Home » করোনার উপসর্গ নিয়ে রবিবার সারাদেশে আরো ১৫ জনের মৃত্যু

করোনার উপসর্গ নিয়ে রবিবার সারাদেশে আরো ১৫ জনের মৃত্যু

দেশে করোনো ভাইরাসে আক্রান্তের উপসর্গ নিয়ে আরো ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার রাত পর্যন্ত তাদের মৃত্যু হয়। তাদের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনার উপসর্গ নিয়ে ১১১ জন মারা গেল। অফিস, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর:

মতলব উত্তর (চাঁদপুর) : নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা মো. ফয়সাল (৪১) নামের এক ব্যক্তি করোনা ভাইরাস উপসর্গ নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে মারা গেছেন। মৃত্যুর পর তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের কামরাঙ্গা গ্রামে চিকিত্সক ও প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীদের উপস্থিতিতে তার দাফন সম্পন্ন হয়। গত ২৬ মার্চ ফয়সাল নারায়ণগঞ্জে সর্দি, জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত হন। তিনি নারায়ণগঞ্জে এসিআই কোম্পানির উত্পাদন কারখানায় কর্মরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে মতলব উত্তর উপজেলায়।

কাশিয়ানী (গোপালগঞ্জ) : উপজেলার বুথপাশা গ্রামে করোনার উপসর্গ নিয়ে ছানিয়া (২০) নামে এক গৃহবধূ মারা গেছেন। তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন কাশিয়ানী উপজেলার ইউএনও মো. সাব্বির হোসেন। তিনি জানান, কাশিয়ানী উপজেলার বুথপাশা গ্রামের কুটি মিয়ার স্ত্রী ছানিয়া বেশ কয়েক দিন ধরে জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন।

বরগুনা (উত্তর) : করোনা উপসর্গ নিয়ে এক ওষুধ ব্যবসায়ী (৬০) শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় নিজ বাড়িতে মারা যান। গত পাঁচ দিন ধরে তিনি জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। তিনি বামনা উপজেলার রামনা ইউনিয়নের গোলাঘাটা গ্রামের বাসিন্দা। এদিকে করোনায় মারা যাওয়া জি এম দেলওয়ার হোসেনের সংসপর্শে আসায় ৩৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তার সংস্পর্শে আসা আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শংকর প্রসাদ অধিকারী, মেডিক্যাল কর্মকর্তা ইমদাদুল হক চৌধুরী এবং চিকিত্সক তানজিরুল ইসলামসহ হাসপাতালের ক্যাশিয়ার শহিদুল ইসলাম হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। করোনা ভাইরাসে উপসর্গ থাকায় তাবলিগ জামাতের এক ব্যক্তির সংস্পর্শে যারা ছিলেন তাদেরকেও শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) : নাগেশ্বরীতে করোনা উপসর্গ নিয়ে ভিতরবন্দ ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে ইচ্ছু মিয়া নামের এক জন মারা গেছেন। মৃত ব্যক্তিসহ পরিবারের আরো ৩ সদস্যের নমুনা সংগ্রহ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসন। ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার আমিনুল ইসলাম বাচ্চু জানান, মৃত ইচ্ছুর ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান ১১ দিন আগে গাজীপুর থেকে এসেছে। তার মধ্যে করোনার কোনো লক্ষণ ছিল না। এর মধ্যে গত সাত-আট দিন ধরে জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগে গত শনিবার সকাল ১১টায় মারা যান ইচ্ছু মিয়া।

জীবননগর (চুয়াডাঙ্গা) : উপজেলার হাসাদাহ পনরসতি গ্রামে জামাতার বাড়ি বেড়াতে এসে করোনার লক্ষণ নিয়ে রেহেজান বেগমের (৮০) মৃত্যৃ হয়েছে। মৃতের শরীর হতে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকা আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় খয়েরহুদা গ্রামের পাঁচ বাড়ি ‘লকডাউন’ করা হয়েছে। পুলিশ পাহারা বসিয়েছে ঐ পাঁচ বাড়িতে।

কালিগঞ্জ জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে এক জন (৫০) মারা গেছে। করোনা সন্দেহে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তার বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম জানান, মৃত ইসরাইল লস্করের বাড়ি কালীগঞ্জ উপজেলার খাঞ্জাপুর গ্রামে। এদিকে শনিবার বিকালে করোনা উপসর্গ নিয়ে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে সত্তরোর্ধ্ব এক বৃদ্ধা মারা গেছেন। তার বাড়ি লকডাউন করেছে প্রশাসন।

