Home » সিলেট স্বস্তি, সিলেটে আতঙ্ক

সিলেট স্বস্তি, সিলেটে আতঙ্ক

পরম এক স্বস্তি নেমে এসেছিল সিলেটে। কিন্তু সেই স্বস্তি টিকলো না বেশিক্ষণ। স্বস্তির জায়গায় এখন অনেকের মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। সিলেটে মানুষের মধ্যে এই স্বস্তি আর আতঙ্কের কারণ করোনাভাইরাস। সিলেটে করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে এক যুবককে ভর্তি রাখা হয়েছিল হাসপাতালে। তার রক্তের নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি। রবিবার সকালে ঢাকা থেকে পরীক্ষার ওই রিপোর্ট সিলেটে আসার পর প্রকাশ করেন সিভিল সার্জন। এতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়েন সিলেটের মানুষ।

কিন্তু সকাল গড়িয়ে দুপুর যেতেই জানা গেল, প্রথমবারের মতো দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিনজনের সন্ধান মিলেছে। তারা হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এতে সকালের স্বস্তি উবে যায় মানুষের। সিলেটসহ সারাদেশেই মানুষের মধ্যে এখন করোনার ভয় আর আতঙ্ক বিরাজ করছে।

জানা গেছে, সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সুতারগ্রামের আলী হোসেনের ছেলে মো. জাকারিয়া (৩২) গত বুধবার থেকে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। জাকারিয়া আরব আমিরাতের দুবাইয়ে একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করতেন। ওই রেস্টুরেন্টে চীনা নাগরিকদের যাতায়াত রয়েছে। সেখানে থাকাকালীন জ্বরাক্রান্ত হন জাকারিয়া। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গত ২৯ ফেব্রুয়ারি দেশে আসেন তিনি।

এরপরও জ্বর ও কাশি না কমায় তিনি সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। চিকিৎসকরা তাকে ঢাকায় যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু তিনি রাজি না হওয়ায় তাকে ভর্তি করা হয় শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে। গত বৃহস্পতিবার জাকারিয়ার রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর’র একটি টিম। সেই নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় ঢাকায়।

জাকারিয়া করোনাভাইরাস সন্দেহে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর সিলেট ছাড়িয়ে সারাদেশের মানুষের মধ্যে শঙ্কা চেপে বসে। তিনি যদি সত্যিই করোনাক্রান্ত হন, তবে তা বাংলাদেশের অন্য মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে বলেও আশঙ্কা করেন অনেকে। কাল রবিবার সকালে ঢাকা থেকে জাকারিয়ার রক্তের পরীক্ষার রিপোর্ট আসে সিলেটে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন।

এ খবরে স্বস্তি প্রকাশ করেন সিলেটের সর্বস্তরের মানুষ। কেননা, জাকারিয়া করোনাক্রান্ত হয়ে থাকলে তিনি দেশে এসে যেসব মানুষের সাথে মিশেছেন, তাদেরও আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থাকতো। এর ফলে সিলেটে এই ভাইরাসের বিস্তার ঘটতে পারতো। সিলেটের মানুষের এই স্বস্তি রবিবার বিকালেই উবে যায়। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর) এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত তিন রোগী পাওয়া গেছে। তাদেরকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, আক্রান্তদের মধ্যে একজন নারী, দুজন পুরুষ। এদের দুজন সম্প্রতি ইতালি থেকে দেশে আসেন। তাদের মাধ্যমে দেশে পরিবারের আরেক সদস্য আক্রান্ত হন। করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। তিন হাজারেরও বেশি মানুষ এই ভাইরাসে মারা গেছেন। এবার বাংলাদেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়ায় সিলেটসহ সারাদেশের মানুষের মধ্যেই আতঙ্ক চেপে বসেছে।

সিলেটের বেশ কয়েকজন মানুষ এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বলেন, কানাইঘাটের যুবক জাকারিয়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হওয়ায় সকালে তারা স্বস্তি প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু বিকালেই দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের খোঁজ পাওয়ার খবরে তাদের স্বস্তি আতঙ্কে রূপ নিয়েছে। তারা বলেন, করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সিলেটসহ সারাদেশে যথাযথ ব্যবস্থা যেন সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গ্রহণ করে।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *