Home » মাদক সাম্রাজ্যের দুই বন্ধু অবশেষে পুলিশের জালে

মাদক সাম্রাজ্যের দুই বন্ধু অবশেষে পুলিশের জালে

শাহীন মাহমুদ রাসেল :এলাকাবাসী, পঞ্চায়েত কমিটি, ওয়ার্ড মেম্বার, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর-সবাই জানে, কক্সবাজার সদরের খরুলিয়া এলাকার মাদকের মূল ব্যবসায়ী কারা। থানায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলাও আছে। প্রশাসনের কাছে আছে তাঁদের বাসাবাড়ির ঠিকানাও। কিন্তু তাঁরা আছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে গতকাল (১৫ এপ্রিল) রাতে তাদের আটক করেছে বলে একাধিক সুত্র জানিয়েছেন।

স্থানীরা বলছে, সদরের বৃহত্তর খরুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় মাদকের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন জাফর সাদেক ওরফে রানা ও তার বন্ধু জামাল ওরফে ইয়াবা মৌলই। তাঁরা টেকনাফের বিভিন্ন জায়গা থেকে ইয়াবা ও অস্ত্র এলাকায় আনেন। বিক্রি করেন তাঁদের সহায়তাকারীরা। এর মধ্যে রানা এলাকায় ‘ইয়াবা সম্রাট’ হিসেবে পরিচিত। ইয়াবা ও মদের ব্যবসাও তাঁর হাতে। আর অস্ত্র ও ফেন্সিডিল ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন জামাল।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, তথ্য থাকলেও কৌশল ও জনবলের দিক দিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পেরে উঠছেন না তাঁরা। আর পুলিশ বলছে, মাদকের এই হোতাদের ধরতে তাদের তৎপরতা অব্যাহত আছে। কিন্তু সঠিক তথ্য-উপাত্ত না থাকার কারণে তাদের ধরতে অনেকটা কঠিন হয়ে পেড়েছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বৃহত্তর খরুলিয়া এলাকার মাদক ব্যবসার হোতা হিসেবে রানা ও জামান জামালের নাম উল্লেখ করেন। তাদের তালিকায় আরও যাঁদের নাম বলেন, তাঁদের মধ্যে আছেন রিফাত ও সেচ্চাসেবকলীগ নেতা জুয়েল। এরা জামাল ও রানার সহায়তাকারী হিসেবে কাজ করেন।

এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, রানার বাসা খরুলিয়া সিকদার পাড়ায়। দীর্ঘদিন থেকে তিনি এই বাড়িতেই গোপনে ইয়াবার ব্যবসা করতেন। পরে ব্যবসার তথ্য ফাঁস হয়ে গেলে পরিবারসহ বাড়ি ছেড়ে চলে যান তিনি। এখন তিনি এলাকায় এসে সহকারীদের হাতে ইয়াবা তুলে দিয়ে চলে যান। সর্বশেষ গত কয়েকমাস থেকে তাঁকে এলাকায় দেখা যায় বলে জানান সিকদার পাড়ার কয়েকজন বাসিন্দা।

আরেক মাদক ব্যবসায়ী জামাল থাকেন কলাতলীর জমজম হ্যচারী সংলগ্ন বাসায়। নিজ বাড়িতেই ২০১২ সাল থেকে মাদকের ব্যবসা করেন তিনি। এই এলাকার অস্ত্র ও ফেনসিডিলের ব্যবসা তাঁর নিয়ন্ত্রণে। স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে এলাকার মাদকের প্রধান ব্যবসায়ী বলে তাকে উল্লেখ করেন তারা।

বিভিন্ন সূত্রে জামালের একটি মুঠোফোন নম্বর পাওয়া গেছে। সেই নম্বরে বুধবার বিকেলে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। রানার কোনো যোগাযোগের নম্বর পাওয়া যায়নি।

গত মঙ্গলবার ও গতকাল বুধবার সিকদারপাড়া এলাকায় গেলে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, মাদক ব্যবসায়ী আর স্থানীয় ও বহিরাগত ক্রেতাদের উৎপাতে অতিষ্ঠ তাঁরা। তাঁদের প্রশ্ন, ব্যবসায়ীরা চিহ্নিত হওয়ার পরও কেন তারা ধরা পড়ছে না। প্রশাসন সবকিছু জানলেও এলাকায় কীভাবে মাদকের বিস্তার ঘটছে?

বাসিন্দাদের অভিযোগ, আগে গোপনে বিক্রি হলেও দুই বছর ধরে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হচ্ছে এলাকার সিকদার পাড়া, ভুতপাড়া, নয়াপাড়া, কোনার পাড়া পূর্ব খরুলিয়া প্রথমিক বিদ্যালয়ের সামনে। স্থানীয় ক্রেতার পাশাপাশি এসব জায়গায় মাদক কিনতে আসেন বহিরাগতরাও। এরা রাস্তা ও গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে ইভ টিজিংও করে স্কুলগামীদের।

সিকদার পাড়া মসজিদের সামনে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাসিন্দা বললেন, মাদকের বিস্তারের কারণে উঠতি বয়সী ছেলেদের নিয়ে বেশি চিন্তায় থাকতে হয়। ব্যবসায়ীদের টার্গেট তো তরুণরাই।

আরেক ব্যক্তি বলেন, কারা ব্যবসা করে সেটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু কিছু বলতে নাই। বললেই আমরা তাঁদের টার্গেট হয়ে যাবো। তখন দেখা যাবে, আমাদের উপর উৎপাত শুরু হয়া যাবে।

পূর্ব খরুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের গলির এক দোকানি বলেন, যারা মাদক সেবন করে, তাদের অত্যাচারই বেশি। টাকার জন্য এরা এলাকায় ছিনতাই, বাসাবাড়িতে এমনকি মসজিদের দান বাক্সের টাকা পর্যন্তও চুরি করে।

ঝিলংজা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান বলেন, পুরো এলাকাটাই খারাপ হয়ে গেছে। মাদকের বিস্তার অনেক বেশি। সিকাদর পাড়া পঞ্চায়েত কমিটির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মাদকসেবীদের অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। এ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পঞ্চায়েতের সদস্যরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সদর থানা পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মাসুম খান আটকের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তাদেরকে মাদক মামলার পালাতক আসামী হিসেবে আটক করা হয়েছে। অস্ত্র থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরাও লোকের মুখে শুনেছি তাদের কাছে অস্ত্র আছে, তবে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি আরোও বলেন, তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, তারা পুরনো রোহিঙ্গা তাই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সাথে তাদের যোগাযোগটা ভাল। সেভাবেই তারা মাদক ব্যবসা সচল রেখেছে বলে ধারনা করছি। তবে পুরো বিষয়টা খতিয়ে দেখছেন বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *