Home » অশোকনগরে সহিংসতায় বহিরাগতরা, আশ্রয় দিল স্থানীয়রা

অশোকনগরে সহিংসতায় বহিরাগতরা, আশ্রয় দিল স্থানীয়রা

ভারতের উত্তর-পূর্ব দিল্লির অশোকনগরে মসজিদে হামলা-অগ্নিসংযোগ করেছে বাহিরাগতরা। তারা বেছে বেছে শুধু এলাকার মুসলিমদের বাড়ি ও দোকানপাটে আগুন ধরিয়ে দেয়। স্থানীয় হিন্দুরা জানিয়েছেন, তারা বহিরাগতদের কাউকে চেনেন না এবং এমন পরিস্থিতিতে গৃহহীন মুসলিমদের পাশে থাকবেন সবাই।

গত মঙ্গলবার অশোকনগরের মুসলিম পরিবারগুলোর ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এর আগে অন্তত এক হাজার জনের একটি গ্রুপ এলাকায় ঢুকে একটি মসজিদে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় মসজিদটিতে অন্তত ২০ জন নামাজ পড়ছিলেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী খুরশির আলম বলেন, ‘আমি মসজিদে ছিলাম। হঠাৎ একটি বড় গ্রুপ সেখানে ঢুকে স্লোগান দিতে শুরু করে। আমরা প্রাণ বাঁচাতে দৌঁড়ে পালাই।’

এই গ্রুপটিই পরে মসজিদে আগুন ধরিয়ে দেয়। মোহাম্মাদ তায়েব নামে আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘তারা দুপুর দেড়টার দিকে মসজিদের ছাদে উঠে তিরঙ্গা (ভারতের জাতীয় পতাকা) উত্তোলন করে ও একটি গেরুয়া পতাকা টানিয়ে দেয়।’ বুধবার সকালে ওই পতাকা সরিয়ে দেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানান, তারা দাঙ্গাকারীদের বারবার ক্ষয়ক্ষতি না করতে অনুরোধ জানান। কিন্তু তারা কারও কথা শোনেনি। এদের সবাই বহিরাগত ছিল। অশোকনগরের বাসিন্দা রাজেশ খাত্রী বলেন, ‘গ্রুপটির বেশিরভাগেরই মুখ ঢাকা এবং হাতে লোহার রড ছিল। অল্প সময়ের মধ্যেই তারা দোকানপাটে আগুন দিতে শুরু করে। ভয় ছিল, আমাদেরও হত্যা করা হতে পারে।

দোকানপাটে অগ্নিসংযোগের পর দুর্বৃত্তরা মুসলিমদের বাড়ির দিকে যায়। ভুক্তভোগী মোহাম্মদ রশিদ বলেন, ‘এ এলাকায় মাত্র ছয়টি মুসলিম পরিবার বসবাস করে, ওই লোকগুলো সেটা জানত। কারণ তারা আর কোনও বাড়িতে হামলা করেনি। তারা একটা জিনিসও ছাড়েনি, সব লুট করে নিয়ে গেছে। এখন আমরা সবাই গৃহহীন।’যখন ভাবছিলাম আমাদের রাস্তায় থাকতে হবে, সেসময় সাহায্য করতে আসে এলাকার হিন্দু বন্ধুরা। তারা আমাদের তাদের বাড়িতে উঠতে দিয়েছে। আমরা এ এলাকায় ২৫ বছর ধরে আছি

নীরাজ কুমার নামে এলাকার আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘দাঙ্গাকারীদের একজনকেও আমরা চিনি না। তারা দুইবার হামলা করেছে। একবার দুপুর ১টার দিকে, আরেকবার বিকেল ৪টার দিকে। বছরের পর বছর ধরে আমরা এখানে শান্তিপূর্ণভাবে আছি, কেউ কখনও কাউকে আঘাত করিনি।’

দানিশ নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমরা বারবার

ততক্ষণে ক্ষতি হয়েই গেছে, বেশিরভাগ বাড়িতে লুটপাট শেষ। এরপর পুলিশ নিরাপত্তার কারণে আমাদের থানায় নিয়ে যায়। আমরা সেখানেই রাত কাটিয়েছি।’

হামলা-সহিংসতায় ক্ষতি শুধু মুসলিমদেরই নয়, হয়েছে হিন্দুদেরও। মসজিদের বাইরে জুতা বিক্রি করতেন রাজকুমার। তিনি বলেন, ‘তারা (দাঙ্গাকারী) কাউকে ছাড়েনি। কয়েকদিন থেকেই আমার দোকান বন্ধ। অশোকনগরে যে এমনটি হতে পারে তা আমার ধারণাতেও ছিল না। বুধবার সকালে খোঁজ নিতে এসে দেখি আমার দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’

গত রোববার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) সমর্থক-বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলেও ধীরে ধীরে এটি সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় রূপ নেয়। এতে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। বৃহস্পতিবারও অন্তত সাতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে সেখানে এছাড়া আহত হয়েছে আরও দুই শতাধিক মানুষ।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *