করোনা পরিস্থিতির কারণে গত প্রায় দুই মাস ধরে কক্সবাজারের ছোট-বড় দোকানপাটসহ সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। সম্পূর্ণ বেকার হয়ে আছে শ্রমিক-কর্মচারীরা। যেসব দোকানদারের হাতে অল্প টাকা জমা ছিল তাও শেষ পর্যায়ে। অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইতোমধ্যে ধার-দেনায় পড়েছেন। দৈনিক আয়ের মানুষগুলো পড়েছে মহাবেকায়দায়।
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে পারছেনা দোকানদাররা।
অন্যদিকে পরিবার-পরিজনের ভরণপোষণ নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছে শহরের অন্তত ২০ হাজার দোকান কর্মচারী।
লকডাউন এবং প্রশাসনের কড়াকড়ির মধ্যেও জীবিকার তাগিদে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী চুপিচুপি দোকানপাট খুলতে দেখা যাচ্ছে। যদিওবা প্রশাসনের অভিযানে মাঝেমধ্যে জরিমানাও করা হচ্ছে এসব দোকানদারদের।
শহরের পানবাজার রোড সংলগ্ন ফিরোজা শপিং কমপ্লেক্সস্থ মিনাবাজারের মালিক আনোয়ারুল ইমরান রায়হান জানান, একটি দোকান ও ৩টি কারখানার মাসিক ভাড়া দিতে হয় ৫০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে বন্ধের দুই মাসেই ভাড়া দাঁড়াবে এক লাখ টাকা। এছাড়া রয়েছে ১৬ জন কর্মচারী। তাদের বেতন তো আছেই।
নিজের পরিবার পরিজন নিয়ে থাকেন ভাড়া বাসায়। সেখানেও দিতে হয় প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে হাতে টাকা যা ছিল সব শেষ। সামনের দিনগুলো কীভাবে চলবে তা নিয়ে টেনশনে আছেন ব্যবসায়ী আনোয়ারুল ইমরান রায়হান।
তার দাবী, অন্তত দুই মাসের ভাড়া মওকুফ করা হোক।
এদিকে, নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে ১০ মে থেকে শর্তসাপেক্ষে দোকান খোলা রাখার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় আশান্বিত হয়েছিল ব্যবসায়ীরা।
তারপরও জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে দোকান বন্ধ রাখার পক্ষে অনেকেই।
তবে, দোকান ভাড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মুকুল জানিয়েছেন, দোকান খোলা রাখা না রাখার বিষয়ে আজ শনিবার তাদের একটি মিটিং রয়েছে। সেখানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
ব্যবসায়ীদের অভিমত, অতিরিক্ত আবেগের বশবর্তী হয়ে দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা ন্যায়সঙ্গত হবে না। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের কথা মাথায় রাখতে হবে। যাদের জীবন জীবিকার একমাত্র সম্বল এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, তাদের বিষয়টিও আলোচনার দাবি করেছে ব্যবসায়ীরা।
কক্সবাজার দোকান কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন জানান, তাদের সমিতিভুক্ত প্রায় ১৮ হাজার শ্রমিক দুই মাস ধরে বেকার। দোকানপাট বন্ধ থাকার কারণে মালিকরা তাদের বেতনভাতা দিতে পারছে না। আর ছেল-সন্তানদের মাসিক বেতনে চলে এমন অসংখ্য পরিবারে চলছে দুর্দিন।
শ্রমিক নেতা সাহাব উদ্দিন আরো জানান, তিনি যে দোকানটি করেন তার মাসিক ভাড়া ২৫ হাজার টাকা। ৭ জন কর্মচারীকে প্রতি মাসে বেতন দিতে হয় ৭২ হাজার টাকা। নিজের ফ্যমিলি বাসার ভাড়া দিতে হয় ১২ হাজার টাকা। সে হিসেবে তার মাসিক খরচ পড়ে ১ লক্ষ ৯ হাজার টাকা।
বিগত প্রায় দুই মাস যাবত দোকান বন্ধ থাকায় অর্থিক যোগান নিয়ে তাকে মারাত্মক হিমশিম খেতে হচ্ছে।
দুর্যোগকালীন দুই মাসের বাসা ও দোকান ভাড়া মওকুফের দাবী এই শ্রমিক নেতার।
এদিকে, কক্সবাজার জেলা শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুল হক জানান, তাদের নিবন্ধিত ১৭টি সংগঠনের অধীনে জেলায় প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক রয়েছে। সেখানে শুধু কক্সবাজার শহর এলাকায় ২০ হাজার মতো হবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে শ্রমিকরা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।
শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াতে সাধ্যবানদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন শ্রমিক নেতা আমিনুল হক।
নির্বাহী সম্পাদক