করোনাভাইরাসের অজুহাত দিয়ে সিলেটের কিছু কিছু স্থানে অসাধু ও মুনাফাখোর ব্যবসায়ী বিভিন্ন ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এসব মুনাফাখোরদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন শুরু করেছে প্রশাসন। উপজেলা পর্যায়ে করা হচ্ছে জরিমানা। সিলেট জেলা প্রশাসনের ৭টি মোবাইল কোর্টও (ভ্রাম্যমাণ আদালত) নামছে মাঠে। সিলেট সিটি করপোরেশনও একটি মোবাইল কোর্ট মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া পুলিশের গোয়েন্দা শাখা মুনাফাখোর, অসাধু ব্যবসায়ীদের তথ্য সংগ্রহ করছে।
জানা গেছে, সিলেটসহ সারাদেশে কোথাও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কোনো সংকট নেই। চাল, ডাল, লবণ, তেল, পেঁয়াজ, রসুনসহ প্রয়োজনীয় সকল পণ্য পর্যাপ্ত পরিমাণে দেশে মজুদ আছে। কিন্তু এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকটের মাধ্যমে বাজারে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
এরকম অবস্থায় সিলেটে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। সে লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) থেকেই শুরু হয়েছে অ্যাকশন।জানা গেছে, নিত্যপণ্যের বাজার যাতে অস্থিতিশীল না হয়, কোনো ব্যবসায়ী যাতে পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দিতে না পারে, সে ব্যাপারে করণীয় ঠিক করতে বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) বৈঠকে বসে সিলেট জেলা প্রশাসন। বৈঠকে সিটি করপোরেশন, জেলা ও মহানগর পুলিশ, চেম্বার প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক থেকে মোবাইল কোর্টের অভিযান জোরদার করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আসলাম উদ্দিন বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের ৭টি মোবাইল কোর্ট মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকেই এসব মোবাইল কোর্ট কাজ শুরু করেছে। তবে এ দিন বিভিন্ন বাজারে গিয়ে পণ্যের মূল্য না বাড়াতে সতর্ক করা হয়েছে। শুক্রবার (২০ মার্চ) থেকে আর সতর্কতা নয়, অ্যাকশন নেওয়া শুরু হবে।’
তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের ৭টি মোবাইল কোর্ট শুধু বাজার মনিটরিংই নয়, যারা হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন, তাদের ব্যাপারেও লক্ষ্য রাখবে। তাদের ঠিকানা ধরে বাড়ি বাড়ি দিয়ে তারা আসলেই কোয়ারেন্টিনে থাকছেন কিনা, তা দেখা হবে। কাউকে কোয়ারেন্টিন অমান্য করতে দেখলে নেওয়া হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।’
এদিকে, শুধু জেলা প্রশাসনের এই ৭টি মোবাইল কোর্টই নয়, সিলেটের ১৩টি উপজেলায়ও শুরু হচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন।অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আসলাম উদ্দিন সিলেটভিউকে বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়ে ইউএনওর নেতৃত্বে মোবাইল কোর্ট চালানো হচ্ছে। তাদেরকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।এদিকে, সিলেট সিটি করপোরেশনও (সিসিক) নিজেদের একমাত্র ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী বলেন, ‘আমরা মোবাইল কোর্ট নামাচ্ছি। শনিবার থেকেই সম্ভবত এটি কাজ শুরু করবে। আমাদের একজন ম্যাজিস্ট্রেট আছেন, তিনিই অভিযানে নামবেন।এদিকে, বাজারের দিকে লক্ষ্য রাখছে সিলেট জেলা পুলিশও। জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা থেকে বাজারের অসাধু আর মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে সিলেট জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুব আলম বলেন, ‘মূলত জেলা প্রশাসনই বাজার নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি দেখে। তবে আমরা বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। পণ্যের মূল্য কিভাবে বাড়ছে, কমছে সেসব তথ্য সংগ্রহ করছি।’
এদিকে, সিলেটের উপজেলা পর্যায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রির বিরুদ্ধে অ্যাকশন শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার চতুল বাজারে আলিম উদ্দিন ট্রেডার্সকে ৪০ টাকার পেঁয়াজ ৮০ টাকায় বিক্রির অভিযোগে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে পরিচালিত মোবাইল কোর্ট এই অভিযান চালায়।
এদিকে, সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার গোলাপগঞ্জ, ঢাকাদক্ষিণ ও বাদেশ্বর বাজারে বৃহস্পতিবার অভিযান চালায় মোবাইল কোর্ট। অভিযানে অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রি করায় ৬টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।এছাড়াও সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলা সদরে দুটি দোকানকে ৫ হাজার টাকা করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
প্রতিনিধি