ফেনী প্রতিনিধি : ফেনী জেলা কারাগারে পৃথক কনডেম সেল না থাকায় নুসরাত হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামিকে কুমিল্লা কারাগারের কনডেম সেলে পাঠাতে কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। গতকাল রোববার ফেনী জেলা কারা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এ চিঠি পাঠানো হয়। আজ সোমবার ফেনী জেলা কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার রফিকুল কাদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘কুমিল্লা কারাগারে অনেকগুলো কনডেম সেল রয়েছে। সেসব কনডেম সেল ফাঁকা থাকলে আসামিদের সেখানে স্থানান্তর করা হবে। সেখানে ফাঁকা না থাকলে কাশিমপুরসহ যেসব কেন্দ্রীয় কারাগারে কনডেম সেল ফাঁকা রয়েছে, সেখানে আসামিদের পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ কাউন্সিলর (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদ্রাসার সাবেক সহ সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)।
এদিকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এই ১৬ আসামির ডেথ রেফারেন্স আগামীকাল মঙ্গলবার হাইকোর্টে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।বিচারিক আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর হাফেজ আহমেদ বলেন, ‘ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামনুর রশিদের সংশ্লিষ্ট আইনের ৪(১)/৩০ ধারায় দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় অনুমোদনের জন্য মামলার নথি ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা মোতাবেক ডেথ রেফারেন্স আকারে হাইকোর্টে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত। আমরা আশা করছি, আগামী ২৯ অক্টোবরের (মঙ্গলবার) মধ্যে নুসরাত হত্যা মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজসহ ১৬ আসামির ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পাঠাতে পারবো।’
রফিকুল কাদের আরও বলেন, নুসরাত হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামি যেসব সেলে রয়েছে, সেগুলোতে অন্য আসামিদেরও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সোয়া ১১টায় ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মামুনুর রশিদ নুসরাত হত্যা মামলায় ১৬ আসামির ফাঁসির রায় ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ৩৭৪ ধারায় বলা হয়েছে, দায়রা আদালত যখন মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন, তখন হাইকোর্ট বিভাগের কাছে কার্যক্রম পেশ করতে হবে এবং হাইকোর্ট বিভাগ অনুমোদন না করা পর্যন্ত দণ্ড কার্যকর করা হবে না।প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৬ এপ্রিল ওই মাদ্রাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান নুসরাত।
এ ঘটনায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে প্রধান আসামি করে আটজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৪/৫ জনকে আসামি করে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। নুসরাত হত্যা মামলায় পুলিশ ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ২১ জনকে বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে ২৯ মে ১৬ জনকে আসামি করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে পিবিআই। সূত্র: আমাদেরসময়
প্রতিনিধি