‘করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে যেসব জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতা দুস্থ মানুষের খাদ্যসামগ্রী চুরি করছেন তাদের কাছে যদি মরদেহ দাফনের জন্য কাফনের কাপড়ও বরাদ্দ দেয়া হয়, তারা সেটিও চুরি করে পাঞ্জাবি বানাবেন’— এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা। সোমবার মোবাইলে আলাপকালে এমন মন্তব্য করেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক এই নেতা।
সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকার বিষয়টিকে অবহেলা করেছে। জনসাধারণকে তারা সচেতন করতে পারেনি। যে কারণে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের মহামারি ঘটেছে। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, মারা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে কমিউনিটি সংক্রমণ শুরু হয়েছে। সরকার কার্যত লকডাউন ঘোষণা করেছে। মানুষ কর্মহীন হয়েছে। মানুষের মধ্যে খাদ্য সংকট, চিকিৎসা সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিভিন্ন জায়গায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা সরকারি ত্রাণ বিতরণ করছে। ব্যক্তি উদ্যোগে বিভিন্ন পর্যায়ে ত্রাণ বিতরণ হচ্ছে, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আসছে, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনীও কিছু কিছু জায়গায় ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। এর মধ্যে বেশকিছু অনিয়ম ঘটেছে, যা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনার পূর্বাভাস দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জনসমাগম এড়ানোর জন্য সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ এই সাধারণ ছুটির অর্থ বোঝেনি, সরকার সাধারণ মানুষের ভাষা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। ছুটি পেয়ে মানুষ চলে গেছে গ্রামগঞ্জে, সেখানে সংক্রমণ হচ্ছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে আবার গার্মেন্টকর্মীদের দীর্ঘপথ হাঁটিয়ে ঢাকায় আনা হয়েছে। আবার তাদের চলে যেতে বলা হয়েছে। তাদের ন্যায্য মজুরি দেয়া হচ্ছে না। তারা সড়কে বিক্ষাভ দেখাচ্ছে। কর্মহীন শ্রমিকদের ঘরে খাবার নেই, নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত মানুষের ঘরে খাবার নেই, মানুষ বাসাভাড়া দিতে পারছে না। বাড়ির মালিকরা ভাড়াটিয়াদের সাথে অমানবিক আচরণ করছেন। বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে যে ত্রাণ তৎপরতা চলছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এরই মধ্যে কিছু জনপ্রতিনিধি ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা, কিছু সরকারি ডিলার বরখাস্ত হয়েছে, আটক হয়েছে ত্রাণসামগ্রী চুরির দায়ে।’
‘জাতীয় দুর্যোগের এমন সময়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের সবাই হয়তো এখনও আটক হয়নি। কেবল যারা ধরা পড়েছে তারাই আটক হয়েছে। আমরা কি বিশ্বাস করতে পারি, এর বাইরেও আর চালচোর বা তেলচোর নেই? আমি বিশ্বাস করি না। তাই এদিকে আরও নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন। এসব কুলাঙ্গার রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে যদি মানুষ দাফনের জন্য কাফনের কাপড় সরকারের তহবিল থেকে বরাদ্দ দেয়া হয় তাহলে সেখান থেকেও এরা কাফনের কাপড় চুরি করে নিজেদের পাঞ্জাবি বানাবে। অনেক জায়গা থেকে খবর পাচ্ছি, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এ দুর্যোগকালীন মুহূর্তে প্রকাশ্যেই মানুষকে অত্যাচার-নির্যাতন করছে। যার একটা জ্বলন্ত ও ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত টাঙ্গাইলের কাউন্সিলর আমিন। এসব যখন গণমাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে সংবাদ মাধ্যমকে হয়রানি করা হচ্ছে। ঠাকুরগাঁওয়ে জাগো নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম ও বিডি নিউজ২৪ ডটকমের সম্পাদকের নামে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা মামলা করেছে। সাভারে উপজেলা চেয়ারম্যান এক সংবাদকর্মীকে শাসিয়েছে।
এহসানুল হুদা আরও বলেন, বৈশ্বিক এই দুর্যোগপরিস্থিতিতে সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সর্বদলীয় জাতীয় কমিটি গঠন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। ৬৪টি জেলায় সচিবদের অধীনে কমিটি করা হয়েছে। এতে প্রশ্ন জাগে, দেশ কারা চালাচ্ছেন। সেনাবাহিনীকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণের দায়িত্ব দিতে হবে। করোনা প্রতিরোধের এই যুদ্ধে আমাদের সামনের সারির যোদ্ধা চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, সংবাদমাধ্যমের কর্মী, ব্যাংকারসহ অন্যান্য জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যারা জড়িত আছেন তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, এছাড়া জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিক, আমলা বা অন্যান্য যেকোনো পর্যায় থেকে যদি কেউ অমানবিক হিসেবে চিহ্নিত হয় তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। দোষী জনপ্রতিনিধি বা রাজনীতিকদের কোনো রাজনৈতিক দলে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া যাবে না, তাদের আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করতে হবে। গণমাধ্যমে খবর আসছে স্বাস্থ্যকর্মী, সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বাড়ির মালিক, কোথাও কোথাও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বাধা দিচ্ছেন, হেনস্তা করছেন। খোদ রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দ্বারা সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনাও ঘটছে। এসব বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ নেয়ার বিকল্প নেই। পাশাপাশি মাস্ক-দুর্নীতির নিরপেক্ষ তদন্ত দরকার এবং জরুরি ভিত্ততে মুনাফালোভী ব্যবসায়ী স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অপসারণ দরকার।
‘আমি আবারও সংশ্লিষ্টদের পর্যাপ্ত সঠিক মানের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম এবং সাধারণ মানুষের খাদ্য নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি’— বলেন সৈয়দ এহসানুল হুদা। সূত্রঃজাগো
নির্বাহী সম্পাদক