করোনাভাইরাসকে জয় করে সুস্থ হলেন ভৈরব উপজেলা সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) হিমাদ্রি খিসা। তিনি ভৈরবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে গত ১৭ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হন। তারপর থেকে তিনি হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। তৃতীয় দফায় নমুনা পরীক্ষার পর সোমবার (৪ মে) তার করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। এতে স্থানীয় প্রশাসনে স্বস্তি ফিরেছে।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে ভৈরব উপজেলা সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) হিমাদ্রি খিসা সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে কঠোর পরিশ্রম করেনে। শহরের লকডাউন কার্যকর করতে তিনি দিনরাত কাজ করেন। প্রবাসীরা ভৈরব আসলে তিনি পুলিশ নিয়ে তাদের বাড়ি বাড়ি খোঁজ করে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আনেন। সরকারি নির্দেশ অমান্যকারীদেরকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করে তিনি সকলকে সতর্ক করেন। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সকল কাজে তিনি সবসময় সহয়তা করেন। কাজের কারণে তিনি ইতোমধ্যই ভৈরববাসীর কাছে জনপ্রিয় কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন।
হিমাদ্রি খিসা ৩৪তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি পেয়ে প্রথমে বাগেরহাটে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন। তারপর ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলায় এসিল্যান্ড হিসেবে বদলি হন। এরপর গত বছরের ৭ ডিসেম্বর ভৈরব উপজেলায় এসিল্যান্ড হিসেবে যোগদান করেন। তার বাড়ি রাঙ্গামাটি সদর উপজেলায়। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন।
ভৈরবে করোনায় সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে হিমাদ্রি খিসা গত ১৬ এপ্রিল শরীর অসুস্থতা অনুভব করলে ওইদিনই তার নমুনা পরীক্ষা করতে ঢাকায় পাঠানো হয়। পরদিন তার রিপোর্ট করোনা পজিটিভ আসে। এরপর তিনি ডাক্তারের পরামর্শে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকেন। এরই মধ্য গত ২৬ এপ্রিল ও ১ মে দুইবার তার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। দুটি রিপোর্টই নেগেটিভ আসে। সোমবার (৪ মে) শেষ রিপোর্টেও তার করোনার নেগেটিভ আসলে তাকে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে করোনা মুক্ত ছাড়পত্র দেয়া হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) হিমাদ্রি খিসা বলেন, ভৈরববাসীর জন্য কাজ করতে গিয়েই আমি করোনায় আক্রান্ত হই। তবে আমি চিন্তিত হইনি। কারণ আমার শরীরে করোনার কোনো উপসর্গ ছিল না। প্রথমে করোনায় আক্রান্তের খবরে কিছুটা ভয় পেলেও মনোবল শক্ত ছিল আমার। পরে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযারী বাসায় থেকে ওষুধ সেবন করেছি এবং সকল নিয়ম-কানুন মেনে চলেছি।
তিনি বলেন, আমি কাজের মানুষ হয়েও ২০ দিন ঘরবন্দি থেকে অস্বস্তিতে ছিলাম। টিভি দেখে আর বই পড়ে সময়টা পার করেছি। আশা করছি কাল থেকে আবার কাজে ফিরব। করোনায় আক্রান্তদের মনোবল শক্ত রেখে নিয়মিত ওষুধ সেবনসহ নিয়ম-কানুন মেনে চলার পরামর্শ দেন হিমাদ্রি খিসা।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ জানান, সোমবার হিমাদ্রি খিসার করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। তার আক্রান্তের কারণে প্রশাসনের গতি কিছুটা কমে গিয়েছিল। কারণ করোনার সময়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এককভাবে সকল প্রশাসনিক কাজ করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন। এতে আমারও কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুবনা ফারজানা বলেন, কিশোরগঞ্জ জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে প্রশাসনে করোনায় আক্রান্ত হন একমাত্র হিমাদ্রি খিসা। এতে আমিসহ জেলা প্রশাসক নিজেও আতঙ্কিত ছিলেন। ভৈরবের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর নগরীতে করোনার সময়ে অনেক কাজ করতে হয়। প্রশাসনে আমরা দুজনই কাজ করি ভৈরবে। এ সময়ে হিমাদ্রি খিসা করোনা আক্রান্ত হওয়ায় আমার কাজ ও কষ্ট বেড়ে যায়। দিনরাত কাজ করেছি। করোনা থেকে তার সুস্থতার খবরে আমিও স্বস্তি পেলাম।
নির্বাহী সম্পাদক