আচ্ছা, তুমি সব সময় আমাকে এতোটা পাগল পাগলকরে রাখো কেন? তুমি এমনভাবে হুলুস্থুল আমার বুকেরভেতর ঢুকে গেলে কেন? আমার খুব অস্থির লাগে। তোমাকেসব সময় ভীষণ মিস করি। তোমার সাথে কথা না বললেআমার কিচ্ছু ভাল্লাগেনা। কিচ্ছু না। কেমন যেনো অশান্তিলাগে, মন আনচান করে। চা বানাতে গিয়ে চায়ে চিনি দিতেভুলেযাই। খাওয়া, ঘুমানো, পড়াশোনা, গল্প করা, আড্ডাদেয়া, মুভি দেখা কিছুই আমার ভাল্লাগেনা। কিছুই না…….স্নান শেষে সাজগোজ করতে ভাল্লাগেনা। মাঝে মাঝেসাজগোজ করলেও কপালে টিঁপ পরতে ভুলে যাই। নিজেকেকেমন যেনো অসম্পূর্ণ অসম্পূর্ণ লাগে। নিজেকে নিঃস্ব নিঃস্বলাগে। শহরে এতো মানুষ আছে তবু কি যেন নেই– কি যেননেই মনে হয়। কাউকে ভালোবাসলে বুকের ভেতর কী এরকমহয়? আগে জানতাম না।
কোথাও বেড়াতে গেলে নিজেকে একলা একলা লাগে। তবুআমি কোথাও যাওয়ার জন্য বের হলে– আমার সাজগোজদেখে মানুষজন এমনভাবে তাকায় – যেন আমি তোমার সাথেদেখা করতে যাচ্ছি। আমার খুব কষ্ট হয় অনিমেষ, খুব। মনেহয় যেনো প্রশান্তের বুকে সুনামী হচ্ছে। সবাই বুঝে, সবাই জানে– আমি তোমাকে খুব করে চাইছি। কিন্তু তুমি বুঝলেও পাত্তাদাও না আবার আমার জ্বালাতনও সহ্য করো। ওতো রোবটমন নিয়ে তুমি থাকো কীভাবে? নাকি অন্য কাউকেভালোবাসো? সেটা অবশ্য না। তোমার সবগুলো লেখায়, কবিতায়, গল্পে অনেক মেয়ের নাম থাকে, সেটা অবশ্য গল্পেরস্বার্থে। তবু আমার কেমন যেনো ঈর্ষা লাগে। মনে হয় গল্পেরনায়িকারা আমাকে তোমার কাছে যেতে দিচ্ছে না। তারাতোমার চারপাশে থেকে তোমাকে প্রটেকশন দিচ্ছে।
তোমার দুই-একটি কথা আমার ভীষণ ভালো লাগেঅনিমেষ, যেগুলো তোমার আগের কবিতায় লিখেছো। ১.নারীরা সবকিছু সহ্য করলেও-প্রিয় মানুষের, ভালোবাসারমানুষের কিংবা প্রেমিকের ভাগ কাউকে দেয় না/ কিন্তু প্রিয়মানুষের কিংবা প্রেমিকের ভালোবাসা যখন ভাগ হয়ে যায়–তখন মরা নদীর মতো মরে যায় নারী। ২. বৃষ্টি এলে কিনেনেবো, সবক’টা সুখ তোমার জন্যে/ এক পৃথিবী একটাআকাশ-হবে তোমার নীল শাড়িতে। বিশ্বাস করো অনিমেষ-তোমার কবিতাগুলো পড়লে কেমন যেনো নির্ভরতা পাই। তোমাকে আরো আপন করে ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। তোমারহাত ধরলে ভরসায় বুক ভরে যায়, নির্ভরশীলতা পাই। মনেহয় খুব নিরাপদ আশ্রয়ে আছি।
