দুই অক্ষরের সুন্দর একটি শব্দ ‘ফুল’- পবিত্রতা, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রতীক। মানবজীবনের আবেগ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও শোক- সবকিছুর সঙ্গেই জড়িয়ে আছে এর উপস্থিতি। তাই দেশেও ফুলকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে বড় একটি বাজার। বছরের যে সময়গুলোয় এর বেচাবিক্রি বেড়ে যায়, তার মধ্যে অন্যতম ফেব্রুয়ারি মাস। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, বসন্ত উৎসবসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকে এ মাসে। এবার মৌসুমটিতে অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রায় ১০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ব্যবসায়ীদের। শুধু ভালোবাসা দিবস ঘিরেই অন্তত ৩৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে তাদের ধারণা।
এ খাতের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে বাংলাদেশি ফুলের প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজার রয়েছে। এর মধ্যে দেশেই প্রতিবছর বিক্রি হয় ৮৫০ কোটি টাকার ফুল। বাংলাদেশ ফুল উৎপাদন ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি এম আহসান উল্লাহ আমাদের সময়কে
বলেন, ‘প্রতিবছরই ফুলের চাহিদা ও বিক্রি বাড়ছে। গত বছরের ফেব্রæয়ারিতে দেশীয় বাজারে প্রায় ৮০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছিল। এবার আরও বেশি বিক্রি হবে বলে আশাবাদী আমরা। ইতোমধ্যে চাষিরা বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে অগ্রিম অর্ডার পেয়েছেন। এবার শুধু যশোরের গদখালি থেকেই ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে আমাদের ধারণা।’ ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে ১৩ ও ১৪ ফেব্রæয়ারি প্রায় ৩৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে মনে করছেন এ ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ‘গেল বছর ভালোবাসা দিবসে প্রায় ২৮ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে। এবার দিনটি শুক্রবার পড়ায় প্রচুর বিয়ের অর্ডার রয়েছে।’
ঢাকার অদূরে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাদুল্লাপুুরের গোলাপচাষি শরীফুল ইসলাম গত শনিবার বলেন, ‘এ অঞ্চলে মিরিন্ডা প্রজাতির গোলাপ চাষ হয় বেশি। ঢাকায় এর প্রচুর চাহিদা। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ইতোমধ্যে প্রায় ৪ লাখ টাকার অর্ডার পেয়েছি। আগামী চার-পাঁচ দিনে বিক্রি আরও বাড়বে। গত বছর এ সময় অর্ডার পেয়েছিলাম ২ লাখ টাকার মতো।’ শাহবাগের পাইকারি ফুল ব্যবসায়ী শহীদুল্লাহ বলেন, ‘ভালোবাসা দিবসের পাশাপাশি এ সময়টাতে বিয়ে-সাদির হিড়িক পড়ে। তাই বিক্রিও বাড়ে। মাসের প্রথম সপ্তাহেই অনেকগুলো বিয়ের জন্য ফুলের অর্ডার পেয়েছি এবার। চলতি ফেব্রæয়ারিতে প্রায় দ্বিগুণ ব্যবসা হবে বলে আশাবাদী তিনি।’
বর্তমানে খুলনা বিভাগে সবচেয়ে বেশি, প্রায় ২ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হচ্ছে। মোট উৎপাদিত ফুলের ৩১ শতাংশ গøাডিওলাস, ২৪ শতাংশ গোলাপ, ১৯ শতাংশ রজনীগন্ধা। প্রতি হেক্টর জমিতে খাদ্যশস্য ও অর্থকরী ফসলের তুলনায় ফুল চাষ বেশি লাভজনক। আবার কম পুঁজিতে ব্যবসা সম্ভব বলে তরুণ উদ্যোক্তারা এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হচ্ছেন। বর্তমানে সারাদেশে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার একর জমিতে ফুলের চাষ হচ্ছে। ২০১৭ সালে প্রায় ৪ হাজার, ২০১৪ সালে ৩ হাজার ১৪৩ এবং ২০১১ সালে যা ছিল প্রায় ২ হাজার ৫০০ একর। অন্যদিকে বর্তমানে দেশে প্রায় ৭০ হাজার মেট্রিক টন ফুল উৎপাদিত হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৬৫ হাজার মেট্রিক টন এবং ২০১৩-১৪ বছরে উৎপাদিত হয়েছিল প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন ফুল।

প্রতিনিধি