসব সহ বিভিন্ন আয়োজন।১৯৯৮ সালে সিলেট জেলা আইনজীবি সমিতির নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্বিতায় লাইব্রেরী সম্পাদক ও ২০০১ সালে সর্বাধিক ও ২০০২ সালে বিপুল ভোটে কার্যকরী পরিষদের সদস্য হই আইনজীবিদের ভালোবাসায়। ২০০৬ সালে আবার আমেরিকা আসতে হয় আসার সময় কবি আব্দুল হান্নান সভাপতি ও কবি পুলিন রায়কে সাধারণ সম্পাদক করে সিলেট সাহিত্য পরিষদের কমিটি পুর্ণগঠিত করে দিয়ে আসতে হয়।

ছড়া পরিষদ,সিলেট-এর দীর্ঘ পথচলার মিছিলে যাদের সহযোগিতা, আন্তরিকতা -ভালোবাসা অনুপ্রাণিত করেছে সেই প্রিয়জনরা হলেনঃ কবি দিলওয়ার, ড.সফিউদ্দিন আহমদ, বেগম সুফিয়া চৌধুরী( আমার মা),জাহিরুল হক চৌধুরী, এডভোকেট আজিজুল মালীক চৌধুরী, এডভোকট অরুণ ভূষণ দাস, তুষার কর, মহিউদ্দিন শীরু,বদর উদ্দিন কামরান,আজিজ আহমদ সেলিম, ড.আবুল ফতেহ ফাত্তাহ, জামান মাহবুব,মিলু কাশেম, আব্দুল হান্নান,শাহাদাত করিম, আব্দুল বাসিত মোহাম্মদ, তামান্না নাহার চৌধুরী(নাজ),(আমার স্ত্রী),এডভোকেট সরওয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল, গোবিন্দ পাল, তাজুল ইসলাম, নূরুল বারী চৌধুরী,কিশওয়ার ইবনে দিলওয়ার,শারিক শামসুল কিবরিয়া, ইকবাল আহমদ চৌধুরীে(কামাল),ইকরামুল কবির, আব্দুস সবুর মাখনসাঈদুর রহমান সাঈদ, শিউল মনজুর, সৈয়দ সুজাত আলী, মোসলেহ উদ্দিন বাবুল,চৌধুরী আমীরুল হোসেন, বদরুল আলম খান,আহমেদ শামীম,জয়নাল আবেদীন জুয়েল, আতাউর রহমান সেগুল, এফজাল আহমদ চৌধুরী, মোশতাক আহমদ,অজিত রায় ভজন,মোহাম্মদ রুহেল, সেলিম আউয়াল, তালহা জুনেদ, জিল্লুল করিম চৌধুরী, পুলিন রায়, হিমাংশু রন্জ্জন দাস, জয়নাল আফসার, সাঈদ রহমান সাঈদ, জুনেদ আহমদ, সমরেন্দ্র বিশ্বাস সমর, শাহজাহান কমর, জগলু চৌধুরী, সৈয়দ মিসবাহ উদ্দিন, পরিতোষ বাবলু, মুশতাকুর রহিম চৌধুরী, শাহাদত বখত শাহেদ, এখলাসুর রাহমান, আফসার উদ্দিন চৌধুরী, রনক আহমদ চৌধুরী, সৌমিত্র দেব টিটো, সংগ্রাম সিংহ,আব্দুস সাদেক লিপন, রানা কুমার সিংহ, ইমতিয়াজ সুলতান ইমরান, জাফর ওবায়েদ, সালাম ফারুক , আব্দুল মুকিত অপি, এম.এ.হান্নান, হ্রষিকেশ রায় শংকর,শুভংকর দাস, সালেহ আহমদ খান, তাইছির মাহমুদ, বিমল কর, সুমন বণিক, ধ্রুব গৌতম, প্রণব কান্তি দেব, দেলোওয়ার হোসেন দিলু, ফজলুররহমান বাবুল, রুহুল আমিন চৌধুরী, ফয়সাল আইয়ূব,শামীম শাহান,আরিফ বিল্লাহ সুফি, চন্দন চৌধুরী, তারেশ কান্তি তালুকদার, মাহবুব লীলেন, রেজুয়ান মারুফ, নূরুল ইসলাম আসলমী, আব্দুল হাই আজাদ, হেলাল নির্ঝর, নাজমুল ইসলাম মকবুল, আনোয়ার হোসেন মিসবাহ, পারভেজ রশীদ মঙ্গল, লোকমান আহম্মদ আপন, এনায়েত হোসেন সোহেল, ময়নূল ইসলাম পংকি, শেখর আচার্য্য,সব্যসাচী পাহাড়ী,সালমান ফরিদ, সৌদিপ মোহন মিহির, বশির আহমদ জুয়েল,দেলওয়ার হোসেন সেলিম, সিরাজ উদ্দিন শিরুল,মামুন সুলতান, আলউদ্দিন সরকার,মুশতাক আহমদ চৌধুরী, ইব্রাহীম মিজি, সুমন বিপ্লব, সজল চন্দ্র ঘোষ,জালাল খান ইউসুফী,কামাল আহমদ, কামরুল আলম, নাজনীন আক্তার কণা, শাহিন উদ্দিন, পলাশ আফজল,মুনিরা সিরাজ চৌধুরী, জসীম আল ফাহিম, পৃথ্বিশ চক্রবর্ত্তী, মেহেদী কাবুল, নিজামুল হক হামিদী, মন্জুর মোহাম্মদ, শাহ ফজলু, রিপন আহমদ ফরিদী, বাদশাহ গাজী, বিভাংশু গুন, মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, সন্জ্জয় কর, আলিম উদ্দিন আলিম, মোহাম্মদ জায়েদ আলী, কয়েস মাহদী, নিরন্জন মণি, রওনক ইকরাম, এম আলী হোসাইন, নুসরাত চৌধুরী (আমার মেয়ে)ও আরও অনেকে।

শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা সহ আমার একটা ছড়াঃ—

জীবন ছন্দেঃ জীবন ভেলা

কিশোর বেলা রঙিন দিন
স্মৃতির পাতায় আছে,
শাপলা কুঁড়ি চাঁদের হাট
সাথীরা বুকেতে কাছে।

জীবন মিছিল নিয়ে আমার
এগিয়ে চলার দিন,
কাজের নেশা স্বপ্ন নেশায়
যায় যে প্রতিদিন।

ছড়ার মেলা ছড়ার হাটে
মাতায় মন রোজ,
ছড়া পরিষদ নিয়ে যে
ছড়ার সাথী খোঁজ।

সাহিত্য কাজে সময় যায়
রোদ বৃষ্টি ভিজে,
মনটা ছুটে এদিক সেদিক
রোজ কাজে কী যে।

এমনি করে জীবন কাটে
নেশায় কত পায়,
স্বদেশ প্রবাসে আমার যে
জীবন কেটে যায়।

কষ্টটা ভুলে দুঃখটা ভুলে
জীবন ছন্দে চলা,
সাহিত্য সেবা পাগল প্রেমিক
মনটা রয় উজালা।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *