প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ত্রাণ বিতরণে কোনও ধরনের অনিয়ম সহ্য করা হবে না। ত্রাণের অপব্যবহার এটা আমরা বরদাস্ত করবো না। এই অপকর্ম করলে তাদের বিরুদ্ধে দলমত বিবেচনা না করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সেটা আমার দলেরই হোক বা অন্য দলেরই হোক, আমরা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বুধবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে অনুদান গ্রহণকালে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ত্রাণ দেওয়া নিয়ে কোনও সমস্যা হলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। যেই এর সঙ্গে জড়িত সে যে দলেরই হোক, তাদের বিরুদ্ধে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি, ব্যবস্থা নেবো। কারণ গরিব মানুষের জন্য আমরা যে সহায়তা দেবো কেউ এর অপব্যবহার করবে, এটা আমরা বরদাস্ত করবো না। সেটা আমার দলেরই হোক বা অন্য দলেরই হোক, কেউ ছাড় পাবে না। কয়েকটা জায়গায় এ সমস্যা পেয়েছি, তা খুব বেশি না। আমরা যদি তুলনা করি আমাদের প্রায় ৬৮ হাজারের মতো নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। চার হাজারের ওপরে ইউনিয়ন, এরপর উপজেলা রয়েছে। সব হিসাব করে দেখা গেলো যে হয়তো ৫/৭ জায়গায় সমস্যা দেখা দিয়েছে।’
কথা না বলে মানুষের পাশে দাঁড়ান
একটা শ্রেণি এই দুর্যোগকালে মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে শুধু সরকারের সমালোচনা করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘অনেকে অনেক কথা বলে বেড়াচ্ছেন। অনেক দল-মত, সুশীল সমাজ বা অনেকেই। তারা কিন্তু মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসছে না। সমালোচনা করতেই ব্যস্ত। ত্রাণ বিতরণে একটু এদিক-ওদিক হলেই তারা চিৎকার করে যাচ্ছে। তারা কিন্তু একটা মানুষকেও একটি পয়সা দিয়েও সাহায্য করছে না। মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে না। শুধু তাদের কথাটা বিক্রি করেই যাচ্ছে। এ ধরনের লোক থাকবেই, সব সমাজেই থাকে। তারা কথা বেচেই যাবে এটাই তাদের প্রফেশন। এটাই তারা করে যাচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এত কথা না বলে কয়েকটা মানুষকে সাহায্য করেন। এই দুঃখের সময়ে মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। মানুষকে নিজে কতটুকু দিলেন সে হিসাবটা করুন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাধারণ মানুষকে যেমন বিনামূল্যে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি, তেমনি ১০ টাকা কিলো মূল্যে ওএমএসের মাধ্যমে চাল সরবরাহের ব্যবস্থা করেছি। যারা তালিকার বাইরে রয়েছে, তাদের জন্য আমরা কার্ড তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। প্রতিটি মানুষ যেন সহায়তাটা পায়, সেটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। যাতে প্রত্যেকের ঘরে এই ত্রাণ সহযোগিতাটা পৌঁছে যায়।’
রাতে রাতে বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কেউ যাতে করে ভিড় না করে। একসঙ্গে জমা না হয়। নতুন করে কেউ যাতে সংক্রমিত না হয়, সেদিকে লক্ষ রেখে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’ ত্রাণ সহযোগিতায় এগিয়ে আসা ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকে আন্তরিক ধন্যবাদ দেন প্রধানমন্ত্রী।
ভিড় করে ত্রাণ বিতরণ করবেন না
বিচ্ছিন্নভাবে জনসমাগম করে ত্রাণ বিতরণ না করে প্রশাসনের মাধ্যমে সমন্বিতভাবে ত্রাণ বিতরণ করার পরামর্শ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এক জায়গায় জড়ো হওয়া বা ভিড় করে ত্রাণ বিতরণ করবেন না। তাতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে। যারা সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন, তারা সরকার, প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় ত্রাণটা বিতরণ করেন। যাতে লোকসমাগম না হয় সেদিকে লক্ষ রাখবেন। প্রত্যেকটি এলাকায় কমিটি করে দিযেছি, স্বেচ্ছাসেবকরা রয়েছে। তাদের মাধ্যমে ত্রাণটা বিতরণ করলে সবাই পাবে। কেউ বাদ যাবে না।’
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘দুঃসময় একদিন কেটে যাবে এবং বাংলাদেশ আবারও এগিয়ে যাবে। এই বাংলাদেশ জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবেই ইনশাল্লাহ আমরা গড়ে তুলবো।’
সবাইকে সচেতন থাকা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা এবং স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে, মানুষকে সুরক্ষিত করতে হবে, পরিবারকে সুরক্ষিত করতে হবে। সে কারণে আহ্বান জানিয়েছি পরিবার নিয়ে একসঙ্গে থাকুন সেটা ঠিক আছে। কিন্তু বাইরের লোকের সঙ্গে মিশবেন না।’
এদিন ৩৩ ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অনুদান হিসেবে নগদ অর্থ ও পিপিই প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এসব অনুদান গ্রহণ করেন। এ সময় ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী সংযুক্ত ছিলেন।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন