বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন ধরে দরপতনের ফলে অনেক শেয়ারের মূল্য প্রকৃত দামের নিচে নেমে গেছে। এ ক্ষেত্রে মৌল ভিত্তির কোম্পানির শেয়ারের মূল্য অনেক কমেছে। ফলে বাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকি কমেছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, গত এক বছরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৯২টি কোম্পানির শেয়ারদর অভিহিত মূল্যের নিচে নেমে গেছে। ফলে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই) গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমেছে। যদিও গত ১৪ বছরে ডিএসইতে কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা বেড়েছে তিনগুণের বেশি।
প্রসঙ্গত, কোনো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করার পর সেখান থেকে বিনিয়োগের টাকা ফেরত পেতে আপনার কত বছর লাগবে সেই হিসাবকে পিই রেশিও বলে। অর্থাৎ শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত (পিই)। যে শেয়ারের পিই রেশিও যত কম হয়, সেই শেয়ারে বিনিয়োগে ঝুঁকি তত কম।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত ২৫ মার্চ ২০২০ ডিএসইতে পিই রেশিও নেমে দাঁড়িয়েছে ১০.৫৮ পয়েন্টে। এর আগে ২০০৬ সালের জুন মাসে ডিএসইর পিই রেশিও ছিল সর্বনি¤œ। ২০০৬ সালের জুন মাসে পিই রেশিও ছিল ১০.৬৬ পয়েন্ট। এর প্রায় ৪ বছর পর ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পিই রেকর্ড সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে যায়।
২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পিই রেশিও উঠে যায় ৩০.৫০-তে। তবে সেই বছরই পুঁজিবাজারে বড় ধস দেখা যায়। বড় ধসের কারণে একই বছর ডিএসইর পিই অর্ধেকের নিচে নেমে যায়। ডিএসইর তথ্য অনুসারে, ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারে মাসে ডিএসইর পিই রেশিও ৩০.৫০-তে উঠলেও অব্যাহত পতনে ২২ মাসের মাথায় ২০১১ সালের ডিসেম্বরে পিই এসে দাঁড়ায় ১৩.৬৮-তে।
এরপর ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ১২.০৭, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ১৫.০৭, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ১৭.৭৭, ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ১৪.২৩, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ১৪.২৯, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ১৭.২৮, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ১৫.০৯ এবং ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে পিই ছিল ১১.৫৩। আর সর্বশেষ ২০২০ সালের মার্চ মাসে ডিএসইতে পিই রেশিও নেমে দাঁড়ায় ১০.৫৮-তে। যা গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
ডিএসইতে ২০২০ সালে মার্চ মাসে খাতভিত্তিক কোম্পানিতে পিই কমে দাঁড়িয়েছে ব্যাংক খাত ৬.৫২, টেলিকমিউনিকেশন ৯.৫২, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ৯.৬০, ইন্স্যুরেন্স ১০.৬০, সেবা ও আবাসন ১০.৬৭, আইটি ১৩.৯৬, টেক্সটাইল ১৪.২২, প্রকৌশল ১৪.৪০, ওষুধ ও রসায়ন ১৫.১০, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক ১৭.০৪, ট্যানারি ১৮.৭৫, বিবিধ ২১.৪৪, সিরামিক ২২.৪৩, সিমেন্ট ২৯.৮০, ভ্রমণ ও অবকাশ ৩১.৭১, পাট ৩২.৯১, পেপার ও প্রিন্টিং ৪১.১৪ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৪৪.১৩।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের পুঁজিবাজারে গত এক বছরে শেয়ারের পিই কমেছে অব্যাহত দর কমার কারণে।
গত বছর মার্চ মাস থেকে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত ১২ মাসে ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ১৫২৫ পয়েন্ট। এতে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১০১৫ বিলিয়ন টাকা।
পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, যে শেয়ারের পিই রেশিও কম, সেই শেয়ারে বিনিয়োগ ঝুঁকি তত কম। আমাদের শেয়ারবাজারে পিই রেশিও অনেক কমে বিনিয়োগ ঝুঁকি কমেছে। তবে আগামীতে দেশের অর্থনীতির ওপর নির্ভর করবে। অর্থনীতি খারাপ হলে পিই রেশিও আরও কমার আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি বলেন, করোনার প্রভাবে দেশের শেয়ারবাজার বন্ধ রয়েছে। শেয়ারবাজার খুলে দেওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, লকডাউনের ভার অর্থনীতি বহন করতে পারবে না। এ জন্য লকডাউনের মধ্যে অর্থনীতি চালু রাখতে হবে।