Home » মহামারীর মাঝপথেই দেউলিয়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা?

মহামারীর মাঝপথেই দেউলিয়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা?

নভেল করোনাভাইরাসের মহামারী চলাকালীন অবস্থায়ই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এ সিদ্ধান্ত চলমান পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্যকে বড় ধরনের হুমকিতে ফেলে দিয়েছে। প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অনুদান দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে সংস্থাটির সবচেয়ে বড় দাতা। যারা কিনা প্রতি বছর চায়নার চেয়ে ১০ গুণ বেশি অর্থ প্রদান করে।

ট্রাম্পের অভিযোগ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরিস্থিতি সামলাতে ভুল করেছে এবং চীনে শুরুর দিকে কভিড-১৯-এর ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছে। পাশাপাশি সংস্থাটি চীনের বিপক্ষে কঠোর অবস্থান নিতেও ব্যর্থ হয়েছে। এখন ট্রাম্পের অর্থ বন্ধ করার এ সিদ্ধান্তের ফল কী হতে পারে?

সদস্য কারা

১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য পরিচালনা ও সমন্বয় করে আসছিল। এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মূলত সারা বিশ্বের মানুষের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতির স্লোগান নিয়ে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সভাগুলোয় নাগরিক সমাজ, ইন্ডাস্ট্রির পাশাপাশি কেবল সেই দেশগুলো অংশগ্রহণ করতে পারে যারা এর সদস্য। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ১৯৪টি দেশ।

কীভাবে এখানে অর্থায়ন করা হয়?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় অর্থায়ন আসে দুটি উৎস থেকে। প্রথমটি দেশগুলোর সদস্যপদ থেকে পাওয়া। এটি মূলত দেশগুলোর নিজস্ব পণ্য উৎপাদন এবং জনসংখ্যার আকারের ভিত্তিতে নির্ণয় করা হয়। অন্য উৎস হলো স্বেচ্ছাসেবীদের অনুদান। এটি আসে সরকার, জনহিতৈষীমূলক সংগঠন ও বেসরকারি অনুদান থেকে। যা মূলত নির্দিষ্ট কোনো প্রজেক্ট বা উদ্যোগের জন্য এসে থাকে।

৭০ বছরের বেশি সময়ের পরিক্রমায় খুব কমসংখ্যক দেশই তাদের মেম্বারশিপের অর্থ সঠিক সময়ে দিতে পেরেছে। এক পর্যায়ে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন সংস্থা থেকে নিজেদের সদস্যপদ প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। বেশ কয়েক বছর তারা সদস্যপদের নির্ধারিত ফি দিতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। নির্ধারিত ফি না দেয়ার ফলে অনেকবার দেউলিয়ার পথে ছিল সংস্থাটি। সৌভাগ্যবশত সরকারগুলো পরে ফি জমা দেয়ায় টিকে যেতে পারে তারা।

রাজনৈতিক সমালোচনা

২০০৯ সালে সংস্থাটির বিরুদ্ধে সোয়াইন ফ্লুকে অতিদ্রুত মহামারী ঘোষণার অভিযোগ আসে। ওষুধ কোম্পানিগুলোর চাপে এমনটা করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। পাঁচ বছর পর সংস্থাটিকে অভিযুক্ত করা হয় ইবোলা প্রাদুর্ভাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণায় দেরি করার জন্য।

এবার ট্রাম্পের সমালোচনার মুখে পড়েছে তারা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট অভিযোগ করে বলেন, করোনা মোকাবেলায় সংস্থাটি চীনে বিশেষজ্ঞ পাঠাতে দেরি করেছে এবং প্রাথমিক অবস্থায় চীনের অস্বচ্ছতার বিষয়টিও ঢেকে দেয়ার চেষ্টা করেছে। তবে এটা করা সংস্থাটির এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না। কোনো একটি সদস্য দেশে জোর করে সেখানকার অবস্থা জানার জন্য বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর ক্ষমতা তাদের নেই। দেশটিকেই সংস্থাটির কাছ থেকে সাহায্য চাইতে হবে। এমনকি কোনো দেশকে তথ্য জানাতেও বাধ্য করতে পারে না বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তারা কেবল অনুরোধ করতে পারে।

পাশাপাশি ট্রাম্পের অভিযোগ, এ বিষয়টিও এড়িয়ে যায় যে সংস্থাটি ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে চীনের অনুমোদন পেয়ে সেখানে দল পাঠিয়েছিল।

চীনের প্রভাব

এর আগে তাইওয়ানের সংস্থাটিতে যোগ দেয়ার ব্যাপারে বাধা প্রদান করে সমালোচিত হয়েছিল চীন। অথচ কভিড-১৯ মোকাবেলায় তাইওয়ান বেশ শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে। তবে চায়না সংস্থাটির ১৯৪টি দেশের একটি মাত্র। ট্রাম্পের সমালোচনার আরেকটি পরিহাসের দিক হচ্ছে, এই সংস্থাটিকে কয়েক দশক ধরে অন্য দেশগুলো সমালোচনা করে আসছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পক্ষপাতিত্বের জন্য।

এখন কী হবে?

মাঝপথে তহবিল বন্ধের এ ঘোষণা কার্যকর হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে। যার অর্থ সংস্থাটিকে প্রথমে বেশকিছু কর্মচারীকে ছাঁটাই করতে হবে। যাদের অনেকেই হয়তো নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে জীবন বাঁচানোর কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি এর ফলে সংস্থাটি ভ্যাকসিন গবেষণা, স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম সংগ্রহ এবং মহামারী মোকাবেলায় প্রযুক্তিগত সহায়তা ও বিশেষজ্ঞ প্রদানে কম সক্ষম হবে। এমনকি নিম্ন আয়ের দেশগুলো গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হবে। প্রচুর প্রাণও ঝরে যাবে। এছাড়া ট্রাম্পের এ ঘোষণা এও প্রমাণ করে যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখন আর নেতৃত্ব দিতে ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।

স্ক্রলডটইন

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *