প্রতিনিধি সাদিকুল আমিন শিপু : মানষিক ভারসাম্যহীন ফিরোজা বেগম (৫৫)। ঠিকমতো স্পষ্ট করে কথা বলতে পারে না। প্রশ্ন করলে একটু আধটু উত্তর দিতে পারে। এই একটু আধটু উত্তরের সুত্র ধরে খোঁজে বের করা হলো তার ঠিকানা। সে বরগুনা জেলার সদর থানার বাসিন্দা। পরিবারে তার স্বামী চাঁন মিয়াসহ ৫টি ছেলে-মেয়ে রয়েছে। ২০১৭ সালের মাঝামাঝির দিকে সে ঢাকার খিলগাঁও থেকে হারিয়ে যায়।
কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ সুত্রে জানা যায়, ৩০ এপ্রিল উপজেলার শাহ আরফিন এলাকা দিয়ে মানষিক ভারসাম্যহীন ফিরোজা বেগম ভারতে ঢুকে পড়ে। ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) তাকে আটক করে। পরে তার কথাবার্তায় বাংলাদেশী বুঝতে পেরে তারা তাকে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) কাছে হস্তান্তর করে। বিজিবি ফিরোজা বেগমের পরিচয় সনাক্ত করতে না পারায় বিজিবি’র সিইও সিলেট জেলা পুলিশ সুপারকে বিষয়টি অবগত করেন। পুলিশ সুপারের নির্দেশে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ বিজিবি’র কাছ থেকে ফিরোজা বেগমকে কোম্পানীগঞ্জ থানায় নিয়ে আসে।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি রজিউল্লাহ খাঁন খেলার ছলে ফিরোজা বেগমকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে তার নাম ফিরোজা, বাড়ি বরগুনা জেলায় তার চেয়ারম্যানের নাম মাসুক মিয়া।
এই সুত্র ধরেই পুলিশ তার ঠিকানা খোঁজতে শুরু করে। খোঁজতে থাকে কোন এলাকার এই মাসুক চেয়ারম্যান। বরগুনা জেলার বিভিন্ন থানায় যোগাযোগ করার পরেও পাচ্ছিলেন না মাসুক চেয়ারম্যানকে। এরি মধ্যে কোম্পানীগঞ্জ থানার এক পুলিশ সদস্য বলেন, মহিলা অস্পষ্টভাবে যেই গ্রামের নাম বলেছে তা হয়ত বরগুনা জেলার সদর থানা হতে পারে। সাথে সাথে যোগাযোগ করা হয় বরগুনা জেলার সদর থানার ওসির সাথে। ওসি বলেন হ্যাঁ মাসুক চেয়ারম্যান এই থানাতেই আছেন। পরে চেয়ারম্যানের সাথে আলাপ করে তার অস্পষ্টভাবে বলা গ্রামের নাম জানতে পারা যায় কালিরতবুগ। চেয়ারম্যান ঐ এলাকার ওয়ার্ড মেম্বারের মাধ্যমে ফিরোজা বেগমের ছেলে সুমনকে (৩১) জানান। ছেলে সুমন খবর পেয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসির মোবাইলে ফোন দিয়ে তার মায়ের সাথে কথা বলে। এ সময় ফিরোজা বেগম ছেলের কণ্ঠ চিনতে পেরে উচ্চস্বরে তার দু’একটা স্মৃতিচারণ মূলক কথা বলে। ছেলেও কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
এর পর মা’কে নিতে ছেলে এই করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনকে উপেক্ষা করে ছুটে চলে আসে কোম্পানীগঞ্জ থানায়। ২ মে দুপুর ২টায় কোম্পানীগঞ্জ থানা থেকে সুমন তার মাকে নিয়ে বরগুনা জেলার নিজ গ্রামের উদ্দেশ্যে চলে যায়।
সুমন বলেন, আমি আমার মাকে নিয়ে ঢাকা খিলগাঁও থানার নন্দীপাড়া এলাকার একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতাম। মা মানষিক ভারসাম্যহীন হওয়ার কারণে এর আগেও দুইবার হারিয়ে গেছিলেন। তবে খোজাখুজি করে ৬ মাসের মধ্যে পেয়ে গেছিলাম। তবে ২০১৭ সালে হারিয়ে যাওয়ার পরে অনেক খোজাখুজি করে আর পাইনি। যারা আমার মাকে খোঁজে পেতে সহযোগিতা করেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ। বিশেষ করে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি রজিউল্লাহ স্যারকে ধন্যবাদ।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি রজিউল্লাহ খাঁন বলেন, সিলেট জেলার পুলিশ সুপারের নির্দেশে মানষিক ভারসাম্যহীন মহিলাকে বিজিবি’র কাছ থেকে এনে অনেক খোজাখুজি করে তার ছেলের হাতে তুলে দিয়েছি। এই ধরনের একটি ভালো কাজ হারিয়ে যাওয়া মা’কে ছেলের হাতে তুলে দিতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। ছেলেও তার মাকে পেয়ে অনেক খুশি। মা’কে পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ে ছেলে। ছেলেকে পেয়ে মা অনেকটা স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কথা বলতে শুরু করে।