Home » ইরান করোনাভাইরাস মোকাবেলায় যা করছে

ইরান করোনাভাইরাস মোকাবেলায় যা করছে

বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু সংখ্যা হিসেব করলে ইতালি এবং চীন এবং স্পেনের পরেই ইরানের অবস্থান। এ অবস্থা মোকাবেলায় ইরান সরকার এবং ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রতিনিয়ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে চলেছেন। যদিও এর পরেও আক্রান্তের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বেড়েই চলেছে।

ইরানে এখন ইরানিদের অন্যতম উৎসব ফার্সি নববর্ষ বা নওরোজ। আনন্দের ওই দিনে সরকারি ছুটি চলার কথা কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে অনেক আগে থেকেই ছুটি চলছে।

ইরানিদের মাঝে নববর্ষের দিনগুলোতে সংস্কৃতি আছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমণে যাওয়ার। সেক্ষেত্রে এই অবস্থায় অনেকে এ অবস্থাকে সহজভাবে নিয়ে ভ্রমণে বের হচ্ছেন। এত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ার পরেও ইরানে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার ক্ষেত্রে এটি একটি কারণ হতে পারে। যদিও ইরান সরকার এমন ভ্রমণ ঠেকাতে ভ্রমণের শহরগুলোকে লকডাউনঘোষণা দিয়েছে।

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেশটিতে করোনাভাইরাস শনাক্ত হবার দুইদিনের মধ্যেই জাতীয়ভাবে করোনাভাইরাস নিয়ে দিক-নির্দেশনা এবং প্রটোকল ঘোষণা করে। যে দিক-নির্দেশনা যেমন চিকিৎসকদের জন্য ছিল তেমন দোকানে রুটি বানানোর কাজে নিয়োজিত অথবা সেলুনে কর্মরত ব্যক্তিদেরও জন্যও ছিল।

অন্যদিকে নগদ টাকার মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে সেজন্য ইরানের ব্যাংকগুলোতে নগদ লেনদেন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোর বাইরে দূরত্ব বজায় রেখে লাইন ধরে একে একে ব্যাংকগুলোতে প্রবেশ করে নিজেদের কাজগুলো সম্পন্ন করছেন। কাউন্টারে দায়িত্বরত সবাই মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস নিয়ে কাজ করছেন।

অন্যদিকে শহরের বাস এবং দূরপাল্লার বাসগুলো নিয়মিতভাবে পরিষ্কার করা হচ্ছে। যাত্রাপথে ট্যাক্সি চালকদের যাত্রীদের কাছ থেকে নগদ ভাড়া না নিয়ে অনলাইনে ভাড়া পরিশোধের জন্য বলা হচ্ছে। কিছু শহরে মেট্রো চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোবন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং শিক্ষার্থীরা যাতে পিছিয়ে না পড়ে সেজন্য অনলাইনে শিক্ষার্থীদের ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরাসরি যারা লড়ে যাচ্ছেন তারা হচ্ছেন ইরানের চিকিৎসক এবং নার্সরা। চিকিৎসা দেবার ক্ষেত্রে চিকিৎসক এবং নার্সদের সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ সরঞ্জাম প্রদান করার চেষ্টা করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে মেডিকেলের সঙ্গে সম্পৃক্তদের ফার্সি নববর্ষের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এবং যারা গ্রে জোনে কাজ করছেন তাদের জন্য স্পেশাল কিছু সুবিধা এবং আর্থিক বোনাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেছেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবায় নিয়োজিত থেকে মৃত্যুবরণ করা স্বাস্থ্যকর্মীদের সবাইকে শহীদ (রাষ্ট্রীয় বীর) হিসেবে মর্যাদা দেয়া হবে।

ইরানের বিভিন্ন প্রদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চাপ বেড়ে যাওয়ায় ইরানের সেনাবাহিনী বিভিন্ন প্রদেশে অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরি করছে।

এ অবস্থা মোকাবেলায় সরকারের সাথে সাথে ইরানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সামাজিক সংগঠনগুলোও থেমে নেই। ইরানের ইস্পাহান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ”জিহাদ সালামাত’ নামক একটি সংগঠন করোনাভাইরাস নিয়ে ইস্পাহানের নাগরিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতে আলাদাভাবে ২৪ ঘন্টা হটলাইনের ব্যবস্থা করেছে। আর স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে হটলাইনে প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন ইস্পাহানে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষ থেকে এবং উচ্চতর ডিগ্রিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা।

এমন সব পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে খুব শীঘ্রই ইরানে করোনাভাইরাস কন্ট্রোলের মাঝে আসবে এমনটায় আশা করা হচ্ছে।

লেখক: কামরুজ্জামান নাবিল

শিক্ষার্থী, ডক্টর অব মেডিসিন, ইস্পাহান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইরান

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *