Home » হিসেব – জীবনের কাছে পরাজিত লেখক: অরুন দাস

হিসেব – জীবনের কাছে পরাজিত লেখক: অরুন দাস

একসাথে অনেকটা বছর কেটেছে আমাদের। কোথায় যেন পড়েছিলাম-হিসেব কষে জীবন পাড়ি দেয়া যায় কিন্তু সুখী হওয়া যায় না। সুখী হতে গেলে কিছুটা বেহিসেবী হতে হয়।

 

তাই ভালোবেসে কার্পন্য শিখিনি। যা দিয়েছি উজাড় করে দিয়েছি। ভালোবাসাকে হাতের মুটোয় বন্দি করে রাখিনি, নোঙরে বেঁধে রাখিনি, নাটাই হাতে রাখিনি। বুকের এই বিশাল আকাশ তাকে দিয়েছি। মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়ে বেড়ানোর পাখা দিয়েছি।

 

সেও চেয়েছে তার সর্বস্ব দিয়ে আমার প্রতিষ্ঠা, আমার সাফল্য, আমার সমৃদ্ধি, আমার ভালো থাকা।

 

প্রেয়সীরা এরকম হয় কেন? অপ্রেমিকদের প্রেমিক বানিয়ে ফেলে। অগোছালাদের গোছালো। অনুপ্রেরণা দিয়ে সামনে এগোনোর শক্তি যুগিয়ে দেয়।

 

পড়ালেখায় যাতে গাফিলতি না করি সেজন্য তার গোয়েন্দাগিরি ছিলি সর্বক্ষণ। আমার স্মার্টনেসের জন্য ক্লিন সেইভ, নীল শার্ট, কালো প্যান্ট, হাতঘড়ির ব্যবহার ওসোব তার আবদারেই শিখেছি। যেদিন লাল শার্ট পরেছিলাম সেদিন তার ভ্রু কুচকানো আমাকে ইতস্ততার মাঝে ফেলেছে কারণ লাল শার্ট তার খুব অপছন্দের।

প্রতিবছর শীত আসলে আমাকে নিয়ে তার সকল চিন্তা। যাতে ঠান্ডা না লাগে, কাশি না হয়। কি কড়া শাসন। 

একবার খুব মনে আছে, ২০১২ সালের শীতে প্রচন্ড কফ হয়েছিল আমার। বৃদ্ধ মানুষের মতো কাশতে কাশতে নিচু হয়ে যেতাম। তাতে সুপর্ণার কি যে অস্বস্থি। ফোনের ওপাশ থেকে কেঁদে কেটে বর্ষণের জোয়ার বসিয়ে দিয়েছিল। তখন মনে হয়েছিল মাঝে মাঝে অসুস্থ হওয়াও ভালো। এতে প্রেয়সীর আদর, সোহাগ আর কেয়ারিং একটু বেশিই পাওয়া যায়।

 

যা হোক এরই মাঝে অনেক স্বপ্ন বুনা হয়েছে আমাদের মধ্যে। আমাদের মধুচন্দ্রিমা হবে একটা পূর্ণিমার রাতে ছোট্ট খুড়ে ঘরে। টিনের চাল, খড়ের বেড়া, হারিকেনের আলোয় শুধু দু’জন দু’জনকে দেখবো। এতো কাছাকাছি থাকবো যে, একজনের প্রশ্বাস অন্যজনের নিশ্বাস হবে।

 

তার অনুপ্রেরণা আর কেয়ারিংয়ে আমিও কথা দিয়েছিলাম, নিজের পায়ে দাঁড়িয়েই সংসার শুরু করবো। অথচ সমাজ, সংসার, বাস্তবতা, নিয়ম সর্বোপরি জীবন আমাদের একসাথে থাকতে দেয়নি। কালবৈশাখী ঝড়ের মতো হিম শীতল জনপদ প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায় দু’জনের পৃথিবীকে আলাদা করতে।

 

কিছুদিন পর সুপর্ণার বিয়ে শুনেই মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। চেনা পথ অচেনা হতে লাগলো। সমুদ্র সৈকতের ঢেউ তার গতি হারালো। পূর্ণিমার রাতগুলো হলো ধূষর। সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত হলো বিবর্ণ। বসন্ত কাল পরিণত হলে মুমূর্ষু ঝরাঝীর্ণ ঋতুতে। হৃদয়ের আকাশ হলো সাহারা। ইচ্ছে আর স্বপ্নগুলো হলো হেমলক। চোখের ক্যানভাস হলো প্রশান্ত মহাসাগর। ফুসফুস আর হৃৎপিন্ড হারালো তার স্বাভাবিক কার্যপ্রক্রিয়া। জীবনটা হলো হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা শ্মশানযাত্রী।

 

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *