করোনা ভাইরাস বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ছড়িয়ে পড়লেও এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে ধ্বংস করার মতো কোনো ওষুধ বা এর থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করার কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। তবে এই ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য দুরন্ত গতিতে গবেষণা চলছে।
বিবিসি জানিয়েছে, এই মুহূর্তে ২০টিরও বেশি প্রতিষেধক তৈরির কাজ চলছে। এর মধ্যে একটি অন্যান্য প্রাণীর ওপর পরীক্ষা না চালিয়েই মানুষের দেহে পরীক্ষা করা শুরু করেছে। তারা এটি নিরাপদ কিনা এবং এর কার্যকারিতা আছে কিনা তা বোঝার চেষ্টা করছে।
অন্য বিজ্ঞানীরা এখনো অন্য প্রাণীর দেহে এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করার ধাপে রয়েছেন এবং এ বছরের শেষভাগের মধ্যে ফল পাওয়ার আশা করছেন।
তবে বিজ্ঞানীরা এ বছরের মধ্যে প্রতিষেধক তৈরি করতে পারলেও এটিকে বৃহৎ পরিসরে উৎপাদন করার চ্যালেঞ্জ থেকেই যায়। বাস্তববাদী চিন্তা করলে, আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের আগে এই ভাইরাসের প্রতিষেধক বাজারে আসবে না।
আর এই সবই হচ্ছে অত্যন্ত দ্রুত সময়ে এবং প্রতিষেধক তৈরির গতানুগতিক ধারার বাইরে। কাজেই এই প্রতিষেধক যে আসলেই কাজ করবে, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।
মনে রাখতে হবে যে মানুষের মধ্যে ছড়ায় এ রকম চারটি করোনা ভাইরাস রয়েছে। সে রকম একটি ভাইরাসই সাধারণ সর্দিজ্বরের কারণ এবং সেগুলোর একটির প্রতিষেধকও নেই মানুষের কাছে।
এটি প্রায় অবশ্যম্ভাবী যে, এই প্রতিষেধক বয়স্কদের ওপর কম সফলভাবে কাজ করবে। এটি প্রতিষেধকটির জন্য নয়, বরং বয়স্ক মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রতিষেধকে বেশি কার্যকর হয় না। সাধারণ ফ্লুর ক্ষেত্রে প্রতিবছরই আমরা এ ধারা দেখতে পাই।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকবে?
সব ধরনের ওষুধ, এমনকি সাধারণ ব্যথানাশকেরও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। কিন্তু ক্লিনিকাল ট্রায়াল ছাড়া একটি পরীক্ষামূলক প্রতিষেধকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানা সম্ভব নয়। এই বিষয়টির দিকেই ঔষধ প্রশাসন নজর রাখতে চাইবে।
প্রতিষেধক কার প্রয়োজন হবে?
প্রতিষেধক যদি তৈরি হয় তাহলে তার জোগান হবে সীমিত, অন্তত শুরুর দিকে। কাজেই কার জন্য প্রতিষেধক দেওয়া হবে তা নির্ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ হবে। যেসব স্বাস্থ্যকর্মী কোভিড ১৯-এর রোগীদের সংস্পর্শে আসবেন তাদের সবার আগে প্রতিষেধক দেওয়া হবে।
যেহেতু এই রোগটি বয়স্ক মানুষের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ, কাজেই বয়স্কদের মধ্যে এই প্রতিষেধক কার্যকর হলে তাদেরও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেওয়া হতে পারে। তবে যারা বয়স্কদের সঙ্গে থাকে বা তাদের সেবা দেয়, সেসব মানুষকেও প্রতিষেধক দেওয়া প্রয়োজনীয় হতে পারে।
ওষুধের বিষয়ে কী হবে?
চিকিৎসকরা বর্তমানে অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধ পরীক্ষা করে দেখছেন সেগুলো করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর কিনা। এই ওষুধগুলো যেহেতু মানুষের ব্যবহারের জন্য নিরাপদ হিসেবে স্বীকৃত, তাই এ ক্ষেত্রে গবেষণা দ্রুতগতিতে পরিচালিত হচ্ছে।
আক্রান্ত দেশগুলোর হাসপাতালগুলোতে পরীক্ষা চলছে। তবে ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ব্রুস এডওয়ার্ড বলেন, আপাতত একটি ওষুধই কার্যকর বলে আমরা মনে করছি এবং তা হলো রেমডেসিভির।’
এটি ইবোলার ওষুধ হিসেবে প্রস্তুত হলেও বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস মারতে পারে বলে ধারণা করা হয়। তবে এই ওষুধের পরীক্ষার ফলের জন্য আমরা এখনো অপেক্ষমাণ।
বিজ্ঞানীরা আশা করছিলেন এইচআইভির ওষুধ (লোপিনাভির ও রিটোনাভির) করোনা ভাইরাসের বিপক্ষে কার্যকর হবে, কিন্তু এই ওষুধ দুটির পরীক্ষার ফল ছিল হতাশাজনক।
মারাত্মকভাবে আক্রান্ত কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে মৃত্যুহার কমানো, ভাইরাসের পরিমাণ কমানো অথবা আরোগ্য, কোনোটিই অর্জন করা যায়নি এই ওষুধের মাধ্যমে। তবে যেহেতু এই ওষুধের পরীক্ষা মারাত্মকভাবে অসুস্থ রোগীদের মধ্যে চালানো হয়েছিল, (যাদের প্রায় চারভাগের একভাগ মারা যায়) এমনও হতে পারে যে এটি সংক্রমণের ওই পর্যায়ে রোগীদের শরীরে কাজ করে না।
ম্যালেরিয়ার প্রাচীন এবং সস্তা ওষুধ ক্লোরোকিন করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে কিনা সে বিষয়ে জল্পনা ছিল। গবেষণাগারের পরীক্ষায় দেখা গেছে যে এই ওষুধ ভাইরাসটিকে মারতে সক্ষম, তবে রোগীর শরীরে থাকা ভাইরাস এটি মারতে পারে কিনা সেই পরীক্ষার ফল জানার অপেক্ষায় আছি আমরা। যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশে এই ওষুধের পরীক্ষা চলছে।
প্রতিষেধক আসার আগে কী করণীয়
প্রতিষেধক সংক্রমণ রোধ করে এবং এই মুহূর্তে সংক্রমণ রোধের সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। আপনি যদি করোনা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হন, তবে অধিকাংশ মানুষের জন্যই এটি সাধারণ একটি অসুখ হিসেবে চিহ্নিত হবে। সেক্ষেত্রে ঘরে বিশ্রাম, প্যারাসিটামল এবং প্রচুর পরিমাণ পানি পানের মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা সম্ভব।
তবে কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে রোগ জটিল আকার ধারণ করতে পারে এবং তাদের হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
বিবিসি বাংলা