Home » করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরীক্ষায়ও ধরা পড়ছে না

করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরীক্ষায়ও ধরা পড়ছে না

অনলাইন ডেস্ক: করোনাভাইরাস আক্রান্তদের অনেককে পরীক্ষার পরেও সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। চীনের চিকিৎসকরা এমনটিই জানিয়েছেন। চীনের একাডেমি অব মেডিকেল সায়েন্সের প্রধান ওয়াং চেনকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স বলছে, অনেকের পরীক্ষার ফল ‘ফলস নেগেটিভ’ এসেছে। তিনি চীনের টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, অসুস্থদের যারা নতুন ধরনের করোনাভাইরাসে সত্যিই আক্রান্ত, টেস্ট করে তাদের মধ্যে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশের পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে।

এই বিজ্ঞানী আরও জানান, এখনও অনেকের লালা পরীক্ষা করে ফলস নেগেটিভ রেজাল্ট পাওয়া যাচ্ছে। যার মানে সত্যিকার অর্থেই যতজন এন করোনাভাইরাস আক্রান্ত, তার অর্ধেকের ক্ষেত্রে পরীক্ষায় ধরা পড়েনি। যে প্রদেশের উহান শহর থেকে নতুন ধরনের এই করোনাভাইরাস প্রথমে ছড়িয়েছে, সেই হুবাই এখন করোনাভাইরাস শনাক্তে সিটি স্ক্যান শুরু করেছে। বলা হচ্ছে, এই পরীক্ষায় দ্রুত রোগ শনাক্ত সম্ভব।

এদিকে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে শুক্রবারে ৭২৪ জনে পৌঁছেছে। আক্রান্ত হয়েছেন ৩৫ হাজারের বেশি। বৈশ্বিক আতঙ্কের কারণে পরিণত হওয়া এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে মূলভূমি থেকে আসা নাগরিকদের কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে হংকং। চীনে শুক্রবারে ৮৬ জনের বেশি মারা গেছেন। যেটা একদিনে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা। ২০০২-২০০৩ সালে সার্সে ৭৭৪জন মারা গিয়েছিলেন। কাজেই এই ভাইরাসে মৃত সেই সংখ্যার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।

এদিকে ভোঁদর ও বাদুড়ের পর এবার করোনাভাইরাস সংক্রমণে দায়ী করা হচ্ছে বিপন্ন প্রাণী বনরুইকে। চীনের একদল বিজ্ঞানী বলেন, এই ভাইরাসের আদি পোষক বাদুর হলেও মানুষের শরীরে বিস্তারে আরেকটি প্রাণীর ভূমিকা রয়েছে। আর সেটি হচ্ছে বনরুই। গুয়াংজু প্রদেশের দক্ষিণ চায়না কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলছেন, ভাইরাসটির আরএনএ বিন্যাসের সঙ্গে বনরুইয়ের শরীরে পাওয়া করোনাভাইরাসের বিন্যাসের ৯৯ শতাংশ মিল পেয়েছেন। এ নিয়ে বিজ্ঞান সাময়িকী নেচারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

প্রাণঘাতী করোনভাইরাসে এখন পর্যন্ত ৭২৪জন মারা গেছেন। আর আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪ হাজারের বেশি। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পাচার হওয়া প্রাণীদের একটি গায়ে আঁশযুক্ত একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী বনরুই। চীন ও ভিয়েতনামে কবিরাজি চিকিৎসায় পিঁপড়েখেকো এই প্রাণীর মাংস ও আঁশ ব্যবহার করা হয়। ভাইরোলজির ভাষায় এ ধরনের পোষক প্রাণীকে বলা হয় মধ্যবর্তী বাহক। তবে চীনা বিজ্ঞানীদের গবেষণার এই ফল কতটা বিশ্বাসযোগ্য, সেই প্রশ্ন তুলেছেন যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, নিশ্চিত করে বলার আগে এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা প্রয়োজন।

ফ্রান্সের প্যাস্টুয়ার ইনস্টিটিউটের আরনড ফন্টেনেট বলেন, এই রোগ সরাসরি বাদুড় থেকে মানুষের শরীরে বিস্তার ঘটেনি। আমরা মনে করি, মধ্যবর্তী বাহক হিসেবে আরেকটি প্রাণীর ভূমিকা রয়েছে। গত ৩০ ডিসেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হুঁশিয়ারের পর নতুন করোনাভাইরাস শনাক্ত করে চীন। বিজ্ঞানীরা প্রথম থেকেই ধারনা করে আসছেন যে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটির হুবেই প্রদেশের উহান শহরের একটি সি ফুড মার্কেট থেকে ওই ভাইরাস ছড়িয়েছে।

সি ফুডের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীও ওই মার্কেটে বিক্রি হত, যা পরে বন্ধ করে দেয় চীনা কর্তৃপক্ষ। গোড়ার দিকে সাপ, বাদুড় ও ভোঁদড়ের দিকে ইঙ্গিত ছিল অনেকের। আবার বিজ্ঞানীদের আরেকটি অংশের বক্তব্য, করোনাভাইরাস সাপকে পোষক হিসেবে ব্যবহার করে, এমন কোনো প্রমাণ কখনও মেলেনি। ফোলিডোটা বর্গের প্রাণী বনরুইয়ের বিশেষত্ব হল এর গায়ে মাছের মত আঁশ। সে কারণে বাংলায় এর নাম হয়েছে বনরুই। স্তন্যপ্রায়ী এ প্রাণী পিঁপড়া খায় বলে তাদের পিপিলিকাভুকও বলা হয়।

এ প্রাণীর দাঁত নেই। ভয় পেলে বা আত্মরক্ষার তাগিদে লেজ দিয়ে নিজেকে মুড়িয়ে বলের আকার নেয়। পিঁপড়ে-উঁইপোকা খাওয়ার জন্য এরা ব্যবহার করে দীর্ঘ জিহ্বা। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পাচার হওয়া প্রাণী বনরুই। মূলত আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলোতেই এর কেনাবেচা চলে। চীন, ভিয়েতনামসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সনাতন কবিরাজি চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় এর মাংস ও আঁশ।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *