সিলেটে ভয়াল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে গতকাল (১১ এপ্রিল- শনিবার) পুরো সিলেট জেলাকে ‘লকডাউন’ করতে বাধ্য হয় জেলা প্রশাসন। কিন্তু কিছুতেই ‘লকডাউন’ পরিস্থিতি বিরাজ করছে না সিলেটে। আজ রবিবার (১২ এপ্রিল) সিলেট নগর ও শহরতলির রাস্তাগুলোতে প্রয়োজন ছাড়াও অনেক যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে।
আজ নগরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে কয়েকটি ভয়াবহ দৃশ্য দেখা গেছে। নগরের রিকাবীবাজারস্থ কাঁচাবাজারে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখেই ক্রেতা-বিক্রেতারা দেদারছে মালামাল কেনা-বেচা করছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবিরত সমাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদান করা হলেও সেদিকে যেন ভ্রুক্ষেপই নেই কারো। এতে সিলেটে করোনাভাইরাস সংক্রমণের চরম ঝুঁকি রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।
এদিকে, সিলেটে নিম্নবিত্তদের জন্য ১০ টাকা কেজি দরে ওএমএসের চাল বিক্রি চলছে। নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে ডিলারদের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে এ চাল। ১০ টাকা কেজি দামের এই চাল কেনার জন্য প্রতিদিন ডিলারের দোকানের সামনে ভিড় করছেন শত শত নারী-পুরুষ। চাল কিনতে আসা এসব লোকজনকে কোনোভাবেই মানানো যাচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। ফলে ওএমএসের এই চাল নিতে আসাদের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণের শঙ্কা বাড়ছে।
আজ সিলেট নগরের চারাদিঘীরপাড়ে গিয়ে দেখা যায়, কাউন্সিলর আবদুল মুহিত জাবেদের অফিসের পাশে ডিলারের দোকান থেকে প্রতি কেজি ১০ টাকা দামে চাল বিক্রি করা হচ্ছে। চাল কিনতে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন ১৬ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েক শত নারী পুরুষ। কে কার আগে চাল নিবেন সেটা নিয়ে চলছে হুড়োহুড়ি, ধাক্কাধাক্কি। অনেকে লাইন ভেঙে সামনে গিয়ে চাল নেওয়ারও চেষ্টা করছেন।
কাউন্সিলর, ডিলারের লোকজন ও পুলিশ সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে লাইনে দাঁড়ানোর কথা বললেও কেউ শুনছে না কারো কথা। কার আগে কে চাল নেবেন সেটা নিয়েই চলছে প্রতিযোগিতা।
অপরদিকে, সিলেটের নিত্যপণ্যের সবচাইতে বড় বাজার কালীঘাট ও মহাজনপট্টিতে পণ্য ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড় লেগেই আছে। তাদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব তো নেই-ই, অনেকের মুখে নেই মাস্ক- হাতে নেই গ্লাভস। এ অবস্থায় ‘লকডাউন’র শহর সিলেটে এসব কী হচ্ছে? এমন প্রশ্ন সচেতন মহলের।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধের লক্ষ্যে গঠিত সিলেট জেলা কমিটির সভার সিদ্ধান্তের আলোকে গতকাল (শনিবার) সিলেট জেলাকে অবরুদ্ধ (লকডাউন) ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে গতকাল থেকে এ জেলায় জনসাধারণের প্রবেশ ও প্রস্থান নিষিদ্ধ হলো। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জাতীয় ও আঞ্চলিক সড়ক/মহাসড়ক ও নৌপথে অন্য কোনো জেলা হতে কেউ এ জেলায় প্রবেশ করতে কিংবা এ জেলা হতে অন্য কোনো জেলায় গমন করতে পারবেন না। জেলার অভ্যন্তরে আন্তঃউপজেলা যাতায়াতের ক্ষেত্রেও এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।
এছাড়া, সব ধরনের গণপরিবহন, জনসমাগম বন্ধ থাকবে। তবে, জরুরি পরিষেবা, চিকিৎসাসেবা, কৃষিপণ্য, খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ ও সংগ্রহ ইত্যাদি এর আওতাবহির্ভূত থাকবে।
জনস্বার্থে জারি করা এ আদেশ শনিবার থেকে কার্যকর হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এ আদেশ অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। সিলেটভিউ
নির্বাহী সম্পাদক