Home » প্লেগের হাসপাতাল তৈরি করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দেখেছিলেন মহামারীর মৃত্যুযন্ত্রণাও

প্লেগের হাসপাতাল তৈরি করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দেখেছিলেন মহামারীর মৃত্যুযন্ত্রণাও

কলকাতা: সারা বিশ্ব কোভিড ১৯ নামক মাকণ ভাইরাসের আতঙ্কে ভুগছে। বাংলা এর আগেও সাংঘাতিক মহামারী দেখেছে। সেই সময়ে ইন্টারনেট ছিল না। যেটুকু সুবিধা প্রযুক্তির দয়ায় আজ আমরা পাচ্ছি তার কিছুই তখন ছিল। এমন মহামারীর দিন দেখেছেন স্বয়ং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও। এমনকি মহামারীতে আপনজনকে হারিয়েও ছিলেন তিনি।

তখন ১৯১১ সাল। বেড়েই চলেছে সাংঘাতিক সব মহামারীর প্রকোপ। এদের মধ্যে অন্যতম প্লেগ, কলেরা, কালাজ্বর। টিকাও আবিষ্কার হয়নি। প্লেগ কলকাতায় এমন ভয়াবহ ভাবে ছড়িয়ে পড়ে যে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুকে পর্যন্ত বাড়িছাড়া হতে হয়েছিল। তিনি রবীন্দ্রনাথকে সেই সময়ে চিঠি লিখেছিলেন, উপরের ঠিকানা হইতে বুঝিতে পারিয়াছেন, যে, আমি পলাতক— প্লেগের অনুগ্রহে। আমার একজন ভৃত্য ছুটি লইয়া একদিন বড়বাজার গিয়াছিল। সেখান হইতে আসিয়া একদিন পরেই প্লেগ হয়। আর ৩০ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু। বাড়ি ছাড়িয়া উক্ত ঠিকানায় আছি— কতদিন পলায়ন চলিবে জানি না।

এদিকে প্লেগও দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে। আক্রান্ত হওয়ার ঘণ্টা কয়েকের মধ্যেই মৃত্যু হচ্ছে রোগীর। ফলে দ্রুত চিকিৎসারও সুযোগ নেই। প্লেগ পৌঁছেছিল জোড়াসাঁকোর বাড়িতেও। দুজন মেথর আক্রান্ত হয়েছিলেন। স্বাভাবিক ভাবেই চিন্তিত হয়ে পড়েন কবি। এত লোকের আক্রান্ত হচ্ছে, কিন্তু তার কোনও সঠিক চিকিৎসা হবে না, তা কী ভাবে হয়। অতঃপর রবীন্দ্রনাথ শুরু করেছিলেন প্লেগের হাসপাতাল বানানোর কাজ।

সঙ্গে ছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। যোগ দিয়েছিলেন ভগিনী নিবেদিতাও। এমনকী পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে চলত পর্যবেক্ষণও। চিকিৎসক ও নার্সরাও সঙ্গে যেতেন। কিন্তু এতই ভয়াল ছিল সেই প্লেগ যে ১৯১১ সালে বাংলায় জনসংখ্যাও সেভাবে বাড়েনি। কারণ এত মৃত্যু দেখেছিল মানুষ।

মহামারীতে মৃত্যু দেখেছিল ঠাকুর পরিবারও। প্লেগে আক্রান্ত হল অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেয়ে। তার বয়স তখন ১০ এর কাছাকাছি। শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি তাকে। মুহূর্তে অবন ঠাকুর-সহ গোটা ঠাকুর পরিবারে নেমে এসেছিল শোকের ছায়া।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *