সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে শিমুল বাগানে গত বছর মাঘে ফুল ফুটলেও এবার শিমুল ফুল ফুটেছে বসন্তেই। রক্তরাঙা শিমুল যদি একটি গাছেও ফুটে সেটি হল যাদুকাটা নদীর তীরে জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগানে।
গত বছর নির্ধারিত সময়ের চেয়ে একটু আগে ফুল ফুটলেও এবার তার আপন মহিমায় ফুল ফুটেছে নির্ধারিত সময়েই। ডালে ডালে ফুটে থাকা হাজারো ফুল মনকে রাঙিয়ে তুলছে পর্যটকদের। শিমুল বাগানের রক্তরাঙা ফুল চোখে পড়ছে এবার অনেক দূর থেকেই। ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে এখন দেশের সবচেয়ে বড় শিমুল বাগানে। প্রতিদিন হাজারো পর্যটক জড়ো হচ্ছেন শিমুল বাগানে। কেউ আসছেন প্রেমিকা নিয়ে, আবার কেউ আসছেন পরিবার-পরিজন ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে। এ যেন দিনদিন মিলন মেলায় রুপ নিচ্ছে শিমুল বাগানে। এবার বসন্তে বাউলের মন রাঙিয়েছে। গত বছর বসন্তের আগেই মুকুল ঝরে পড়লেও এবার বসন্তেই ফুল ফুটেছে। শুক্রবার গিয়ে এমনটাই দেখা গেল হাজারো শিমুলের ডালে ডালে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শিমুল বাগানে সারি সারি ফুটে থাকা লাল পাপড়ি দেখে এখানে আসা পর্যটকদের মনে আনন্দের ঢেউ উঠেছে। মায়াময় শিমুল বাগানে জমে উঠেছে শিমুল মায়ার খেলা। গাছের মধ্যে লাল ফুলের গালিচা দেখতে অসংখ্য পর্যটক প্রতিনিয়ত আসছেন শিমুল বাগানে। এবার ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই গাছে গাছে ফুল ফুটতে শুরু করেছে।
জানা যায়, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের যাদুকাটা নদীর তীরবর্তী মানিগাঁও গ্রামে প্রায় ১০০ বিঘা জমি জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল এক শিমুল বাগান। নদীর ওপারে ভারতের মেঘালয় পাহাড়, মাঝে মায়ার নদী যাদুকাটা আর এপারে রক্তিম ফুলের সমারোহ। ২০০২ সালে বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বৃক্ষ প্রেমি জয়নাল আবেদীন নিজের প্রায় ২ হাজার ৪০০ শতক জমিতে সৌখিনতার বসে প্রায় তিন হাজার শিমুল গাছ রোপণ করেন। দিনে দিনে বেড়ে ওঠা শিমুল গাছগুলো এখন হয়ে উঠেছে শিমুল বাগান। বসন্তে শিমুল গাছগুলোতে ফুলে ফুলে ভরে ওঠে। ফাগুনের অরুণ আলোয় ফুটেছে বাগানের শিমুল ফুলগুলো। চোখের তৃষ্ণা মেটাতে টাঙ্গুয়ার হাওর, মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে ও রূপের নদী যাদুকাটার মধ্য স্থলে বিশাল শিমুল বাগানে ফুটে ওঠা টুকটুকে লাল শিমুল ফুলগুলো দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন হাজারো পর্যটক।
শুক্রবার সিলেট থেকে বাগান দেখতে আসা ফাহিম রেজা ও মেহজাবিন জানান, দেশে এতো বড় শিমুল বাগান তারা এর আগে দেখেননি। তারা সঠিক সময়ে ফুলের পাপড়ি দেখতে পেয়ে তাদের মন আনন্দে ভরে গেছে। তারা বলেন, এখানকার রাস্তাঘাট উন্নত হলে এখানে আসা পর্যটকদের কষ্ট একটু কম হবে এবং পর্যটকদের সমাগম আরো বাড়বে।
বাগানের মালিক প্রয়াত চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীনের ছেলে রাখাব উদ্দিন জানান, এবারই সঠিক সময়ে বসন্তে শিমুল গাছগুলোতে এক সঙ্গে ফুল ফুটেছে। এই শিমুল বাগান তার মরহুম পিতার পরিচয় দিন দিন আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। তিনি বলেন, এখানে আসা পর্যটকদের সুবিধার জন্য একটি শিমুল বাগান কেন্টিন ও হোটেল করা হয়েছে।
কিভাবে যাবেন : শিমুল বাগান দেখতে চাইলে প্রথমে ঢাকা সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস যোগে সুনামগঞ্জের প্রবেশদ্বার আবদুজ জহুর সেতুতে নামতে হবে। আপনি ইচ্ছে করলে মহাখালী থেকেও বাসে আসতে পারবেন সুনামগঞ্জে। এসব বাসে ভাড়া নেবে জনপ্রতি ৫শ টাকা। আর যারা সিলেট থেকে আসবেন তারা সিলেট কুমারগাও বাসস্টেন্ড থেকে সহজে বাসে সুনামগঞ্জ বাসস্টেন্ডে নেমে পড়বেন। ভাড়া নিবে জনপ্রতি ১শ টাকা। আবদুজ জহুর সেতু থেকে সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেল কিংবা যেকোনো গাড়ি দিয়ে তাহিরপুর লাউড়ের গড় বাজার অথবা বিন্নাকুলী বাজারে এসে নামবেন। যদি সেতু থেকে মোটর সাইকেলে আসেন জনপ্রতি ভাড়া নিবে দেড়শ টাকা আর সিএনজি অটোরিকশা দিয়ে আসলে ভাড়া নিবে ১শ টাকা করে। বিন্নাকুলী অথবা লাউড়েরগড় বাজার থেকে যাদুকাটা নদী পার হয়ে পায়ে হেটে অতবা অটোরিকশা দিয়ে সোজা শিমুল বাগানে চলে আসতে পারবেন। অটোরিকশার ভাড়া নিবে জনপ্রতি ১০টাকা করে।
প্রতিনিধি