Home » রজব মাসের আমল

রজব মাসের আমল

ডেস্ক নিউজ:

আরবি চন্দ্র মাসের রজব মাস অতিবাহিত হচ্ছে। যখন রজব মাসের আগমন ঘটত নবী সা: আল্লাহর নিকট দোয়া করতেন- ‘হে আল্লাহ তুমি রজব ও শাবান মাসকে আমাদের জন্য বরকতময় কর এবং আমাদের হায়াত রমজান পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দাও’ (তাবরানি)। নবী সা: আরো বলেছেন- ‘রজব হলো বীজ বোনার মাস, শাবান হলো ফসল ঘরে তোলার মাস।’ অর্থাৎ রমজানে আমলের সাওয়াব অনেক গুণ বৃদ্ধি করে দেয়া হয়, আর এ বর্ধিত সাওয়াব পাওয়ার জন্য রজব ও শাবান এ দু’টি মাস বেশি বেশি আমল করে আমলে অভ্যস্ত হয়ে রমজানে বেশি আমল করার জন্য তৈরি হওয়ার মাস। তাই নেক আমলের মুজাহাদা করা প্রত্যেক মোমিনের উচিত। অন্যান্য মাসে ও নবী সা: ও সাহাবায়ে কেরামের আমলের মুজাহাদা আমাদের জন্য দৃষ্টান্ত। বর্ণিত আছে- ‘নবী সা: রাতে এত দীর্ঘ নামাজে দাঁড়াতেন যে, বেশিক্ষণ দাঁড়ানোর ফলে নবী সা: এর পা মোবারক ফুলে যেত। নবী সা:-কে বলা হলো হে আল্লাহর রাসূল আপনার তো কোনো পাপ নেই। আপনাকে পূর্বাপর সব পাপ থেকে নিষ্পাপ করা হয়েছে। নবী সা: জবাবে বললেন- আমি কি এটা পছন্দ করব না যে, আমি কৃতজ্ঞ বান্দা হবো (বুখারি- মুসলিম)।

হজরত ইবনে মাসউদ রা: বলেন- আমি এক রাতে নবী সা:-এর সাথে নামাজে দাঁড়ালাম। নবী সা: নামাজকে এত লম্বা করলেন আমি খারাপ কিছু চিন্তা করলাম। প্রশ্ন করা হলো, আপনি কি খারাপ চিন্তা করলেন? তিনি বললেন, আমি বসে পড়ার বা নামাজ ছেড়ে দেয়ার চিন্তা করলাম (বুখারি-মুসলিম)। হজরত জাবের রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- এক ব্যক্তি উহুদ যুদ্ধের সময় ক্ষুধা নিবারণের জন্য হাতে কিছু খেজুর নিয়ে খাচ্ছিল। তিনি নবী সা:-কে প্রশ্ন করল আমি যদি এ যুদ্ধে শহীদ হয়ে যাই তবে কোথায় থাকব ? নবী সা: বললেন- জান্নাতে। তখন সে দ্রুত জান্নাতে যাওয়ার বাসনায় (খেজুর খেতে সময় নষ্ট হবে মনে করে) হাতের খেজুরগুলো ফেলে দিয়ে যুদ্ধে শরিক হয়ে যুদ্ধ করতে করতে শাহাদৎ বরণ করল (বুখারি- মুসলিম)।

নেক আমলের প্রতিযোগিতায় নবী সা:-এর সাহাবারা অনেক অগ্রগামী ছিলেন। তাবুকের যুদ্ধের ব্যয় মেটানোর জন্য কে কি দান করবে তার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল। ওমর রা: তার যা সম্পদ ছিল অর্ধেক দান করলেন এবং আবু বকর রা: তার সব সম্পদ দান করে দিলেন। ওমর রা: বললেন, নেক কাজের এ প্রতিযোগিতায়ও আবু বকর রা: শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিলেন।

হজরত আবদুল্লাহ বিন হোজাইফা রা: কয়েকজন সঙ্গীসহ রোম সম্রাটের কাছে বন্দি হলেন। সম্রাট হোজাইফা রা:-কে প্রস্তাব দিলেন তুমি যদি খ্রিষ্টান হয়ে যাও অর্ধেক রাজত্ব তোমায় দিয়ে দেব, আমার সুন্দরী কন্যাকে তোমার সাথে বিয়ে দেব। হোজাইফা রা: জবাবে বললেন, সমগ্র দুনিয়া দিয়ে দিলেও তা সম্ভব নয়। তাকে জেলে রাখা হলো। কিছুদিন পর সম্রাট সভাসদের কাছে পরামর্শ চাইলে তারা বলল- বন্দী একজন যুবক, দীর্ঘ দিন নারীবঞ্চিত। জেলের নির্জন কক্ষে সুন্দরী একজন নারী পাঠিয়ে তাকে ঈমান হারা করা সম্ভব হবে। একজন প্রশিক্ষিত সুন্দরীকে তার কক্ষে পাঠিয়ে দেয়া হলো। সারা রাত সুন্দরী সে কক্ষে অবস্থান করল। ভোরবেলা বের হলে সম্রাটের প্রশ্নের জবাবে সে বলল আমি আমার সব চাতুরী ও কলাকৌশল প্রয়োগ করেছি। কিন্তু সে দু’পায়ের মধ্যখানে মাথা রেখে এমনভাবে বসে ছিল যে, মনে হলো সে কোনো মানুষ নয় পাথর, আমার সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।