কুষ্টিয়া : করোনা উপসর্গে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি এক নারীর (৪৩) মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি জেলার মিরপুর উপজেলায়।

হাসপাতালের আরএমও ডাক্তার তাপস কুমার সরকার জানান, গত ১০ এপ্রিল শুক্রবার সর্দি, কাশি, জ্বরসহ করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি হন। এরপর শনিবার তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। তবে এখনো পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া যায়নি বলে হাসপাতালের চিকিত্সকরা জানান।

রাজশাহী : করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মৃত শ্রী কৃষ্ণের (৩৫) বাড়ি নওগাঁর মান্দা উপজেলার পলাশ বাড়ি গ্রামে।

গলাচিপা (পটুয়াখালী) : গলাচিপার চিকনিকান্দি ইউনিয়নের পানখালী গ্রামে সামসুল হকের স্ত্রী রাহিমা বেগমের (৬৫) মৃত্যুতে করোনা প্রটোকল মেনে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। ঢাকা থেকে শনিবার সন্ধ্যায় অ্যাম্বুলেন্সে বাড়িতে আসার পথে বরিশাল-পটুয়াখালী সড়কে তার মৃত্যু হয়। মৃত রাহিমার পুত্রবধূ ও নাতিকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

টেকেরহাট (মাদারীপুর) : মাদারীপুরের রাজৈরে করোনা উপসর্গ নিয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুরে রাজৈর হাসপাতালে আনার পর তার মৃত্যু হয় । তিনি জ্বর, সর্দি ও কাশি নিয়ে হাসপাতালে চিকিত্সা নিতে আসেন।

সাভারে জ্বর, সর্দি ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এক কিশোরের (১৪) মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় ঐ কিশোরের বসবাসের বাড়িটি লকডাউন করা হয়েছে। গতকাল সকালে পৌর এলাকার ছায়াবীথিতে অবস্থিত বাসায় ঐ কিশোরের মৃত্যু হয়। এদিকে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ায় এলাকার লোকজন ঘর থেকে লাশ বের করতে বাধা দিলে স্থানীয় প্রশাসন স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় লাশটি দাফনের ব্যবস্থা করে বাড়িটি লকডাউন করে দিয়েছে।

কেরানীগঞ্জ : ঢাকার কেরানীগঞ্জে আমবাগিচা এলাকার বাসিন্দা সুলতান মিয়া (৬৫) জ্বর ও শাসকষ্ট নিয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালে গতকাল বিকালে মারা গেছে। চিকিত্সকের ধারণা—তিনি করোনার উপসর্গে মারা গেছেন।

নারায়ণগঞ্জ : করোনার উপসর্গ নিয়ে শহরের টানবাজার ও চাষাঢ়া এলাকায় দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গত শনিবার দিনগত রাত ৩টার দিকে শহরের টানবাজার এলাকার সুজন সাহা এবং গতকাল রবিবার সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় চাষাঢ়া বাগে জান্নাত মহল্লার বাসিন্দা কালিপদ সাহা মারা যান।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গার্মেন্ট কর্মকর্তা সুজন সাহা শহরের টানবাজার এলাকার সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা খোকন ঘোষালের ভবনের ছয়তলার ফ্ল্যাটে থাকতেন। তার বাবার নাম শংকর সাহা। তিনি গত তিন-চার দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। গত শনিবার রাতে তাকে নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে অন্যান্য উপসর্গ না থাকায় তাকে বাসায় নিয়ে যেতে বলা হয়। পরে শনিবার দিনগত রাত ১টার দিকে তার শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে রাত ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

অপরদিকে শহরের চাষাঢ়া শহিদ জিয়া হল মার্কেটের সাবিত্রী ফার্মেসির মালিক কালিপদ সাহা কয়েক দিন ধরেই জ্বর ঠান্ডায় ভুগছিলেন। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে তিনি ফুসফুসের সমস্যায়ও ভুগছিলেন। তিনি চাষাঢ়া বাগে জান্নাত মহল্লার বাবুল পোদ্দারের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। রবিবার সকালে তাকে অসুস্থ অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তিনি মারা যান। স্থানীয়রা জানান, মৃত কালিপদ সাহা করোনায় আক্রান্ত কিনা সেটা রিপোর্ট আসার পরে জানা যাবে।

ইত্তেফাক

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *