বৃটিশ আমলের ১৮৯৭ সালের ইপিডেমিক ডিজিজ অ্যাক্ট পরিবর্তন করা হয় মাত্র দেড় বছরের কম সময় আগে। ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর ‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮’ পাস হয়। এই আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য ছিল- জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা মোকাবিলা ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি হ্রাসকরণের লক্ষ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল। এই আইনের ক্ষমতা বলেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে পুরো দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
২০১৮ সালে আইনটি প্রণয়নের সময় রোগতত্ত্ববিদ, স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ কিংবা আইনপ্রণেতারা ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করতে পারেননি এ আইনের ক্ষমতাবলে এত তাড়াতাড়ি সারাদেশকে কোনো একটি রোগের সংক্রমণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করা হবে।
কখনও কল্পনা করতে পারেননি এমনভাবে কোনো রোগ সংক্রমিত হয়ে ৬০ জনের প্রাণ কেড়ে নিতে পারে। যেমনটা কল্পনা করতে পারেনি এদেশে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ মুখে মাস্ক পরে ঘুরে বেড়াবে। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে সাবান কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুতে হবে। রাস্তাঘাটে এমনকি ঘরের ভেতরেও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল ও অবস্থান করতে হবে।
কিন্তু বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ায় এ আইনের ক্ষমতা বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পুরো দেশকে করেনা সংক্রমণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছেন। এ আইনের বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বা তার মনোনীত প্রতিনিধি তার পক্ষে করোনা সংক্রমণ প্র্রতিরোধে যেকোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা বা অধিগ্রহণ করতে পারবেন। আইনের বিধি অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদেরকে সর্বাত্মক সহায়তা করবেন।
পাঠকদের অনেকের মনেই হয়তো এ আইনটিতে কী রয়েছে তা জানার আগ্রহ থাকতে পারে। তাই পাঠকের উদ্দেশে আইনটি তুলে ধরা হলো।
আইনে যা বলা হয়েছে :
সংক্রমিত এলাকা ঘোষণা, প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি।
১১ । (১) মহাপরিচালক সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে আদেশ দ্বারা নিম্নবর্ণিত কোনাে এলাকাকে সংক্রমিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করিতে পারিবেন।
(ক) বাংলাদেশের স্থানীয় কোনো এলাকা বা অঞ্চল যাহা কোনো সংক্রামক ব্যাধি দ্বারা আক্রান্ত হইয়াছে বা আক্রান্ত হইয়া থাকিতে পারে মর্মে যুক্তিসঙ্গতভাবে সন্দেহ হইতেছে।
(খ) সংক্রমণের বিস্তার নির্মূল বা সীমিত করিবার জন্য সংক্রমিত ব্যক্তি কর্তৃক ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, গৃহ, আঙিনা, বাসস্থান বা যানবাহন।
(২) মহাপরিচালক বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারীর নিকট যদি প্রতীয়মান হয় যে, যথাযথভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়া তাৎক্ষণিকভাবে কোনাে সংক্রামক রােগ সীমিত বা নির্মূল সম্ভব নহে, তাহা হইলে তিনি সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে বা সংক্রমিত স্থানে অন্য কোনাে ব্যক্তির প্রবেশ নিষিদ্ধ, সীমিত বা নিয়ন্ত্রণ করিতে পারিবেন।
(৩) এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকালে, অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়াদি বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত এক আদেশ জারি হয়। ওই আদেশে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের নিকট প্রতীয়মান হয়েছে যে, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস (কোবিড-১৯) মহামারি আকারে বিস্তারলাভ করে লাখ লাখ লোক আক্রান্ত হয়েছে ও লক্ষাধিক লোক মৃত্যুবরণ করেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। হাঁচি-কাশি ও মেলামেশার কারণে এ রোগের বিস্তার ঘটে। এ পর্যন্ত বিশ্বে এ রোগের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি।
ওই ঘোষণায় আরও বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী এ রোগের একমাত্র প্রতিষেধক হলো পরস্পর থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থান করা। যেহেতু জনসাধারণের একে অপরের সঙ্গে মেলামেশা নিষিদ্ধ করা ছাড়া সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব নয় এবং যেহেতু বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এ রোগের সংক্রমণ ঘটেছে। সেহেতু সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন ২০১৮ (২০১৮ সালের ৬১ নম্বর) এর ১১ (১) ধারার ক্ষমতাবলে এ আদেশটি জারি হয়।