কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি বাঘের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এতে তৈরি হয়েছে নতুন আতঙ্ক। তাই মানবদেহ বাদেও এই ভাইরাস অন্যান্য প্রাণীর শরীরে থাকতে পারে কি-না, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
তবে গবেষকরা জোর দিয়েই বলছেন, প্রাণীজ এই ভাইরাসটি মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণীদেহে সংক্রমিত হওয়া অকল্পনীয়। এবং তাদের কাছে এখন পর্যন্ত কোন পোষা প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে এর সংক্রমণ হওয়ার কোনো প্রমাণ নেই।
এবার স্পেনের একটি বিড়ালের মৃত্যু থেকে বাড়ছে জল্পনা। প্রায় এক সপ্তাহ আগে বার্সেলোনার অ্যানিমেল হেলথ রিসার্চ সেন্টারের (ক্রেসা) বিশেষজ্ঞরা একটি বিড়ালের মরদেহ পেয়েছিলেন। পোষা প্রাণীটি এমন একটি পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কিত যেখানে বেশ কয়েকজন সদস্যের কোভিড -১৯ এর পরীক্ষায় পজিটিভ ধরা পড়ে।
শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছিল বিধায় পরিবারের পক্ষ থেকে বিড়ালটিকে পশু চিকিৎসালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বিড়ালটিকে ক্রেসায় পাঠানো হয়। সেখানকার গবেষকরা SARS-COV-2 ভাইরাসের সন্ধানে বিড়ালটির বেশ কয়েকটি অঙ্গ নিয়ে অধ্যয়ন করেন।
শুক্রবার (৮ মে) অ্যানিমেল হেলথ রিসার্চ সেন্টার (ক্রেসা) জানায়, বিড়ালটির হাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি নামে পরিচিত একটি জিনগত হৃদরোগ ছিল যা এটির হঠাৎ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। বিড়ালটির শরীরে পাওয়া সমস্যাগুলোর কোনোটিই করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। পশু চিকিৎসকদের মতে, ভাইরাসটি বিড়ালের স্বাস্থ্যের ওপরে কোনো প্রভাব ফেলেনি।
বিড়ালটির বয়স চার বছর এবং এর নাম নেগ্রিটো। গবেষকরা গোপনীয়তা রক্ষার জন্য বিড়ালের মালিকদের সম্পর্কে আর কোনো তথ্য সরবরাহ করেননি।
তবে বার্সেলোনার অ্যানিমেল হেলথ রিসার্চ সেন্টার (ক্রেসার) প্রধান নাটালিয়া মাখো বলছেন, খুবই বিচ্ছিন্নভাবে বিড়াল এই মহামারিটির সমান্তরাল শিকার হতে পারে। তবে তাদের মাধ্যমে মানুষের সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
আমরা এই তথ্যটি একটি বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশ করার ইচ্ছা করছি, তবে এর আগে আমরা ভাইরাসের জিনোমকে পরীক্ষা করে দেখতে চাই যে, এই প্রাণীর মধ্যে কোনো অ্যান্টিবডি ছিল কি-না-যোগ করেন খোয়াকিম সেগালেস নামের ক্রেসার এক গবেষক।
গবেষকরা বলছেন, করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়া নেগ্রিটো ষষ্ঠ বিড়াল। এর আগ নিউইয়র্কে পাঁচটি বিড়ালের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। সম্প্রতি, নিউইয়র্কের ব্রংকস চিড়িয়াখানায় বাঘের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। একাধিক বাঘ ও সিংহকে সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে পড়তে দেখা যায়। পশুগুলোর শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এরপর ওই বাঘটিকে পরীক্ষা করা হয়। চার বছর বয়সী মালয়েশিয়ান বাঘটির নাম নাদিয়া।
শুধু এই বাঘটিই নয়, বাঘটির বোন সহ আরও দুটি বাঘ ও তিনটি আফ্রিকার সিংহের শুকনো কাশি হতে দেখা গিয়েছে। যেহেতু পশুদের অজ্ঞান করে পরীক্ষা করতে হয়, তাই সব পশুকে পরীক্ষা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পশু চিকিৎসকরা।
চিড়িয়াখানার এক কর্মীর শরীর থেকে ওই ভাইরাস পশুদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। আপাতত বাঘগুলোকে আলাদা করে রাখা হয়েছে, যাতে বাকি পশুদের শরীরে ভাইরাস না ছড়িয়ে পড়ে। গত ১৬ মার্চ থেকে ওই চিড়িয়াখানা বন্ধ রাখা হয়েছে।
নির্বাহী সম্পাদক