পৃথিবীতে এই পর্যন্ত প্রায় এক লক্ষের অধিক লোক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৩০১৫ জনের মতো লোক মৃত্যু বরন করেছে। বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তির দেশ চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা (৮০ হাজারের মতো) সবচেয়ে বেশি। এ পর্যন্ত ২৬৭ জন মারা গেছে। ৯৭ টির বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এ ভাইরাস।
#ভয়াবহ_এ_ভাইরাসে_করণীয়_কী? এ বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনাই বা কী?
এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে অনেক তথ্যই সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে উঠছে। কেউ কেউ বলছেন, ‘চীনারা ইঁদুর, বাদুড়, কুকুর, বিড়াল জাতীয় বন্যপ্রাণী খাওয়ার কারণে এই ভাইরাস ছড়াচ্ছে।
করোনাভাইরাস ছড়ানোর কারণ যাই হোক হাদিসে অপরিচিত মহামারী ছড়িয়ে পড়ার যে কারণ উল্লেখ রয়েছে তাহলো- ‘অশ্লীলতার ভয়াবহ সয়লাব।
মহামারী ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে অশ্লীল কাজে লিপ্ত হওয়াকে উল্লেখ করা হয়েছে। হাদিস শরীফে এসেছে: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন কোনা জাতির মধ্যে অশ্লীলতা-বেহায়াপনা ছড়িয়ে পড়বে তখন তাদের মধ্যে এমন এমন রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়বে যা ইতিপূর্বে কখনো দেখা যায়নি।’ (ইবনে মাজাহ)
#মহামারী দেখা দিলে করণীয়
যখন কোনো জনপদে অপরিচিত মহামারী দেখা দেয় তখন মানুষের জন্য ইসলামের দিক-নিদের্শনা হলো-
(ক): ‘সর্ব প্রথম আল্লাহ তাআলা কর্তৃক তাকদীরের উপর খুশী থাকা।
(খ): সাওয়াবের আশা নিয়ে ধৈর্য ধারণ করা।
(গ): আল্লাহর কাছে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া থেকে বেঁচে থাকতে সাহায্য চাওয়া।’
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উম্মতকে এসব অবস্থায় সান্ত্বনা দিতেন। হাদিস শরীফে এসেছে:
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন, ‘মহামারি আল্লাহ তাআলার একটি শাস্তি। তবে তা মুসলমানদের জন্য আল্লাহর রহমত।’ (বুখারি)
যারা আল্লাহ তাআলার উপর অগাধ আস্থা এবং বিশ্বাস রাখে, সেসব লোকের পায়ে যদি কোনো কাটাও ফুটে, তবে তারা আল্লাহর কাছে এর বিনিময় পাবে। সুতরাং যারা মাহামারীর ভয়াবহ অবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা করে ধৈর্য ধারণ করবে তাদের জন্য এটি মহামারি নয়। এদের জন্য এটি আল্লাহর রহমত। এর মাধ্যমে তাদের গোনাহ মাফ করে দেবেন।
#সব_সময়_এ_দোয়াটি_পড়া:
اَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَ الْجُنُوْنِ وَ الْجُذَامِ وَمِنْ سَىِّءِ الْاَسْقَامِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাচি ওয়াল জুনুন ওয়াল ঝুজাম ওয়া মিন সায়্যিল আসক্বাম।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি)
#অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনার কাছে আমি শ্বেত রোগ থেকে আশ্রয় চাই। মাতাল হয়ে যাওয়া থেকে আশ্রয় চাই। কুষ্ঠু রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে আশ্রয় চাই। আর দূরারোগ্য ব্যাধি (যেগুলোর নাম জানিনা) থেকে আপনার আশ্রয় চাই।’
তিরমিজি শরীফে এসেছে, আরও একটি দোয়া পড়তে বলেছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الأَخْلاَقِ وَالأَعْمَالِ وَالأَهْوَاءِ وَ الْاَدْوَاءِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন মুনকারাতিল আখলাক্বি ওয়াল আ’মালি ওয়াল আহওয়ায়ি, ওয়াল আদওয়ায়ি।’
#অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার কাছে খারাপ (নষ্ট-বাজে) চরিত্র, অন্যায় কাজ ও কুপ্রবৃত্তির অনিষ্টতা এবং বাজে অসুস্থতা ও নতুন সৃষ্ট রোগ বালাই থেকে আশ্রয় চাই।’ (তিরমিজি)
সুতরাং কোনো অঞ্চলে মহামারী দেখা দিলে সেখান থেকে পালিয়ে না যেয়ে ওই অঞ্চলেই ধৈর্যধারণ করে বসবাস করা। যারা সে অঞ্চল থেকে না পালিয়ে ধৈর্যধারণ করে অবস্থান করবে, যদি তারা সেখানে মারাও যায়, এটি হবে তার জন্য শহিদি মৃত্যু। কারণ হাদিস শরীফে প্রিয় নবী ঘোষণা করেন-
‘আমার উম্মত কেবলই যুদ্ধ ও মহামারীতে ধ্বংস হবে।’
তাই যে এলাকায় মহামারি ছড়িয়ে পড়বে সেখানে অবস্থান করে যদি কেউ মৃত্যুবরণ করে তাহলে সে শহিদ বলে আখ্যায়িত হবে। আর মহামারী এলাকা থেকে যে পালিয়ে আসবে তাকে জেহাদ থেকে পলায়নকারীর মতোই গণ্য করা হবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে করোনাভাইরাসসহ যাবতীয় মহামারীতে ইসলামের দিক-নির্দেশনা মেনে চলার তাওফিক দান করুন। হাদিস শরীফের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।