জগন্নাথপুর প্রতিনিধি: মাত্র ২১ বছরের যুবক সরোয়ার হোসেন। পুরো জীবনটাই পড়ে রয়েছিল তার অন্যদের মতো। কিন্তু কে জানত্ব সামান্য বিরোধে প্রতিপক্ষ ভয়ংকর হয়ে উঠবে। আর সেই অজানা অন্ধকার পথে একদিন ঘাতকদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে, আঘাতে রক্তে রক্তাক্ত হয়ে জীবন দিতে হবে তাকে। আজ শনিবার বিকেলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলছিলেন জগন্নাথপুর পৌরসভার এক ওয়ার্ডের ইসহাকপুর এলাকার বাসিন্দা ঘাতকের হাতে প্রাণ হারানো নিহত সরোয়ারের বন্ধু রুমেন আহমদ ।
প্রতিপজ্ঞের হামলায় আহতাবস্থায় টানা ১১ দিন সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে সরোয়ার হোসেন মৃত্যুরে সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে গত শুক্রবার রাত ১২টার দিকে মৃত্যুর কাছে পরাজিত হয়ে চলে গেল না ফেরার দেশে। আজ বিকেল তিনটার দিকে তার মরদেহ যখন নিজ এলাকায় এসে পৌছে তখন সব কোলাহল থমকে গিয়ে পিন পিনে নিরব নিস্তেজ পরিবেশ বিরাজ করে। মুর্হুতের মধ্যে শোকাচ্ছন্ন হয়ে যায় এলাকা। নিহতের পরিবারের লোকজন, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, ঘনিষ্ঠজনসহ শোকাহত মানুষের মধ্যে এক হৃদয় বিদায়ক দৃশ্যের অবতারণ ঘটে। মানসিক রোগি নিহতের মা বারবার কান্নায় জ্ঞান হারাচ্ছেন। বাকরুদ্ধ বাবার চোখ দিয়ে জল পড়ছেনই। তাদেরকে সান্তনা দিচ্ছেন স্বজনরা।
চার ভাই এক বোনের মধ্যে পরিবারের উপার্জনকৃত ব্যক্তি ছিল সরোয়ার হোসেন। সে রাজমেন্ত্রীর কাজ করত। আসরের নামাজের পর জানাজা নামাজ শেষে পরিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। জানাজায় শোকাত মানুষের ঢল নামে। পুলিশ, নিহতের পরিবার ও স্থানীয় এলাকাবাসির সুত্রে জানা যায়, জগন্নাথপুর পৌর এলাকার ইসহাকপুরের আব্দুল জলাল এর পক্ষের সুন্দর আলীর ছেলে সরোয়ার হোসেন (২১) ও একই এলাকার আব্দুস সাত্তারের পক্ষের লাল মিয়ার ছেলে রানা মিয়ার মধ্যে পূর্ব বিরোধ ছিল । প্রায় আড়াই বছর পূর্বে রানা মিয়ার ওপর হামলা করে সরোয়ার। এই ঘটনায় প্রতিশোধ নিতে আড়াই বছর পর গত ২৮ অক্টোবর রাত ১ টার দিকে সরোয়ার হোসেন জগন্নাথপুর উপজেলা সদর থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফেরার পথে মনাই ভাংতি নামক এলাকায় পৌছামাত্র প্রতিপক্ষের লোকজন হামলা চালিয়ে ধারালো অস্ত্র নিয়ে কুপিয়ে গুরুত্বর করে পালিয়ে যায়।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্বজনরা সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন তাকে। এ ঘটনায় দু’পক্ষের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে গত সোমবার রাতে জগন্নাথপুর থানা পুলিশ লাল মিয়ার পক্ষের আবদুল কাহারের বাড়ি থেকে একটি পাইপগান ও বেশ কিছু দেশীয় অস্ত্র এবং ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীসহ ১৩ জনকে আটক করে। এঘটনায় মঙ্গলবার জগন্নাথপুর থানায় এসআই অনুজ কুমার বাদি হয়ে অস্ত্রআইনে মামলা দায়ের করেন। অপরদিকে হামলায় আহত যুবকের বাবা সুন্দর আলী বাদি হয়ে আমির হামজা পংকি মিয়াকে প্রধান করে ২২ জনকে আসামি করে মঙ্গলবার জগন্নাথপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। এঘটনায় পুলিশ এরমধ্যে ৫জনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়েছে।
নিহতের বাবা সুন্দর আলী জানান, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আমার ছেলের ঘাতকদের ফাঁসি চাই আমি। এবিষয়ে জানতে লাল মিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে চেষ্ঠা করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।জগন্নাথপুর থানার এসআই অনিক কুমার দেব জগন্নাথপুর টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ময়নাতদন্তের পর লাশ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। হামলার ঘটনার মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
প্রতিনিধি