তখন সম্রাট সভাসদের পরামর্শ মতো একটি বিশাল পাত্রে পানি নিয়ে ফুটাতে লাগল। পানি যখন টগবগিয়ে ফুটছে তখন হুজাইফা রা: ও তার সঙ্গীকে নিয়ে আসা হলো এবং হুজাইফা রা:-এর সামনে তার সঙ্গীকে ওই ফুটন্ত পানিতে হাত-পা বেঁধে ছেড়ে দেয়া হলে মুহূর্তে সে সিদ্ধ হয়ে মাংস খসে পড়ল। হজরত হুজায়ফা রা:-এর চক্ষু থেকে টপটপ করে পানি পড়তে শুরু করল। সম্রাট ভাবল, বন্দী এবার ভয় পেয়ে কাঁদছে। তখন সে আবারো খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করলে অর্ধেক রাজত্ব প্রদানের কথা বলল এবং তা না করলে সঙ্গীর মতো ফুটন্ত পানিতে ফেলে দেয়া হবে বলে হুমকি দিলো। হজরত হোজায়ফা রা: বললেন সম্রাট, তুমি ভাবছ আমি মৃত্যু ভয়ে কাঁদছি, তোমার এ ভাবনা ভুল। তুমি আমার যে সঙ্গীকে ফুটন্ত পানিতে ফেলেছ তার সাথে আমার নেক আমলের প্রতিযোগিতা চলত। সে যত রাকাত নফল আদায় করত আমি তার চেয়ে কিছু বেশি আদায় করে তাকে পেছনে ফেলার চেষ্টা করতাম। সে যে পরিমাণ দান করত আমি আরো বেশি দান করে নেক কাজে এগিয়ে যেতে চেষ্টা করতাম কিন্তু আজ সে আমাকে পেছনে ফেলে আমার আগে জান্নাতবাসী হয়ে গেল আমি পেছনে পড়ে গেলাম, সে জন্য আমি কাঁদছি। উল্লিখিত ঘটনাগুলো আমাদের জন্য সৎকাজে প্রতিযোগিতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

আল্লাহ পাক বলেন- তোমরা তোমাদের প্রভুর ক্ষমা ও আকাশ-জমিনের চেয়ে প্রশস্থ জান্নাতের দিকে দ্রুত ধাবিত হও। যা মুত্তাকিদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে (সূরা- আল ইমরান, আয়াত-১৩৩)। নবী সা: বলেছেন- তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতা কর, কেননা অন্ধকার রাতের মতো ফেতনার আবির্ভাব হবে। ব্যক্তি সকালে মোমিন থাকবে, বিকেলে কাফির হবে; বিকেলে মোমিন থাকবে সকালে কাফির হবে। তাদের দ্বীনকে দুনিয়ার স্বার্থে বিক্রি করে দেবে (মুসলিম)। নবী সা: আরো বলেন- উত্তম ব্যক্তি হলো সে- যে দীর্ঘ আয়ু পেয়ে বেশি সৎকাজ করেছে (তিরমিজি)।

নবী সা: আরো বলেছেন- যে আমার বন্ধুর সাথে শত্রুতা পোষণ করে আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি। বান্দা আমার নিকটবর্তী ও প্রিয় হয় আমার ফরজগুলো আদায়ের মাধ্যমে। নফল আদায় আমার বান্দাকে আমার আরো নিকটবর্তী করে দেয়। এমনকি একপর্যায়ে আমি তাকে (ফরজ নফল আদায়কারীকে) ভালোবেসে ফেলি। আমি যখন তাকে ভালোবেসে ফেলি- আমি তার কান হয়ে যাই যা দ্বারা সে শোনে, তার চোখ হয়ে যাই যা দ্বারা সে দেখে, আমি তার হাত হয়ে যাই যা দ্বারা সে ধরে, আমি তার পা হয়ে যাই যা দ্বারা সে চলে এবং সে আমার কাছে যা চায় আমি তা প্রদান করি। আমারে কাছে আশ্রয় চাইলে আমি আশ্রয় দেই (বুখারি)। অর্থাৎ তার সব অঙ্গ আমার অনুগত হয় এবং আমি তার সব চাওয়া পূরণ করি। নবী সা: আরো বলেন, আল্লাহ বলেছেন- যখন বান্দা আমার দিকে এক বিঘত এগিয়ে আসে, আমি বান্দার দিকে এক হাত এগিয়ে যাই। বান্দা আমার দিকে একহাত এগিয়ে এলে, আমি দুই হাত এগিয়ে যাই; বান্দা আমার দিকে হেঁটে এলে, আমি বান্দার দিকে দৌড়ে যাই (বুখারি)।

রজব মাস আমাদের মাঝে চলছে, শাবান ও রমজান সামনে। আমরা দুনিয়াবী বেহুদা কাজে সময় ব্যয় না করে প্রস্তুতি নেই নেক আমলের মুজাহাদা করি, সৎকাজের প্রতিযোগিতায় অভ্যস্ত হই যেন এ অভ্যস্ত হওয়ার কারণে তার ধারাবাহিকতা সারা বছর বিরাজমান থাকে এবং তা আমাদের পরকালের উত্তম পাথেয় হয়।

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *