আট ঘন্টা থেকে বাড়িয়ে কাজের সময় করা হল ১২ ঘন্টা। ১৯৪৮ সালের ফ্যাক্টরিজ আইনে সংশোধন ঘটিয়ে কাজের সময় আরও চারঘন্টা করল গুজরাত সরকার। এজন্যে বাড়তি বেতনও দেওয়া হচ্ছে না। এমনটাই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ জানিয়েছে দেশের সর্বভারতীয় শ্রমিক সংগঠনগুলি। আর এই অভিযোগ জানিয়ে ইতিমধ্যেই গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছেন শ্রমিক সংগঠনগুলির শীর্ষ নেতৃত্ব। ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। এক ধাক্কায় চার ঘন্টা কাজের সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ক্ষোভ তৈরি হয়েছে শ্রমিকদের মধ্যে।
তথ্য বলছে, কেন্দ্রীয় আইনের কিছু অংশের স্টেট অ্যামেন্ডমেন্টের সুবিধা পায় রাজ্য সরকারগুলি। ত্বে মৌলিক আইনের রাজ্যস্তরে বদল আনা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে কোনও নিয়মের অপব্যবহার হয়েছে কি না, সেই প্রশ্নই তুলেছেন সর্বভারতীয় শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। ইউটিইউসির সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষ এক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সারা দেশেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে কি না, তা নিয়েই ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী।
গুজরাত সরকারের ওই বিজ্ঞপ্তিতে কারখানায় একদিনে সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টার বেশি শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজ করাতে নিষেধ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। সপ্তাহের ক্ষেত্রে এই সর্বোচ্চ সীমা দেওয়া হয়েছে ৭২ ঘণ্টা। অথচ ১৯৪৮ সালের ফ্যাক্টরিজ অ্যাক্ট অনুসারে দিনে সর্বোচ্চ আট ঘণ্টা এবং সপ্তাহে সর্বাধিক ৪৮ ঘণ্টার বেশি শ্রমিক-কর্মচারীদের দিয়ে কাজ করানো যায় না। মূলত যা নিয়েই আপত্তি তুলেছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। দেশের মধ্যে প্রথম কোনও রাজ্য সরকার দৈনিক কাজের সময় বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলি।
অন্যদিকে, সরকার খতিয়ে দেখছে ১৯৪৮ সালে আইন পরিবর্তন করে কারখানায় আরও বেশি সময়ের ১২ ঘন্টার শিফট চালু করা যায় কিনা। লক ডাউন কিছুদিন জারি থাকলে সে ক্ষেত্রে একদিকে চাহিদা বৃদ্ধি অথচ শ্রমিকের অভাব থাকায় কারখানাগুলির কথা ভেবে এমন পরিকল্পনা করা হচ্ছে। একটি সর্বভারতীয় ইংরেজি সংবাদপত্রে এমনই প্রতিবেদন বের হয় গত কয়েকদিন আগে।
পরিবর্তন করা হলে কারখানায় বর্তমানে থাকা সপ্তাহে ৬ দিন প্রতিদিনের ৮ ঘন্টার শিফট অর্থাৎ সাপ্তাহিক ৪৮ ঘন্টা কাজের বদলে সপ্তাহে ৬ দিন প্রতিদিন ১২ ঘন্টার শিফট চালু করে সপ্তাহিক ৭২ ঘন্টা কাজ করতে হবে। এই বিষয়ে ওয়াকিবহাল দুই অফিসার সূত্রে এমনটাই জানা যাচ্ছে যে ১৯৪৮ সালের ফ্যাক্টরি আইন পরিবর্তন করার প্রস্তাব এসেছে এবং তা সক্রিয়ভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যেখানে গত ৭২ বছর ধরে ওই আইনে ওভারটাইম-এর বিধান থাকতো সেখানে এখন সরকার মনে করছে, ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে তেমন ব্যতিক্রমী কিছু বিধান থাকবে।
সিনিয়র ব্যুরোক্র্যাটদের নিয়ে গঠিত ১১সদস্যের এম্পাওয়ার্ড গ্রুপ খাদ্য ওষুধ সহ প্রয়োজনীয় অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সাপ্লাই চেইন এবং লজিস্টিক মানেজমেন্ট ঠিক রাখতে কারখানার প্রতিদিনেরকাজের সময় ৮ ঘন্টা শিফট থেকে ১২ ঘণ্টা করার কথা ভেবেছে।
ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী সংস্থার এক এক্সিকিউটিভ তার পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানিয়েছেন, এখন তাদের কাছে শ্রমিকের অভাবটাই প্রকৃত সমস্যা ( তারা কিন্তু চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক নয়), কারণ হলো স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে কতগুলি কারফিউ পাস ইস্যু করা যাবে তা নিয়ে। ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন, সেটা ৫০ শতাংশ এবং কিছু ক্ষেত্রে তার চেয়েও কম।
নির্বাহী সম্পাদক