Home » বর্হিবিশ্বে ২৩ সিলেটির মৃত্যু

বর্হিবিশ্বে ২৩ সিলেটির মৃত্যু

মৃত্যুদূত করোনাভাইরাস কেড়ে নিচ্ছে হাজারো তাজা প্রাণ। ভয়ঙ্কর এই ভাইরাসের ছোবলে প্রাণ যাচ্ছে সিলেটি মানুষেরও। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একের পর এক সিলেটি প্রাণ হারাচ্ছেন করোনার আক্রমণে।

কাল বুধবার (৮ এপ্রিল) পর্যন্ত পাওয়া তথ্য বলছে, গত কিছুদিন বিশ্বের নানা দেশে করোনায় অন্তত ২৩ জন সিলেটি মারা গেছেন। তন্মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন যুক্তরাজ্যে।

জানা গেছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাজ্যে অন্তত ১৩ সিলেটি মারা গেছেন। ৯ জন মারা গেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। এছাড়াও স্পেনে একজন সিলেটি মৃত্যুবরণ করেছেন করোনাক্রান্ত হয়ে।

বিভিন্ন দেশে সিলেটিদের মৃত্যু আর আক্রান্তের সংখ্যা যতো বাড়ছে, দেশে তথা সিলেটে থাকা স্বজনদের উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠাও ততো বাড়ছে।

জানা গেছে, গত ১৩ মার্চ সিলেটের গোলাপগঞ্জের বাগিরঘাটের আফরোজ মিয়া নামের এক ব্যক্তি যুক্তরাজ্যের টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকায় করোনাক্রান্ত হয়ে মারা যান। ২০ মার্চ মৌলভীবাজারের মাহমুদুর রহমান মারা যান লন্ডনে। ২৩ মার্চ সিলেটের বিয়ানীবাজারের ছনগ্রামের জামসেদ আলী, ২৪ মার্চ সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার সাহারপাড়ার খসরু মিয়া করোনাক্রান্ত হয়ে লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন।

পরে ২৫ মার্চ সিলেটের দক্ষিণ সুরমার মোগলগাঁও ইউনিয়নের পংকি মিয়া, ২৯ মার্চ দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দির সোহেল আহমদ, ৩০ মার্চ দক্ষিণ সুরমার লালাবাজারের খাজাখালু গ্রামের মদরিস আলী যুক্তরাজ্যে করোনাক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারান।

গত ৩০ মার্চ ২৪ ঘন্টার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ৪ সিলেটি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তন্মধ্যে সিলেটের গোলাপগঞ্জের রনকেলী দক্ষিণভাগের মোদাব্বির চৌধুরী ইছমত এবং হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার মিনহাজপুরের আজিজুর রহমান রয়েছেন। তারা দুজনই নিউইয়র্কে মারা গেছেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডেট্রয়েট সিটিতে গোলাপগঞ্জের শামসুল হুদা চৌধুরী এবং নিউজার্সিতে এক সিলেটি নারী মারা গেছেন।

একই দিন (৩০ মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রের জ্যামাইকার হিলসাইডে নিশাত আফছা চৌধুরী নামের এক তরুণী মারা যান করোনাক্রান্ত হয়ে। তার বাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের করের গ্রামে। গত ৩১ মার্চ সিলেটের পীরমহল্লার এক যুবক মারা যান লন্ডনে।

জানা গেছে, গত ১ এপ্রিল যুক্তরাজ্যের লুটন শহরে করোনায় প্রাণ হারান দক্ষিণ সুরমার সিলাম ইউনিয়নের ভাংগী গ্রামের দিবলু আহমদ। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার প্রাণ যায়। লুটনে পরিবারসহ বসবাস করতেন তিনি। দিবলুর মৃত্যুর পর চলে যান তার মাও। গত ৪ এপ্রিল তার মা বেদানা বেগম করোনাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

১ এপ্রিল যুক্তরাজ্যের লন্ডনের একটি হাসপাতালে মারা যান বিশ্বনাথ উপজেলার সদর ইউনিয়নের মুফতির গাঁওয়ের তোয়াহিদ আলী। যুক্তরাজ্যের ফরেস্ট হিলে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন তিনি।

এদিকে, গত ৩ এপ্রিল লন্ডনে করোনাভাইরাস কেড়ে নেয় সিলেটের গোলাপগঞ্জের বাঘা গ্রামের দিলাল আহমদের প্রাণ। গেল ৫ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে মারা যান বিয়ানীবাজারের লাউতা গ্রামের কামাল আহমেদ। সেখানকার এলমহার্স্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। কামাল আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রে বাঙালীদের সর্ববৃহৎ সামাজিক সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি ছিলেন।

এছাড়া ৫ এপ্রিল মরণব্যাধি করোনায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের পেটার্সনের বাসিন্দা হাফিজ রুবেল আহমদ প্রাণ হারান। তার গ্রামের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জের ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের খর্দ্দাপাড়া গ্রামে।

গত ৬ এপ্রিল হবিগঞ্জ শহরের মাস্টার্স কোয়ার্টারের অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা অসমঞ্জ কুমার ধর করোনাক্রান্ত হয়ে মারা যান যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে। সেখানকার ওয়ারেন সিটির সেন্ট জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছিলেন।

একই দিন (৬ এপ্রিল) স্পেনের বার্সালোনায় প্রাণ হারান আব্দুল শহীদ নামের এক ব্যক্তি। তার গ্রামের সুনামগঞ্জের ছাতকে। সেখানকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। স্পেনে আরো চার সিলেটি করোনায় আক্রান্ত বলে জানা গেছে।

গত মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) সিলেটের গোলাপগঞ্জের বুধবারীবাজার ইউনিয়নের বহরগ্রামের বদরুল হক প্রাণ হারান যুক্তরাজ্যের লন্ডনে।

সর্বশেষ কাল বুধবার (৮ এপ্রিল) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে মারা যান সুনামগঞ্জের ছাতকের নোয়ারাই ইউনিয়নের ছনখাইড় গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা হারুনুর রশীদ। নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালের আইসিউতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

এদিকে, একের পর এক সিলেটির মৃত্যুতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে তাদের স্বজনদের মধ্যে। দেশে থাকা স্বজনরা প্রবাসে থাকা স্বজনদের জন্য এখন নিত্য প্রার্থনায় মগ্ন। অনেকেই নিজের স্বজন যাতে সুস্থ থাকেন, সেজন্য দেশে তথা সিলেটে মিলাদ পড়াচ্ছেন, দোয়া করাচ্ছেন।

যেমনটি বলছিলেন সিলেটের বিশ্বনাথের সাহাব উদ্দিন, ‘যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশে আমাদের স্বজনরা আছেন। তাদের নিয়ে আমরা উৎকণ্ঠিত। তারা যাতে ভালো থাকেন, সুস্থ থাকেন, সেজন্য আমরা দোয়া করছি, মিলাদ পড়াচ্ছি।’

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *