মনিকা দে, জগন্নাথপুর পৌর এলাকার ইকড়ছই হলি চাইল্ড নিউজ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। পরিবারের হাল ধরতে তাকে এখন জগন্নাথপুর বাজারের গলিতে বসে পান সুপারির দোকান চালাতে হয়। বাবা পিযূষ দে দূরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে পরিবারের হাল ধরতে তাকে বাবার ব্যবসা চালাতে হচ্ছে।
সরেজমিনে জগন্নাথপুর বাজারের পান সুপারি বিক্রির গলি ঘুরে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের মোল্লারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা পিযুষ দে জগন্নাথপুর বাজারে দীর্ঘদিন ধরে পান সুপারির ব্যবসা করে ৫ মেয়ে,স্ত্রী নিয়ে সাত সদস্যর পরিবারের ব্যয়ভার চালিয়ে আসছিলেন। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হঠাৎ করে তিনি দূরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। ক্রমশ অসুস্থ হতে থাকেন তিনি। চিকিৎসা করাতে গিয়ে পরিবারটি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
পীযুষ দে এর স্ত্রী লাভলী দে জানান, ছেলের আশায় পর পর পাঁচটি মেয়ে সন্তানের মা হয়েছেন তিনি। স্বামীর পান সুপারি ব্যবসায় মেয়েদের ভরণপোষণ লেখাপড়া উপজেলা সদরে বাসাভাড়া দিয়ে ভালই কাটছিল সংসার। হঠাৎ করে স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়লে পুরো সংসার তছনছ হয়ে যায়।তিনি জানান, বড় মেয়ে রীমা দে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর আর পড়া হয়নি। দ্বিতীয় মেয়ে সোমা দে ও তৃতীয় মেয়ে মীতা দে সৈয়দপুর আদর্শ কলেজে এবার একাদশ শ্রেণিতে পড়ছে।
চতুর্থ মেয়ে মনিকা দে হলি চাইল্ড নিউজ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। পঞ্চম মেয়ে লাবনি দে ইকড়ছই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে। পান সুপারির দোকান ও এইচএসসি পড়ুয়া মেয়দের টিউশনির আয় দিয়ে অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসা ব্যয় ও পরিবারের ব্যয়ভার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। তিনি নিজেও অন্যর বাড়িতে কাজ করছেন।
মনিকা দে জানায় সপ্তাহে তিন দিন সে স্কুলে যায় অপর তিন দিন পুরোপুরি ব্যবসায় কাটায়। সপ্তাহের শনি, সোম, বৃহস্পতিবার সে বিদ্যালয় ছুটির পর বিকেল থেকে রাত আটটা পর্যন্ত পান সুপারি বিক্রি করে। রোববার ও বুধবার এবং মঙ্গলবার তাকে পুরো দিন দোকানে সময় দিতে হয়। তাই এই দিনগুলোতে তার স্কুলে যাওয়া হয় না। মনিকা আরো জানায়, প্রতিবেশী ব্যবসায়ীরা তাকে সহযোগিতা করায় ব্যবসা চালাতে তার তেমন সমস্যা হয় না।
প্রথমে লজ্জা লাগলেও এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। জগন্নাথপুর বাজার তদারক কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহির উদ্দিন বলেন,আমরা মেয়েটির খেয়াল রাখি যাতে কোন সমস্যা না হয়। মেয়েটি খুব ভদ্র ও বিনয়ী হওয়ায় সবাই তাকে সহযোগিতা করে। হলি চাইল্ড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মতিউর রহমান বলেন, মনিকার বাবা অসুস্থ তাই তাকে বাবার ব্যবসা দেখতে হয়, বিষয়টি জানার পর আমরা তাকে সহযোগিতা করি। মেয়েটি পড়াশোনায় বেশ মনোযোগী, আশা করি দারিদ্র ও শিক্ষার সংগ্রামে সে জয়ী হবে। সূত্র: জগন্নাথপুর
প্রতিনিধি