করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে প্রথম এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এই ভাইরাসের ভয়ে দেশের হাসপাতালগুলো থেকে রোগীদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছেন, তার কাছেও এ ধরনের তথ্য রয়েছে।
আজ বুধবার বিকেলে আইইডিসিআর’র সম্মেলন কক্ষে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফিংকালে এ বিষয়ে কথা বলেন মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আইইডিসিআর’র ব্রিফ্রিংকালে এক সাংবাদিক রোগীর নাম উল্লেখ করে প্রশ্ন করেন, করোনাভাইরাসের ভয়ে বিভিন্ন হাসপাতাল যে রোগী ভর্তি নিচ্ছে না, সে বিষয়ে আইইডিসিআর কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কি না? উত্তরে সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘আমরা এ ধরনের তথ্য পাচ্ছি। আমরা একদম প্রকাশ্যেই দেখতে পাচ্ছি যে, অনেক ক্ষেত্রেই এ ধরনের বিষয়গুলো হচ্ছে এবং এটা অনেকদিন ধরেই হচ্ছে।’
আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদক্ষেপও নিয়েছি। আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করছি সমস্যাটা সমাধানের জন্য। আমরা আমাদের দিক থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। প্রত্যেকটা হাসপাতালের সাথে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে, কথা বলে সমস্যাগুলো কিভাবে সমাধান করা যায় তা নিয়ে চেষ্টা চলছে।’
ডা. সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘যে সমস্ত হাসপাতালগুলোর কথা বলা হচ্ছে, আপনারা যারা বলছেন পিপি (সুরক্ষা সামগ্রী) নাই, আসলে হাসপাতালগুলোতে পিপি রয়েছে। আমরা পিপিটা যেভাবে সরবরাহ করছি, আমরা মূল স্টক পাইলটা ঢাকাতে রেখেছি। যখন যেখানে দরকার হয় সেখানে সরবরাহ করা হয়। কোথাও রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেলে সেখানে সরবরাহ বাড়ানো হয়।’
আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, ‘আর আমরা প্রথম থেকেই বলছি যে, পিপি নিয়ে বিশ্বব্যাপী সঙ্কট রয়েছে। প্রতিদিনের আমাদের সময়ের একটা বড় অংশ চলে যায় যে কিভাবে আমরা সাপ্লাইটা কন্টিনিউ রাখব। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে পিপি রয়েছে। আর আমাদের যে পিপি আসে তার তার একটা বড় সাপ্লাই আসত চায়না থেকে। আর এখন চায়নাতে নতুন করে অনেক কিছু খোলা হয়েছে। তাদের সাথে আমাদরে যোগাযোগ হয়ে গেছে। আশা করছি, পিপি নিয়ে নতুন করে আর কোনো সঙ্কট দেখা দেবে না। এখন নতুন করে এই মুহূর্ত সঙ্কট নেই। তবে আমরা যদি বলি আরও প্রয়োজন তবে রয়েছে।’
হাসপাতালগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণে পিপি নেই-এমন অভিযোগের বিষয়ে ডা. ফ্লোরা বলেন, ‘চিকিৎসকরা কেন বলছেন তা আমি জানি না। এটা চিকিৎসকদের জানার কথাও না। এটা হাসপাতালের পরিচালক, তত্ত্বাবধায়ক বা সিভিল সার্জন যিনি আছেন, তার জানার কথা। তো চিকিৎসকরা কেন বলছেন তা আমি জানি না। তবে আমাদের দিক থেকে হাসপাতালগুলোতে পিপি দেওয়া আছে।’
এর আগে আজ বিকেলে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন আইইডিসিআর পরিচালক। তিনি জানান, দেশে করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত ব্যক্তির বয়স ৭০ বছরের বেশি। তিনি বিদেশে যাননি। বিদেশ ফেরত কারও কাছ থেকে তিনি সংক্রমিত হয়েছেন।
মীরজাদী সেব্রিনা জানান, ওই ব্যক্তির ডায়বেটিস ছিল, উচ্চ রক্তচাপ ছিল, কিডনিতে সমস্যা ছিল, হার্টে সমস্যা থাকার কারণে এর আগে তাকে স্টেনটিং করানো হয়েছিল। সুতরাং সেদিক থেকে তিনি খুব উচ্চ ঝুঁকির মুখে ছিলেন।
নতুন করোনা রোগী সম্পর্কে আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, ‘নতুন করে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন আরও চারজন। তাদের মধ্যে একজন নারী ও বাকি তিনজন পুরুষ। একজন আগে আক্রান্ত রোগীর পরিবারের সদস্য। বাকি তিনজন বিদেশ থেকে এসেছেন। তাদের মধ্যে দুজন ইতালি থেকে এসেছেন, আরেকজন কুয়েত থেকে। দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা এখন ১৪।
সূত্র: আমাদেরসময়
প্রতিনিধি