ফেনী প্রতিনিধি, অনলাইন ডেস্ক: ফেনীর সোনাগাজীর আলোচিত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার দায়ে আদালত মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ ১৬ জনকে ফাঁসির আদেশ দেওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ১৮ মিনিটে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মামুনুর রশিদের আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের পর আদালত চত্বরে গণমাধ্যমের সামনে এ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তারা।
রাষ্ট্রপক্ষের এক আইনজীবী বলেন, ‘আমরা এ রায়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি। সেই সাথে বলি এই দেশে খুন করলে বিচার হয়। কোনো খুনি কোনো রাজনৈতিক আশ্রয়ে প্রশ্রয় পায় না। খুনির থেকেও আইনের হাত শক্তিশালী। প্রশাসনকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আজকের আমরা এই বিচার প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা প্রশাসনসহ সাংবাদিক ভাইদের সকলকে আমরা আমাদের অন্তরের অন্তস্থল থেকে অভিনন্দন জানাই।
প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা না দিলে, সহযোগিতা না করলে, তত্ত্বাবধায়ন না করলে, এত তাড়াতাড়ি এই বিচার নিষ্পত্তি সম্ভব হতো না। আজকে আইনের শাসন আছে। অপরাধীরা শাস্তি পায় বলেও জানান রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনজীবী।
নুসরাত হত্যা মামলার রায়ে দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন-সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি রুহুল আমিন, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম, মাদ্রাসার শিক্ষক আবদুল কাদের, প্রভাষক আফসার উদ্দিন, মাদ্রাসার ছাত্র নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ যোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা পপি ওরফে তুহিন, আবদুর রহিম শরিফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন মামুন, মোহাম্মদ শামীম ও মহি উদ্দিন শাকিল।
গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনায় তাঁর মা শিরিনা আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় মামলা করলে অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলা তুলে না নেওয়ায় ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় বোরকা পরা পাঁচ দুর্বৃত্ত। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ নুসরাতের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান (নোমান) সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। পরে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। গত ২৮ মে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত শেষে মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে ৮৬৯ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে।
প্রতিনিধি