Home » দলকে শক্তিশালী করতে মানুষের আস্থা অর্জন জরুরি,প্রধানমন্ত্রী

দলকে শক্তিশালী করতে মানুষের আস্থা অর্জন জরুরি,প্রধানমন্ত্রী

জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন এবং সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে আওয়ামী লীগের তাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে হবে, মানুষ যাতে আবার স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে আমাদের নির্বাচিত করে এবং আমরা যেন দেশসেবা করে যেতে পারি। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে পারি।’

তিনি বলেন, ‘এখানে কাউন্সিলররা আছেন- সংগঠনকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। আর জাতির পিতার যে আদর্শ সেই আদর্শ মেনেই চলতে হবে।’ গত দশ বছরে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। দেশের উন্নয়নে অনেক কাজ করেছি। আমাদের আরও অনকদূর এগিয়ে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে দলের নেতাকর্মীদের বলব- সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। এজন্য মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস জরুরি। কী পেলাম, কী পেলাম না সে চিন্তা না করে মানুষের কল্যাণে ও মৌলিক অধিকার পূরণে সবাইকে কাজ করতে হবে।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক জাতীয় কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশনে সূচনা বক্তব্যে এবং দলের সভাপতি পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।

নবমবারের মতো সভাপতি নির্বাচিত করায় কাউন্সিলরদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাবা-মা, ভাইসহ সবাইকে রেখে আমরা দুই বোন বিদেশে গিয়েছিলাম। কিন্তু দেশে এসে পরিবারের কাউকে ফিরে পাইনি। কিন্তু সারা দেশের মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, দলের নেতাকর্মী-সমর্থকদের মধ্যে আমার বাবা-মার ভালোবাসা পেয়েছি। তিনি বলেন, ‘আপনারা যে গুরুদায়িত্ব আমাকে দিয়েছেন, তা পালন করার চেষ্টা করব। কিন্তু আমার বয়স হয়েছে, আমার বয়স এখন ৭৩। তাই আগামীতে আপনাদের নতুন নেতা খুঁজতে হবে, নতুন নেতৃত্ব আনতে হবে।’ এ সময় ‘নো নো’ স্লোগান দিয়ে গোটা প্যান্ডেল প্রকম্পিত করে তোলেন সারা দেশ থেকে আসা কাউন্সিলররা।

১৯৮১ সাল থেকে ৩৮ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দেয়া প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান ও আওয়ামী লীগকে গড়ে তোলার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জাতির পিতা এমনভাবে সংগঠনটি গড়ে তোলেন এবং এর মাধ্যমে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশের স্বাধীনতা অর্জন করেন। আওয়ামী লীগের ত্যাগের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের যত অর্জন রয়েছে, তা করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি শহীদ হয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজ সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই। দেশের এই উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতা যেন থাকে, সেটাই আমরা চাই। নানা চড়াই-উতরাই, চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র পেরিয়ে আওয়ামী লীগ এখন অনেক শক্তিশালী ও বৃহৎ রাজনৈতিক দল। তাই দলকে আরও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যা করার পর বাংলাদেশে গণতন্ত্র ছিল না। দেশে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা হয়। তখন গণতন্ত্র নয়, কারফিউ গণতন্ত্র চলেছে, স্বৈরশাসন চলেছে। দুর্নীতি, অপশাসন, মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র অর্থ তুলে দিয়ে অবক্ষয়ের মাধ্যমে পুরো দেশকেই ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব জেলায় এখনও সম্মেলন হয়নি, সেগুলো দ্রুত শেষ করতে হবে। তিনি বলেন, জাতির পিতা যে লক্ষ্য নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন, সেই স্বাধীনতার অধিকার যাতে মানুষ পায়, সেটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, বিশ্বসভায় দেশের মানুষ স্থায়ীভাবে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দীর্ঘ ২১টি বছর দেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলেছিল, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম করতে হয়েছে। দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখনই দেশের মানুষ বুঝতে পারে সরকার জনগণের সেবক, সরকার জনগণের কল্যাণ করতে পারে। কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে জনগণ কিছু পায়, দেশের উন্নয়ন হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশ এগিয়ে যায়।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা এবং বিশ্বের দরবারে মর্যাদা নিয়ে চলবে- জাতির পিতা সেই লক্ষ্য নিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছেন। তাই আমাদের একটাই লক্ষ্য- বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন পূরণ করা। সেটা আমরা পূরণ করব। দেশকে আমরা ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব। যা দেখে আমার বাবা-মার আত্মা যেন শান্তি পায়। লাখো শহীদের আত্মত্যাগ যেন বৃথা না যায়।

বিএনপি-জামায়াত সরকারের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতায় যারা উড়ে এসে জুড়ে বসে, তারা শুধু নিজেদের ভাগ্য গড়ে। জনগণের কল্যাণ করতে পারে না। এই যে ঋণখেলাপি কালচার, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে তারা সমাজটাকেই ধ্বংস করতে চেয়েছিল। কোনো দেশ যদি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে চলতে না পারে, সেই দেশ যে ধ্বংসের পথে যায়, সেটাই তখন প্রমাণ হয়েছে। একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নত হয়, সেটা আজকে প্রমাণিত।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচার পর আমরা এখন মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যেসব এসবি (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) রিপোর্ট করেছিল সেসব সংগ্রহ করে খণ্ড খণ্ড বই আকারে প্রকাশ করছি। এই রিপোর্টে স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস, অনেক নেতার নাম ও ঘটনা যেসব কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে, সেসব তথ্য এসব রিপোর্ট থেকে দেশের মানুষ ও তরুণ প্রজন্ম জানতে পারবে।