সেদিন তোমার অফিসে গিয়েছিলাম একটা কাজেরবাহানায়। আসলে তোমাকে দেখার খুব ইচ্ছা করছিলো। আমার হ্যান্ড ব্যাগে কাগজ কলম ঠিকই ছিলো। কিন্তু ইচ্ছেকরেই তোমার কাছে কলম চেয়েছি। মূলত কলমের বাহানায়তোমার হাতটা একটু স্পর্শ করেছিলাম। আরেকটা বিষয় তুমিখেয়াল করোনি। তোমার টেবিলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্কএবং এক জোড়া হ্যান্ড গ্লাবস রেখে এসেছি। পৃথিবীর এইক্রান্তিকালে কোভিড-১৯ অনেকের অনেক প্রিয় মানুষদেরকেকেড়ে নিচ্ছে। আমি তোমাকে হারাতে চাই না অনিমেষ।আমার হৃৎপিন্ড জুড়ে তুমি আছো। তোমার নিরাপত্তাই আমারসমগ্র জীবনের চাওয়া। তোমার ভালো থাকাই আমার সকলপ্রার্থনা।
এই যে তুমি এতো নিখুঁতভাবে আমাকে অবহেলা করো, আমি কিন্তু একটুও মন খারাপ করি না। বরং তোমার প্রতিআমার ভালোবাসা আরো বহুগুণে বেড়ে যায়। শুনেছিভালোবাসার মানুষের সবকিছুই ভালো লাগে শুধুমাত্রঅবহেলা ছাড়া। কিন্তু তোমার অবহেলা আামাকে আরোভালোবাসার কাঙ্গাল বানিয়ে দিচ্ছে। তোমার অবহেলাকেইআমার কাছে ভালোবাসা মনে হয়। একটা কথা তুমি তোজানোই, ভালোবাসা পেলে আমি তোমার বুকের ভেতরগুটিয়ে-সুটিয়ে বসে থাকি। যেন আকাশ ছেড়ে তোমার আকাশজুড়ে। নিজেকে তখন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হয়। সেদিন তুমি বলেছিলে-“এই ক্রান্তিকালে আমি যেন খুবনিরাপদে থাকি”। তোমার এই একটি কথা আমাকে খুবআন্দোলিত করেছে অনিমেষ। এই একটি কথাই আমার বুকেরপুকুরের সকল ক্ষত কমিয়ে দিয়েছে। এই একটি কথাকেই আমিখুব যত্ন করে বুকের বাঁ পাশে লালন করে রেখেছি। আমারপ্রার্থনাজুড়ে কেবল তুমিই থাকো। জানো অনিমেষ? তোমারজন্য আমি সবসময় নিজের ভেতর অপেক্ষা সাজিয়ে রাখি।সকালে ঘুম ভাঙলে তোমার ফোন কলের অপেক্ষায় থাকি, দুপুরে স্নানশেষে ভেজা চুলের ছবি তুলে অপেক্ষায় থাকি কখনতুমি বলবে ছবি পাঠানোর জন্য। বিকেলে ছাদে গেলে আকাশদেখি, পাখি দেখি। পাশের বাসার নব দম্পতিদের দেখি। তখননিজের মাঝেও স্বপ্ন জাগে খুউব। আমরা দু’জন ঘর বাঁধবো, সংসার করবো, দু’টি দেহের মাঝে থাকবে-অভিন্ন একটিহৃদয়। সংসারে একটু আধটু অভাব অনটন থাকবে। সেটাতুমি ভালোবাসা দিয়ে পুষিয়ে দিবে।
ও হ্যাঁ। একটা কথা তোমাকে বলা হয় নি। গত সপ্তাহেআমার বান্ধবী নবনীর বাসায় গিয়েছিলাম। তার মা মারাযাওয়ায় সে খুব ডিপ্রেস্ড ফিল করছিলো। ইচ্ছে না থাকলেওযেতে হয়েছে। এর কয়দিন পর থেকে আমি কেমন যেন জ্বরজ্বর আর শ্বাসকষ্ট বোধ করছি। প্রাথমিক রিপোর্ট ভালো। তুমিটেনশন নিও না। তুমি টেনশন নিলে তোমার তো আবারহার্টবিট বেড়ে যায়।
খুঁজে পাবার একটাই পথ—হারিয়ে ফেলা। মনে রাখারএকটাই পথ—ভুলে যাওয়া। আর অবহেলা পাবার একটাইপথ —ভালোবেসে যাওয়া। যদি এ যাত্রায় আমরা বেঁচে যাইতাহলে তোমায় আমি আরো প্রাণভরে ভালোবাসবো। আমিমাস্টার্স শেষ করবো আর অন্যদিকে তোমার প্রমোশন হবে। তারপর আমরা বিয়েটা সেরে ফেলবো। তুমি আমার সিঁথিতেসিঁদূর লাগিয়ে দিবে। কি চমৎকার । ভাবতেই ভালো লাগছে।এই দিনটা একটা মেয়ের জন্য কত স্বপ্নের দিন –সেটা জানোইতো। বাসর রাতে আমার এতোদিনের সকল গল্প তোমাকেশোনাবো। কোথায় গিয়েছি, কোথায় ঘুরেছি, কী দেখেছি, কারসাথে কী কথা বলেছি? যা যা দেখেছি, দেখে দেখে চোখেরপুকুরকে শুকিয়ে ফেলেছি। সব তোমাকে দেখাবো, সব তোমাকেবলবো। তোমাকে না বললে আর কাকে বলবো বলো?নিজেকে উজাড় করে সবকিছু তোমার কাছে বলার মতো এতোস্নিগ্ধ সুন্দর আর কিছুই নেই এই পৃথিবীতে। আমরা পাহাড়, ঝর্ণা, সমুদ্রে যাবো। ঘুরবো-ফিরবো, একটু আধটু মান-অভিমান করবো। মেয়েদেরকে একটু অভিমানীই হতে হয়, তানা হলে মেয়ে মেয়ে লাগে না। আর পুরুষদেরকে একটু রাগীহতে হয়। তা না হলে পুরুষ পুরুষ লাগে না। তোমার আরোএকটা কবিতার লাইনের কথা মনে হচ্ছে অনিমেষ। “বলেছিলাম-ঝরণায় নাকি সমুদ্রে যাবে? তুমি দু’চোখে সবটুকুস্বপ্ন সাজিয়ে বলেছিলে-পাহাড়ের চূড়ায় যাবো/যেখানে উঠতেগেলে হাত ধরা যায় বেশি”। সত্যিই আমরা পাহাড়ের চূড়ায়যাবো।
জানো অনিমেষ ? আমার খুব ইচ্ছে-তোমার সকলপ্রার্থনায়, সকল চাওয়া পাওয়ায়, সুখ ও কষ্টে, বিরহ ও দহনে, হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসজুড়ে যেন আমি থাকি। তোমার সকলমৌনতাজুড়ে আমি আছি সেটা সত্যি কিন্তু মুখে তো একবারবলতে পারো যে, আমায় ভালোবাসো। কিন্তু ইনিয়ে বিনিয়ে, কথা বার্তায়, কেয়ারিং এ টিকই তো বুঝিয়ে দাও তোমারভালোবাসার গভীরতা। আর এ জন্যইতো আমাকে বিয়েওকরতে রাজি হচ্ছো। যা হোক, ইদানিং শরীরটা ভালো যাচ্ছেনা। গত পরশুদিন আবার ডাক্তার দেখিয়েছি। শরীরেরঅবস্থা ভালো না থাকায় ডাক্তার হাসপাতালে এডমিশনদিয়েছে। মনে হচ্ছে নবনীদের বাসায় যাওয়ার সময় কোনগন্ডগোল বাঁধিয়েছি। ডাক্তাররা কেবল টেস্ট, মেডিসিন, সার্জারি আর বোর্ড মিটিং নিয়ে ব্যস্ত ভীষণ। অথচ আমিজানি-তুমি আমার শ্বাসকষ্টের ইনহেলার আর বেঁচে থাকারঅক্সিজেন। তোমাকে একবার দেখলে, একবার ছুঁতে পারলে-সুস্থ্য হয়ে বেঁচে রবো অন্তহীন।
সবেমাত্র রিপোর্ট হাতে পেলাম। কোভিড-১৯ পজেটিভ। লাস্ট স্টেজ। চলে যাচ্ছি। হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক এবং হ্যান্ডগ্লাবস ঠিকমতো ব্যবহার করো। নিজের যত্ন নিও। নিরাপদেথেকো। অবশেষে তোমার হৃৎপিণ্ডে আমাকেই রেখো।
অনিমেষ….রাখবে তো?