৩১শে জানুয়ারি মাঠে গড়াচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগের (বিসিএল) অষ্টম আসর। গতকাল অনুষ্ঠিত হয় এর ক্রিকেটার ড্রাফট। তবে সেই খবর অনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি কোনো সংবাদমাধ্যমে। টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান গাজী গোলাম মুর্তজা পাপ্পা ক্রিকেটার নিলামে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও দুই ফ্র্যাঞ্চাইজি ওয়ালটন ও ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তারা ছিলেন। এখন বাকি দুটি দলের মালিক বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) প্রতিনিধিরা। তারা তালিকা থেকে বাছাই করে দল সাজান। অবশ্য বিসিবির সংবাদ সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ড্রাফটে বেশ কিছু সংবাদকর্মী হাজির হন।
তাই দল গঠন কার্যক্রম শেষ হতে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দেয়া হয় ফ্র্যাঞ্চাইজিদের। অবশ্য তার আগেই তড়িঘড়ি করে বের হয়ে যান টুর্নামেন্ট কমিটির প্রধান। খেলা শুরুর মাত্র দু’দিন আগে দেয়া হলো দল । তাই প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ নেই। গোপন রেখে ড্রাফট আয়োজন, এক রকম তাড়াহুড়ো সব মিলিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ এখন এই টুর্নামেন্ট। আয়োজন দেখে মনে হচ্ছে এ যেন ‘নামকাওয়াসতের বিসিএল’।
কোন রকমে করতে হবে তাই! দুই ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্মকর্তা সরাসরি না বললেও তারা যে এমন আয়োজনে অসন্তুষ্ট তা অনেকটাই স্পষ্ট! ওয়ালটন গ্রুপের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ও মধ্যাঞ্চলের সমন্বয়ক উদয় হাকিম বলেন, ‘হ্যাঁ, সময় কম তাই একটু তাড়াহুড়া হচ্ছে। বিসিবিও চাইছে তাই আমরাও রাজি হয়ে গেছি। এটি সত্যি এখন পর্যন্ত আমরা বিসিবিএলের যে সার্থকতা তার শতভাগ পাইনি। আশা করি সামনের বার আরো সময় পাব আর বিসিবিও আরো ভালোভাবে আয়োজন করবে। আমরা আসলে নিজেদের পাওয়ার চেয়ে ক্রিকেটের উন্নতি চাই তাই বিসিএলের সঙ্গে আছি। থাকতে চাই।
অন্যদিকে ইসলামী ব্যাংক পূবাঞ্চলের কর্মকতা নজরুল ইসলামের কণ্ঠে একই সুর। আগে ৭টি আসর মাঠে গড়িয়েছে। কিন্তু প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের উন্নতির জন্য যে আয়োজন তা এখনও সার্থকতা পায়নি বলেই স্বীকার করেন তিনি। একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগের যে মান তাও পুুরোপুরি হয়নি বলেও মনে করেন নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আসলে বিষয়টা সত্যি একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগ যেমন হওয়ার কথা তা শত ভাগ হয়নি। তবে আশা করি হবে। বিসিবি সঙ্গে কথা হয়েছে তারা চেষ্টা করছে। আশা করি এক দিন হবে।’
টেস্টে বাংলাদেশ দল হারলেই প্রশ্ন ওঠে ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট নিয়ে। বোদ্ধা-বিশ্লেষক থেকে শুরু করে খেলোয়াড়- সবাই দেশের চার দিনের ক্রিকেটের মান নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় মেতে ওঠেন। বিসিবি কিছুটা নড়েচড়ে বসে।
ঘরোয়া ক্রিকেট বদলে দেয়ার আশ্বাস দেয়। কিন্তু তার বাস্তবায়ন হচ্ছে কতটা! যেমন চার দিনের ক্রিকেটকে আরো মানসম্মত করতে জাতীয় ক্রিকেট লীগ (এনসিএল) ছাড়াও আরো একটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করে বিসিবি। দেশের একমাত্র চার দিনের ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক এই আসরের নাম বিসিএল। ৮ বিভাগকে ছোট করে আনা হয়েছে এই আসরে। করা হয়েছে চারটি দল। ২০১২তে যাত্রার সময় অবশ্য মাত্র তিনটি দলই কিনে নিয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজিরা। বাকি একটি দলের মালিক ছিল বিসিবি।
তবে গত ৭ আসরে নানা কিছু না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে সরে গেছে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। তাদের অভিযোগ ছিল যে মানের ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগটি হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। এমনকি চারদিনের ক্রিকেটে যে উন্নতির কথা বলা হচ্ছে তাও পূর্ণতা পায়নি। সেই সঙ্গে করপোরেট প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাদের প্রচারও হচ্ছে না এখানে। আরেক ফ্র্যাঞ্চাইজি ওয়ালটন কোনো লাভের আশা তেমন না করলে তারাও চান কিছুটা হলেও প্রচার হোক। উদয় হাকিম বলেন, ‘আমরা বিসিবির সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আশ্বাস দিয়েছেন যেন ফাইনাল ম্যাচটা সম্প্রচার হয়। আর সেটি দিবা-রাত্রির ম্যাচ ও গোলাপি বলে করা যায় কিনা সেটিও আলোচনা হচ্ছে।
কেন তাড়াহুড়া করে এই আয়োজন! বলা হচ্ছে পাকিস্তান ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচের প্রস্ততি নিতেই বিসিএলের এই আসরে এমন তড়িঘড়ি আয়োজন। যেন প্রথম দুই রাউন্ডে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা সেখানে অংশ নিতে পারে। তবে এবার হচ্ছে সিঙ্গেল লীগ। কেন তা তার জবাবে বিসিবি দক্ষিণ অঞ্চলের ম্যানেজার নাফিস ইকবাল বলেন, ‘আসলে স্বল্প সময়। তাই আমরা চেয়েছি কম ম্যাচ হলেই ভালোভাবে করা সম্ভব।
প্রতিনিধি