বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ‘চীনকেন্দ্রিক’ আখ্যা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সংস্থাটিকে দেওয়া মার্কিন তহবিল বন্ধের হুমকি দেন তিনি। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানির জন্যও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-কে দায়ী করেন ট্রাম্প। প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
ট্রাম্প বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে বিপুল পরিমাণ তহবিল দেয় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তারা একের পর এক ভুল করেছে। তাদের তহবিল বন্ধের বিষয়ে আমরা ভাবনা চিন্তা করবো।’ তিনি বলেন, ‘তারা (ডব্লিউএইচও) বলছে, এটা ভুল, ওটা ভুল। আরও কয়েক মাস আগেই তাদের এগুলো বলা উচিত ছিল। তবে তারা সেটা করেনি। তারা বিষয়টি জানতো এবং এটা তাদের জানা উচিত ছিল। আমরা বিষয়টি দেখবো। তাদের অর্থ ছাড় করার বিষয়টি আমরা আটকে দিতে যাচ্ছি।’
ট্রাম্প বলেন, ‘বহু বিষয়ে তারা (ডব্লিউএইচও) ভুল করেছে। প্রথম দিকে তাদের কাছে প্রচুর তথ্য ছিল। তাদের খুব চীনকেন্দ্রিক বলে মনে হয়েছে।’
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি ‘পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি’ ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এর প্রায় মাসখানেক পর ট্রাম্প টুইট করেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস খুব ভালোভাবেই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’ তবে খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করলে এ নিয়ে নিজের আগের অবস্থান থেকে সরে আসেন তিনি।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো এক নথিতে জানুয়ারির শেষ দিকে সতর্ক করেছিলেন যে, এই ভাইরাস লাখ লাখ আমেরিকানকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রিলিয়ন ডলার গচ্চা যেতে পারে। তবে মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প দাবি করেন, ওই সময়ে তিনি নথিগুলো দেখেননি। তবে নিজের বাণিজ্য উপদেষ্টার পরামর্শ অনুযায়ী তিনি চীন সফরে বিধিনিষেধ আরোপের মতো কমবেশি উদ্যোগ নিয়েছেন।
দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ২ ফেব্রুয়ারি ট্রাম্পের ওই বিধিনিষেধ কার্যকর হয়। তার আগেই চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিয়েছে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। তবে ট্রাম্পের দাবি, পরিস্থিতি যে এতোটা খারাপ হয়ে উঠবে তখনও তা স্পষ্ট ছিল না।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুসান রাইস ওয়াশিংটন পোস্টকে সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘ট্রাম্পের ভুল পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের লাখো মানুষের জীবন কেড়ে নিতে পারে।’
ট্রাম্পের পক্ষ থেকে অবশ্য বরাবরই করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় অস্বীকার করা হয়েছে। চীন, ওবামা প্রশাসন ও সংবাদমাধ্যমের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করেছেন তিনি।
৭ এপ্রিল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃতের সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়েছে। এ ঘটনায় ট্রাম্প ডব্লিউএইচও-কে তিরস্কার করলেও প্রথম দিকে এ নিয়ে তার নিজেরই উদাসীনতা স্পষ্ট। জানুয়ারিতে করোনা নিয়ে ডব্লিউএইচও-এর সতর্কতার মধ্যেই তিনি এ ভাইরাসকে সাধারণ ফ্লু হিসেবে আখ্যায়িত করে বিবৃতি দিয়েছিলেন।
ডব্লিউএইচও-এর মতো সংস্থাগুলোকে নিয়ে ট্রাম্পের ট্রাম্পের সংশয় নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরেই তিন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে তিরস্কার করে আসছেন। গত ফেব্রুয়ারির সর্বশেষ বাজেটেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় মার্কিন তহবিল কমানোর অনুরোধ জানায় ট্রাম্প প্রশাসন। এর পরিমাণ ১২২ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার থেকে কমিয়ে ৫৭ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার করার প্রস্তাব করা হয়।
করোনা মোকাবিলায় আগেই আরও উদ্যোগী না হওয়ার বিষয়েও আত্মপক্ষ সমর্থন করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানান, তিনি অভিঘাত তৈরি করতে চান না। বাইরে গিয়ে চিৎকার করতে চান না। এ সময় তিনি নিজেকে দেশের জন্য একজন চিয়ারলিডার হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
বার্তা বিভাগ প্রধান