ক্রিকেট বিশ্ব এমন দিন আর কখনো দেখেছে কিনা, কে জানে! একজন ক্রিকেটার, যিনি খেলা ছাড়ছেন না, শুধু অধিনায়কত্ব ছাড়ছেন; তাঁকে এমন সম্মান প্রদান! এ যে রীতিমতো অভূতপূর্ব! মাশরাফি বিন মুর্তজান কাল শুক্রবার পর্যন্তও বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন। আজ শনিবার থেকে তিনি সাবেক অধিনায়ক। তাঁর অধিনায়কত্ব থেকে সাবেক হওয়ার দিনটি অভাবনীয়ভাবে স্মরণীয় করে রেখেছেন তাঁরই সতীর্থরা। তামিম-মুশফিক-লিটনরা।
সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচে জয় নিশ্চিত হওয়ার পর বাংলাদেশ দলের সবাই এসে মাশরাফিকে ভালোবাসার বন্ধনে আলিঙ্গন করেন। জিম্বাবুয়ে দলের সবাইও পিঠ চাপড়ে দেন মাশরাফির। এরপর তামিম ইকবাল কাঁধে তুলেন অধিনায়ক থেকে দলের সবার ‘প্রিয় ভাই’য়ে পরিণত হওয়া মাশরাফিকে। দলের সবাই ঘিরে ধরে মাঠ প্রদক্ষিণ করেন তাঁকে নিয়ে। এখানেই থামলেন না তামিম-মুশফিকরা। মাশরাফির নামে বানানো বিশেষ জার্সি পরলেন দলের সবাই। যে জার্সির পেছনে মাশরাফির নাম আর জার্সি নাম্বার ২ লেখা। সামনে লেখা ‘থ্যাঙ্ক ইউ ক্যাপ্টেন’।
বাংলাদেশ তো বটে, বিশ্বের আর কোনো অধিনায়কের অধিনায়কত্বকে বিদায় বলার সময়ে এমন বিরল সম্মান জুটেনি, নিঃসন্দেহে বলে দেওয়া যায়। অধিনায়ক মাশরাফিকে সম্মান জানাতে ভুলেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও। মাশরাফির অধিনায়কত্বের শেষ ম্যাচ দেখতে ঢাকা থেকে ছুটে আসেন বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনসহ কয়েকজন পরিচালক। ম্যাচ শেষে বোর্ডের পক্ষ থেকে মাশরাফির হাতে বিশেষ সম্মাননা স্মারক তুলে দেন পাপন।
এ তো গেল ম্যাচ শেষের কথা। ম্যাচের আগে কিংবা ম্যাচ চলাকালে পুরোটা সময়ই চলেছে মাশরাফিবন্দনা। ম্যাচ শুরুর আগে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রবেশপথে ‘ধন্যবাদ অধিনায়ক’ লেখা ব্যানার নিয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোর্টার্স এসোসিয়েশন।
মাশরাফির অধিনায়কত্বে শেষ ম্যাচ দেখতে ঢাকা থেকে সিলেটে আসেন বেশ কয়েকজন ক্রিকেটপ্রেমী। ম্যাচ চলাকালে সারাটা সময় ‘মাশরাফি! মাশরাফি!’ স্লোগানে মুখরিত ছিল স্টেডিয়ামের গ্যালারি। আগের দুই ম্যাচে যেখানে অনেকটাই ফাঁকা ছিল গ্যালারি, কাল মাশরাফির জন্য পরিপূর্ণ হয়ে ওঠেছিল তা।মাশরাফির জন্য এমন বিরল সম্মান দেখে ম্যাচ শেষে ভারতীয় ধারাভাষ্যকার গৌতম ভিমানী তো বলেই বসলেন, ‘এ এক বিরল রাত!’ আর মাশরাফির সতীর্থরা বললেন, বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে ‘বড় বিজ্ঞাপন’ মাশরাফি, যিনি ‘কিংবদন্তি’।
মুশফিকুর রহিম বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেটে তিনি একজন কিংবদন্তি। অসাধারণ শুধু খেলোয়াড় হিসেবেই নন, মানুষ হিসেবেও। তাঁর জন্য প্রার্থনা, তিনি আরও খেলা চালিয়ে যাবেন। এখনো তিনি যেভাবে বোলিং করেন অন্তত দুই বছর আরও খেলা চালিয়ে যেতে পারবেন। তিনি এখনও বাংলাদেশ ক্রিকেটের বড় বিজ্ঞাপন। তাঁর জন্য শুভকামনা।’
তামিম যখন ম্যাচ শেষে কথা বলছিলেন, মনে হচ্ছিল আবেগ সংবরণ করে রাখতে কষ্ট হচ্ছে তাঁর। বললেন, ‘তিনি (মাশরাফি) অবিশ্বাস্য! ২০১৪ সালে যখন নেতৃত্বভার নিলেন, ওয়ানডেতে দল হিসেবে আমাদের অবস্থান খুব একটা ভালো ছিল না। ২০১৪ থেকে ২০১৯- তিনি এমন একটা জায়গায় এনেছেন, বিশ্বের যেখানেই যাই খেলতে সবাই আমাদের শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখে। এই পরিবর্তনটা অবিশ্বাস্য! অনেকবার মানুষ আমাকে একাদশ থেকে বাদ দিতে চেয়েছে, তিনি আমাকে সব সময়ই সমর্থন দিয়ে গেছেন। অধিনায়ক হিসেবে তিনি অসাধারণভাবে শেষ করলেন।’
মাহমুদউল্লাহর মাশরাফিকে মূল্যায়ন করলেন এভাবে, ‘তিনি আমাদের একজন ভাই, একজন বন্ধু। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য তিনি অনেক করেছেন। আমাদের অনেক সমর্থন করেছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অধিনায়ক। আমাদের সুন্দরভাবে একসুতোয় গেঁথেছেন। যখন তিনি অধিনায়কত্ব পেয়েছিলেন, আমরা খুব একটা ভালো করতে পারছিলাম না। তাঁকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে তাঁকে ধন্যবাদ জানাই।’
প্রতিনিধি