শুদ্ধবার্তাটোয়েন্টিফোর: রাজধানীতে রোববার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে তীব্র কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। এমনিতেই গোধূলির আলোছায়া ছিল প্রকৃতিতে। সেই সঙ্গে আকাশ কালো করে আসা ঘন মেঘ মুহূর্তেই চারদিকের অন্ধকার আরও তীব্র করে দেয়। যেন রাত নেমে আসে। দমকা হওয়ার সঙ্গে ছিল তীব্র ধূলিঝড়। এরপর বৃষ্টি। প্রায় ২০ মিনিট ছিল এই পরিস্থিতি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কালবৈশাখীর এমন আকস্মিক ছোবলে ছোটখাটো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কোথাও আধাপাকা ঘরের টিনের চালা উড়ে গেছে। কোথাও সাইনবোর্ড ভেঙে পড়েছে। অফিস ফেরত মানুষের বেশির ভাগই এ সময় ছিলেন রাস্তায়। কেউ গাড়িতে, কেউবা ফুটপাতে। তীব্র বাতাস ফুটপাতের অনেকের ছাতা উড়িয়ে নেয়। গাড়িতে থাকা যাত্রীদের মধ্যেও ঝড় আতঙ্ক তৈরি করে। শুধু রাজধানীই নয়, কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানেই কালবৈশাখী আঘাত হানছে। ঝড়ের সময় বয়ে যাচ্ছে ৪৫ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া। বাতাসে গাছপালা-ঘরবাড়ি ভেঙে নেয়ার খবর পাওয়া গেছে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা থেকে। কোথাও গাছপালা গোড়াসহ উপড়ে ফেলছে বৈশাখের ঝড়। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত এ ধরনের ঝড় বয়ে যাওয়াটা বাংলাদেশে স্বাভাবিক ঘটনা। কেননা এ সময়ে সূর্য প্রচণ্ড উষ্ণতা ছড়ায়। এতে গরম হয়ে যায় ভূপৃষ্ঠ। এ সময়টায় বাংলাদেশে তিন দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়। একটি আসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ-বিহারের দিক থেকে, যা আসে আরব সাগর থেকে। পশ্চিমা সেই শুষ্ক বা গরম বাতাসের সঙ্গে দক্ষিণ দিক থেকে আসা বঙ্গোপসাগরের শীতল বাতাস মিশে পশ্চিম আকাশে জমে কালো মেঘ। ওই কালো মেঘ থেকে বয়ে যায় কালবৈশাখী। এছাড়া ভারতের পূর্বাঞ্চল তথা মেঘালয়-আসামের দিক থেকেও একটি বায়ু আসে। দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ধাবিত ওই বায়ু উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে প্রবাহিত হয়ে ঢাকা থেকে বরিশাল অঞ্চল পর্যন্ত যায়। এটিও বঙ্গোপসাগরের দিক থেকে আসা বায়ুর সঙ্গে মেশে। এই তিন ধরনের বায়ু দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া রূপান্তর হয়। এ সময় আকাশে তৈরি মেঘ বাতাসের তোড়ে ব্যাপক ছোটাছুটি করে। তখন বিদ্যুৎ চমকায়। কখনো বজ্রপাত হয়। শিলাবৃষ্টিও হয়। তবে কালবৈশাখীর স্থায়িত্ব সাধারণত কম। আধাঘণ্টা থেকে পৌনে এক ঘণ্টা সময় বয়ে যায় দমকা হাওয়া। সঙ্গে থাকে কিছু বৃষ্টি। এই ঝড় প্রকৃতিকে লণ্ডভণ্ড করে যায়। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের (বিএমডি) আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, কালবৈশাখী সাধারণত দুই সময়ে হয়ে থাকে। বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮-১০টা পর্যন্ত। ভোররাত ৪টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্তও কালবৈশাখী বয়ে যায়। এ কারণে এই সময়ে সড়ক ও নদীপথে যান চলাচলে সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। আর কালবৈশাখীর প্রভাবে যেহেতু বজ্রপাত হয়ে থাকে, তাই এ ব্যাপারেও সতর্কতা দরকার। নইলে বিপদগ্রস্ত হতে হবে।