ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভজনপুরা এবং চাঁদ বাগে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষজন মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন। মুসলিমদের ওপর ভয়াবহ হামলার জেরে উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে দুই মেরুতে অবস্থান নিয়েছে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ।
অথচ, বছরের পর বছর ধরে দুই সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন ছিল। হামলার ঘটনার মধ্যেও মুসলমানদের সাহায্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের এগিয়ে আসার খবর পাওয়া গেছে।
রুবিনা বানু নামে এক নারী বলেন, সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছিল। ওই সময় সবাইকে ছত্রভঙ্গ করে দিতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। তখন হিন্দুরা জমায়েত হয়ে পাথর নিক্ষেপ শুরু করে।
অন্যদিকে সন্তোষ গর্গ নামে এক নারী বলেন, আমি এখানে ৩৫ বছর ধরে বসবাস করছি। মুসলমানরা আমার বাড়ি পুড়িয়ে ফেলল। অথচ এতদিন কোনো ধরনের সমস্যা ছিল না। আমি এখনো বুঝতে পারছি না, কী ঘটছে।
ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতা করে দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে বিক্ষোভ চলছিল। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত সফরে আসার মুহূর্তে সিএএ বিরোধী এবং সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। ধীরে ধীরে সিএএ বিরোধী সংঘর্ষ দাঙ্গার দিকে মোড় নিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা একে গুজরাট দাঙ্গার মডেলের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করছেন।
কিন্তু সেখানকার বাসিন্দারা বিলাপ করছেন, কত শান্তিপূর্ণভাবে এতদিন দুই সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করেছে তা নিয়ে। অথচ এখন দুই সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সংঘর্ষে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল থেকে শুরু করে বাড়িঘর ও দোকানপাট পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। উগ্র হিন্দুদের দেওয়া আগুনে পুড়ে গেছে মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র গ্রন্থ কুরআন শরিফ।
সিএএ বিরোধী বিক্ষোভে অন্য হাজার হাজার মুসলমানের মতো অংশ নেন রুবিনা বানু। ভারতের বহু মানুষ বলছেন, এই আইন ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ, এতে মুসলমানদের উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোদি সরকার হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র গড়ে তোলার পাঁয়তারা করছে। সে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরাও সিএএ’র বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছেন। গত বছর জয় শ্রীরাম স্লোগানে মারধরের ঘটনা বহুবার ঘটেছে। এরপর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এসে সরকারবিরোধী এবং পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি দাঙ্গার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
অশান্তি থামাতে পুলিশ ও রাজনীতিবিদদের সদিচ্ছার বিষয়ে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস উঠে গেছে। মানুষজন মনে করছেন, রাজনীতিবিদরা চায় না যে, দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় থাকুক।
সূত্র: কালের কণ্ঠ
প্রতিনিধি