অনলাইন ডেস্ক: সাম্প্রতিক সংকটে আমদানিকৃত পেঁয়াজ অনেক বাড়তি দরে কিনতে হয়েছে ক্রেতাকে। অন্যদিকে আমদানিতে মিথ্যা ঘোষণার আড়ালে অর্থপাচারের খবরও বেরিয়ে আসছে। বিশেষত মিয়ানমার থেকে আমদানির ক্ষেত্রে মূল্য কম দেখানো হয়েছে।
মিয়ানমার থেকে প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজ ১ হাজার ২০০ মার্কিন ডলারে আমদানি করা হলেও মূল্য দেখানো হয়েছে ৫০০ ডলার। অর্থাত্ প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানিতে ৭০০ ডলারের মিথ্যা ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি ইতিমধ্যেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
শুল্ক গোয়েন্দাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যবসায়ীরা মিয়ানমার থেকে বেশি দামে আমদানিকৃত পেঁয়াজের ক্রয়মূল্য কম দেখিয়ে বা আন্ডারইনভয়েসিং এর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করছে। গত নভেম্বরে মিয়ানমারের বাজারে পেঁয়াজের কেজি ছিল ১৩৪ টাকা। অথচ আমদানি করা পেঁয়াজের মূল্য দেখানো হয়েছে ৪৩ টাকা। অর্থাৎ কেজি প্রতি ৯১ টাকা কম আমদানি মূল্য দেখানো হয়েছে। একইভাবে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরেও ২৫ থেকে ৪০ টাকা কম মূল্য দেখানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে ব্যবসায়ীরা সেপ্টেম্বর থেকে আন্ডারইনভয়েসিং করেছেন। কেননা সেসময় মিয়ানমারের বাজারের পেঁয়াজের কেজি ছিল ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের কেজি ৪৩ টাকা ঘোষণা দেয়, যা প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি। অর্থাৎ আমদানিকারকরা এক্ষেত্রে মানিলন্ডারিং করেছেন।
শুধু তাই নয়, মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ প্রতি মেট্রিক টন ৫০০ মার্কিন ডলার ঘোষণায় আমদানি হয়েছে। প্রকৃত অর্থে মেট্রিক টন প্রতি ১২০০ মার্কিন ডলার ক্রয় করেন আমদানিকারকরা। অর্থাৎ মেট্রিক টন প্রতি প্রায় ৭০০ ডলার আন্ডারইনভয়েসিং হয়েছে। এই আন্ডারইনভয়েসিং এর টাকা আমদানিকারকরা ব্যাংকিং চ্যানেল কিংবা হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করেছেন। অর্থাৎ মিয়ানমার হতে পেঁয়াজ আমদানির আড়ালে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা পাচার হয়েছে।
সম্প্রতি অনিয়ম বা মজুদ খতিয়ে দেখতে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ ১০০০ মেট্রিকটন আমদানি করেছে এমন ৪৩ জন ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই চিত্র পেয়েছে।
এনবিআর-এর তথ্য মতে, বছরে দেশের মানুষের ২৪ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। তার মধ্যে এ বছর ২৩ দশমিক ৩০ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। উৎপাদিত পেঁয়াজের ২৫ শতাংশ পেঁয়াজ সংরক্ষণ, পরিবহন ও বিপণনের বিভিন্ন পর্যায়ে নষ্ট হয়।ফলে কয়েক বছরের চাহিদা পূরণে আরও ৩ দশমিক ৬৪ লাখ মেট্রিকটন পেঁয়াজ আমদানির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
এর মধ্যে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর এই তিন মাসে অন্তত ১৬৭ হাজার ৮০৬ মেট্রিকটন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। ৩৪০ পেঁয়াজ ব্যবসায়ী দুই হাজার ৪০৯টি পণ্যচালানের মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি করে। কিন্তু হঠাৎ করে ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেওয়ায় দেশের বাজারে পেঁয়াজের সঙ্কট শুরু হয়।
এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, শুল্ক গোয়েন্দাদের একটি প্রতিবেদন আমাদের কাছে এসেছে। তবে তাতে কি আছে তা এখনও দেখা হয়নি। প্রতিবেদনটি দেখার পর পুরো বিষয়টি পরিস্কার বলতে পারবো।
প্রতিনিধি