১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসার মুহূর্তটি বর্ণনা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন দেশে ফিরে আসি তখন কী অবস্থা ছিল? বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর খুনিরা ভেবেছিল আওয়ামী লীগ আর কোনো দিন দাঁড়াতে পারবে না, ক্ষমতায় যেতে পারবে না। কিন্তু আওয়ামী লীগ জনগণের সমর্থন নিয়ে টানা তৃতীয়বারসহ মোট চারবার ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষের সেবা করে যাচ্ছে। দেশের দরিদ্রতা ৪১ ভাগ থেকে কমিয়ে এখন ২০ ভাগে আনতে আমরা সক্ষম হয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫-এর পর জাতির পিতার নাম মুছে ফেলার অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু সত্য ইতিহাস কখনও মুছে ফেলা যায় না। জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে প্রামাণ্য দলিলে স্থান পেয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ইউনেস্কো একসঙ্গে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সরকারের উন্নয়ন ও সফলতার চিত্র তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বের সামনে উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছি। আমরা উন্নয়নের গতি ধরে রেখে দেশকে আরও উন্নত করতে চাই। লক্ষ্য স্থির থাকলে যে দেশের উন্নয়ন করা যায়, আমরা তা প্রমাণ করেছি। আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে।

‘সংগঠনের সুনাম-ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে’ : এদিকে ২১তম কাউন্সিলের পরে শনিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের নেতারা গণভবনে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে গেলে কাউন্সিলের সবকিছু ভালোভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, আমি আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই। সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন। সব উপ-কমিটি তাদের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করেছে। আপনাদের সহযোগিতায় আজকে আমি এখানে, না হলে সম্ভব ছিল না। কাজেই সংগঠনের সুনাম ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ হচ্ছে জনগণের দল। যারা উড়ে এসে জুড়ে বসা দল তাদের মানুষের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই। কিন্তু আমাদের আছে। আওয়ামী লীগ মানুষের কথা মানুষের অধিকারের কথা বলার জন্য গড়ে উঠেছিল। এটা সব সময় মনে রাখতে হবে। দলের মান-সম্মান যেন থাকে। মানুষের আস্থা-বিশ্বাস যেন অর্জন করা যায়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে সবাই সংগঠনকে গতিশীল করবেন। আমাদের সহযোগী সংগঠনগুলো সেভাবেই গড়ে উঠুক। সহযোগী সংগঠনের যেগুলোর সম্মেলন করেছি তাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা দরকার।

এটা দ্রুত করা দরকার। অনেকগুলোকে আমরা সময় দিয়েছিলাম কিন্তু ডিসেম্বর মাস অত্যন্ত ব্যস্ত মাস, কাজেই করা যায়নি। সেজন্য আগামী মাসে এটা আবার শুরু করব। আপনারা দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে ফেলবেন এটা আমরা চাই। নেতাকর্মীদের জাতির পিতার অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়ার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, প্রত্যেক নেতাকর্মীর অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা পড়া উচিত। সেখান থেকে অনেক অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার হাতে গড়া এই সংগঠন। আমরা সংগঠনটাকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। আমাদের এখন নেতাকর্মী অনেক। সবাইকেই মাথায় রাখতে হয়। একেক সময় একেকজনকে দিতে হয়। আগামীতে যেন সংগঠনটা ভালোভাবে চলে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। যে সম্মেলনগুলো হয়নি সেগুলো খুব তাড়াতাড়ি করে ফেলতে হবে। আর আগামীতে সম্মেলনগুলো যথাযথ সময়মতো করতে হবে। না করলে সেই কমিটিগুলো আমরা ভেঙে দেব। সংগঠনে শৃঙ্খলা নিয়ে আসতে হবে, এটা মাথায় রাখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যে অভিযানটা- জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, মাদক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এটা অব্যাহত থাকবে। এটা না করলে আমরা উন্নয়ন করতে পারব না। জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তার স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়তে চাই। সেটাকে সামনে রেখেই সব পরিকল্পনা নিচ্ছি। সেগুলো আমরা বাস্তবায়ন করে যেতে চাই। কাজেই আমি বলব, ক্ষমতায় আসা, এখানে সংগঠন শক্তিশালী থাকা একান্তই দরকার।

এছাড়া যেহেতু আমরা দীর্ঘদিন সরকারে আছি- দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকলে অনেক সময় সংগঠন বা সরকারেরও বদনাম হয়। কিন্তু আমরা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখতে পেরেছি। এটা যেন ধরে রাখতে পারি, অব্যাহত রাখতে পারি সেভাবেই সব নেতাকর্মীকে কাজ করতে হবে। এমন কিছু না করা, যার ফলে পার্টির বদনাম হয়। সরকারের বদনাম হয়। দেশের বদনাম হয়। আমরা অনেক উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছি। সেগুলো যেন যার যার এলাকায় ভালোমতে চলে সেটা দেখতে হবে।

শক্তিশালী থাকলে যে কোনো অবস্থা মোকাবেলা করা যায়। আমরা সেটা করতে পারছি। বক্তব্যের শেষের দিকে নিজের বয়স নিয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে রসিকতা করে শেখ হাসিনা বলেন, বয়স তো কম হলো না। মেঘে মেঘে বেলা অনেক হয়েছে। একাশি সালে এসেছি। তখন মাত্র চৌত্রিশ বছর বয়স। তখন আওয়ামী লীগের দায়িত্বভার নেই। এখন বয়স ৭৩ বছর। কাজেই এটা মাথায় রেখেই আগামী দিনের নেতৃত্ব আপনারা গড়ে তুলবেন সেটাই আমি চাই।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *