Home » মোদির আগমন ঠেকাতে প্রকম্পিত সিলেটের রাজপথ

মোদির আগমন ঠেকাতে প্রকম্পিত সিলেটের রাজপথ

শুক্রবার বাদ জুম্মা সিলেট নগরী ছিল মিছিলে উত্তাল। মিছিলে-শ্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে গোটা মহানগরী। বিভিন্ন পাড়া মহল্লা, মসজিদ ও মাদ্রাসা থেকে বের করা হয় খন্ড খন্ড মিছিল। সবকটি মিছিলের গন্তব্য নগীর ঐতিহাসিক কোর্ট পয়েন্ট। বেলা আড়াইটার সময় কোর্ট পয়েন্ট লোকে-লোকারণ্য হয়ে উঠে। সবার একটাই দাবি, মুজিব বর্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে যেন বাংলাদেশে আসতে দেয়া না হয়। কারণ হিসেবে মিছিলে আগতরা বলছেন, সম্প্রতি ভারতের দিল্লীতে মুসলমানদের উপর মোদি সরকার অমানবিক নির্যাতন করেছে। অনেক মুসলমানকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে।

শুক্রবার সিলেটে ইসলামী সমমাননা দলগুলো ভারতে মুসলমানদের উপর হত্যার বিচার ও প্রধানমন্ত্রী মোদীর আগমন ঠেকাতে সিলেটে আয়োজন করে বিক্ষোভ কর্মসূচির। জমিয়তে উলামা ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, ইসলামী ঐক্যজোট, হেফাজতে ইসলামসহ তাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ কর্মসূচির আয়োজন করেছিল। এই বিক্ষোভ সফলের লক্ষে ইসলামী এসব দল পূর্ব প্রস্তুতিও রেখেছিল।  আর ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন সিলেটে তারা আলাদা মিছিল-সমাবেশ করেছে।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মাদ্রাসা থেকে আগত মিছিলকারীরা স্ব-স্ব ব্যানার সহকারে মিছিল নিয়ে আসে সিলেট নগরীর কোর্ট পয়েন্টে। এসব মিছিলে শুধু ইসলামী দলের লোকজন ছিলেন না। অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরও মিছিল-সমাবেশে অংশ নিতে দেখা গেছে।  শুধু সিলেট নগরী নয়, জেলার সকল জায়গায় একই ইস্যু নিয়ে আজ শুক্রবার বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়েছিল। এর আগে গত শুক্রবারও সিলেট নগরীতে মোদীর আগমন ঠেকাতে বড় শোডাউন করা হয়েছিল।

পরে কোর্ট পয়েন্টে এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশ শেষে এক বিশাল মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

কোর্ট পয়েন্টে  সমাবেশে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সিলেট মহানগর সভাপতি মাওলানা খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ খেলাফত মসলিস সিলেট মহানগর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা এমরান আলম, জেলা জমিয়তে যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা নজরুল ইসলাম এবং মহানগর খেলাফত মসলিস সহ সভাপতি মাওলানা তাজুল ইসলাম হাসান যৌথ পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন- হেফাজতে ইসলাম সিলেট জেলা সভাপতি মাওলনা মুহিবুল হক গাছবাড়ী, বাংলাদেশ খেলাফত মসলিসের কেন্দ্রীয় নায়বে আমির মাওলানা রেজাউল করিম জালালী, জমিয়তে কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি সাবেক এমপি এডভোকেট শাহীনুর পাশা চৌধুরী, খেলাফত মসলিস নায়বে আমির হাফিজ মাওলানা মজদুদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশ খেলাফত মসলিস সিলেট জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা ইকবাল হোসাইন, মহানগর সভাপতি  মাওলানা গাজী রহমত উল্লাহ, কাজির বাজার মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা সামীউর রহমান মুসা, মহানগর জমিয়তে সিনিয়র সহ সভাপতি অধ্যক্ষ হাফিজ আব্দুর রহমান সিদ্দিকী।

এছাড়া বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সিলেট জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা ইকবাল হোসাইন, মহানগর সভাপতি মাওলানা গাজী রহমত উল্লাহ, মহানগর জমিয়তের সিনিয়র সহ সভাপতি অধ্যক্ষ হাফিজ আব্দুর রহমান সিদ্দিকী, খেলাফত মসলিস  অধ্যাপক বজলুর রহমান, জেলা জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আতাউর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস জেলার সাধারণ সম্পাদক হাফিজ মাওলানা আতিকুর রহমান, মহানগর হেফাজতের সাধারন সম্পাক মাওলানা মোস্তাক আহমদ খাঁন, ভার্থখলা মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা মুহিবুর রহমান মিঠুপুরী, জাতীয় ইমাম সমিতি মহানগর সভাপতি মাওলানা হাবিব আহমদ শিহাব, ইসলামী ঐক্যজোট সিলেট মহানগর সভাপতি মাওলানা ফয়জুল হক জালালাবাদী, সোবহানী মাদরাসার নায়বে মুহতামিম মাওলানা আহমদ ছগির, খেলাফত আন্দোলন সিলেট জেলা সভাপতি মাওলানা প্রিন্সিপাল নাসির উদ্দিন, মাওলানা সামসুদ্দিন মো. ইলিয়াস, শামীমাবাদ মাদরাসার মুহতামিম হাফিজ সৈয়দ শামীম আহমদ, মহানগর খেলাফত মসলিস সাধারন সম্পাক কে এম আব্দুল্লাহ আল মামুন, সহ জেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মখলিছুর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত মসলিস সিলেট জেলার প্রশিক্ষণ সম্পাদক মুফতি মাহবুবুল হক, ইসলামী ঐক্যজোট সিলেট জেলা সভাপতি মাওলানা আসলাম রহমানী, জেলা জমিয়তের প্রচার সম্পাদক মাওলানা সালেহ আহমদ শাহবাগী, কাজির বাজার মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা ফাহাদ আমান, মাওলানা ফয়সল আহমদ প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন,  মোদী সরকার মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা করছে, নির্যাতন করছে। মসজিদ-মাদ্রাসা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে। মিনারে হনুমানের পতাকা লাগিয়েছে। এসব কাজ বিশ্বের ১৮০ কোটি মুসলমানদের কলিজায় আঘাত দিয়েছে। মুজিববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে ইসলাম ও মুসলিমবিদ্বেষী নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশের জনগণ দেখতে চায় না।

মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে মোদি যোগ দিলে এদেশে বদরের যুদ্ধের পূণরাবৃত্তি হবে বলে হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, শাপলা চত্তরে রক্ত দিয়েছি, এ রক্তের দাগ এখনও শোকায়নি। প্রয়োজনে মোদি দেশে আসলে আবারও রক্ত দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। তবুও মুসলমানদের উপর কোন ধরণের নির্যাতন সহ্য করবো না।

বক্তারা বলেন, আমরা মুজিববর্ষের বিরোধী নই, কিন্তু ‘রক্তপিপাসু নরেন্দ্র মোদী বিরোধী। তাকে এদেশের মুসলমান জনগণ কখনও মেনে নেবে না’।

বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীলরা বলছেন ভারতে নৃশংসতা তাদের অভ্যন্তরীন বিষয়। তাদের এরকম বক্তব্য ৯৫ ভাগ মুসলমানের দেশে মুসলমানদের কলিজায় আঘাত লেগেছে। মন্ত্রীদের মুখে এরকম বক্তব্য মানায় না। অবিলম্বে ভারতে গণহত্যা বন্ধে সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাওয়ার জোর দাবি জানান।

বক্তারা বলেন, ইসলাম সবসময় মানবাধিকার, শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার কথা বলে অমুসলিম সম্প্রদায়কে নিরাপত্তাদানের কথা বলে। আমাদের দেশের মুসলমানগণ বারবার তা প্রমাণ করে দেখিয়েছে। এ দেশে মানবপ্রাচীর তৈরি করে মন্দির পাহারা দেয়ার নজীর আমরা দেখিয়েছি। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে বসবাস করছে। অথচ ভারতে এর উল্টো চিত্র আমরা দেখতে পাচ্ছি। ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায় সবসময় সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায় কর্তৃক নির্যাতিত নিপীড়িত হচ্ছে। ভারতের উচিৎ হবে নিজেদের দেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করা।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *